সকল মেনু

রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে বসছে সংসদ

আছাদুজ্জামান, হটনিউজ২৪বিডি.কম: PM-Sangsad-19.06.13আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপের মধ্যে শুরু হতে যাচ্ছে নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন। বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া এই অধিবেশনই চলতি সংসদের শেষ অধিবেশন হতে পারে। তবে ২৪ অক্টোবর মেয়াদ শেষের আগে আরেকটি অধিবেশন বসার জল্পনাও রয়েছে।

সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি এই অধিবেশনে যোগ দেবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত করেনি দলটি। যদিও বর্তমান সংবিধান অনুসরণ করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষপাতি আওয়ামী লীগ তাদের প্রস্তাব সংসদেই তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই দলের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে সংসদ অধিবেশন শুরুর আগের দিন বুধবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, গত অধিবেশনের মতো এবারো বিরোধী দলকে সংসদে দেখার আশা করছেন তিনি। এই অধিবেশনের মেয়াদ কত দিন হবে- তা নির্ধারণে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কার‌্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক বসবে, যাতে সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার। সংসদ নেতা ও বিরোধীদলীয় নেতা উভয়ই এই কমিটির সদস্য। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দুই দলের মধ্যে সংলাপ আয়োজনে কোনো ভূমিকা রাখবেন কি না- জানতে চাইলে শিরীন শারমিন এক্ষেত্রে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের উদ্যোগের ওপর জোর দেন। “আমি আগেও বলেছি, এ ব্যাপারে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা আগ্রহী হলে আমি কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী আমার দায়িত্ব পালন করব।” আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের মাধ্যমে বিলুপ্ত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি, যা প্রায় দুই দশক আগে সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল। এই সংশোধনের ফলে সংসদ বহাল রেখে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই নির্বাচন হবে।

তবে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না দাবি করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুধবারও বলেছেন, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। অন্যদিকে দলের বিভিন্ন সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীও বলে আসছেন, সংবিধানের বর্তমান ধারা অনুযায়ী অর্থাৎ দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হবে। দুই দলের অনড় অবস্থানে কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ রয়েছে। সংলাপের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন দুই নেত্রীকে টেলিফোন করেছেন। চিঠি দিয়ে তাগিদ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ঢাকায় আলোচনা চালাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।আলোচনার এই আহ্বানের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী দলের যে কোনো প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করতে পারে।তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে যতটা ছাড় দেয়া দরকার, আমরা তা দিতে প্রস্তুত আছি।” বিএনপি ইতোমধ্যে বলেছে, তারা নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা তৈরি করছে।

হানিফ বলেন, “বিএনপি সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাব বা রূপরেখা না দিলে সংসদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।”সংসদে আলোচনার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার মঙ্গলবার বলেন, সংসদে বিতর্ক হতে পারে, আলোচনা নয়। তবে আলোচনা হতে পারে সংসদের কোনো কক্ষে। এর একদিন বাদেই হানিফ বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংসদ বা সংসদের বাইরে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচনের আগে দুই দলের এই অবস্থান আর সংলাপের আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় শুরু হবে সংসদের অধিবেশন। টানা ৮৩ দিন অনুপস্থিতির পর গত ৩ জুন সংসদে যোগ দেয় বিএনপিসহ বিরোধী দল। ২৪ কার্যদিবসের ওই অধিবেশনে বিরোধী দল উপস্থিত ছিল ২১ দিনই, ভাষণ দিয়েছিলেন বিরোধীদলীয় নেতাও। ওই অধিবেশনের আগে ‘কেয়ারটেকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের’ দাবি জানিয়ে বিএনপির একজন সংসদ সদস্য মুলতবি প্রস্তাব দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেন, যার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতাসীন দল বিএনপির প্রস্তাব সংসদে চাইলেও বিএনপি বলছে, সংসদে যেহেতু আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই সংবিধান সংশোধনের বিল সরকারি দলকেই তুলতে হবে। রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে টানা দুই বছরের জরুরি অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৪ জানুয়ারি। সেই হিসেবে, মেয়াদ শেষের আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নবম জাতীয় সংসদের ১৮টি অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ৩৯৪টি। এর মধ্যে বিরোধী দল উপস্থিত ছিল ৭৫ দিন। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন ১০ দিন। আসন্ন অধিবেশনের জন্য নতুন তিনটি বিল জমা পড়েছে বলে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ বিল-২০১৩, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার (সংশোধন) বিল- ২০১৩, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী বিল-২০১৩।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top