সকল মেনু

বাঘা যতিনের মৃত্যুবাষিকী আজ

KST-2 (1)কাঞ্চন কুমার,কুষ্টিয়া থেকে:   ১০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা বিপ্লবী বাঘা যতিনের ৯৮তম মৃত্যুবাষিকী বিপ্লবী বাঘা যতীন ১৮৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর কুমারখালির গড়াই নদীর পাড়ে কয়া গ্রামে মাতুল তলায় জন্ম গ্রহনসহ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটানোর কারনে এখানে রয়েছে তার নানা স্মৃতি। মূলত তাঁর নাম ছিলো জ্যোতিন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯০৬ সালের এপ্রিল মাসে কয়া গ্রাম হতে দুই কিলোমিটার দূরে রাধারপাড়া মাঠের আখ ক্ষেতে ছুরি দিয়ে বাঘা হত্যা করে নিজেকে রক্ষা করায় তাঁর নাম হয়েছিলো বাঘা যতিন। কয়া থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাই স্কুল হতে ১৮৯৮ সালে এন্টাস পাশ করেন। এরপর কলকাতা সেন্টাল কলেজে ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবী গুপ্ত সমিতির কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন। যুগান্তর দলের নেতা হয়ে তিনি দলকে আরও সুসংগঠিত করে বিপ্লবী অনুশীলন দলের সঙ্গে ঐক্য গড়ে তোলেন। বিপ্লবের এক পর্যায়ে বাংলায় আসা তাঁর জন্য বিপদজনক হয়ে ওঠে। তখন তিনি অবস্থান নেন উড়িষ্যার কাপ্তিগোদায়। ১৯১৫ সালে হ্যারি এন্ড সন্স গঠনের মাধ্যমে জার্মানী থেকে প্রচুর অস্ত্র ও প্রতি অস্ত্রের জন্য একাধিক গুলি সরবরাহের চুক্তি হয়। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চার যুদ্ধসঙ্গীসহ অস্ত্র খালাসের জন্য উড়িষ্যার বুড়ি বালাম নদীর দিকে রওনা হন বাঘা যতিন। ইতিমধ্যে বালেশ্বরের চাষাখন্দে আশ্রয় নিলে ব্রিটিশ সৈন্য বাঘাযতিন ও তাঁর চার যুদ্ধসঙ্গীকে ঘিরে ফেলে। সেখানে বন্দুক যুদ্ধের একপর্যায়ে বাঘাযতিনের যুদ্ধসঙ্গী বিপ্লবী চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী ঘটনাস্থলে নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অপর তিন সঙ্গী নীরেন দাসগুপ্ত, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও জ্যোতিষ পালসহ বাঘা যতিন গ্রেফতার হন। মারাতœক আহত অবস্থায় তাদেরকে বালেশ্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিতসাধীন অবস্থায় সেখানেই ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বাঘা যতিন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। বাঘা যতিনের বসতভিটা কয়া গ্রামে এখনও বিদ্যমান। তবে তাঁর প্রায় সমস্ত সম্পত্তি এলাকার বিভিন্ন মানুষ জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তাঁর বাবা উমেষচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মা শরতশশী দেবী। বাবার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত (যতীনের বয়স তখন ৫ বছর) তাঁরা ঝিনাইদহের সাধুহাটি রিষখালি গ্রামে বাবার বাড়িতে থাকতেন।

বাঘা যতিনের ৪ যুদ্ধসঙ্গীর পরিচয়ঃ

বালেশ্বর জঙ্গলে বাঘা যতিনের সঙ্গে ছিলেন ৪ যুদ্ধসঙ্গী। তারা হলেন বিপ্লবী চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী, বিপ্লবী নীরেন দাসগুপ্ত, বিপ্লবী মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত ও বিপ্লবী জ্যোতিষ পাল।

বিপ্লবী চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরীঃ ১৮৯৮ সালে মাদারিপুরের খালিয়ার জমিদার বাড়িতে জন্ম হয় বিপ্লবী চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরীর। তার বাবা পঞ্চানন রায় চৌধুরী। আধ্যাতিক পথে সন্ধানী বিপ্লবী চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরীকে বাঘা যতিনের কাছে নিয়ে যান দলের নেতা পূর্ণ দাস। ১৯১৩ সালে পূর্ণ দাসের সঙ্গে একটি মামলায় ধরা পড়ে চিত্তপ্রিয় ৮ মাস কারাবরন করে।

বিপ্লবী নীরেন দাসগুপ্তঃ ১৮৯২ সালে মাদারিপুরের খৈয়ারডাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লবী নীরেন দাসগুপ্ত। তার বাবা কবিরাজ লালিতমোহন দাসগুপ্ত। ১৯১২ সালে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় নীরেন বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসে। মাদারীপুরের আলোচিত একটি মামলা থেকে খালাস পেয়ে কলকাতা গিয়ে তিনি দেখা হয় বিপ্লবী অতুল ঘোষের সঙ্গে। নীরেনকে বাঘা যতিনের কাছে পৌছে দেন অতুল ঘোষ। বেলেঘাটার একটি আলোচিত ডাকাতির পর নীরেনের নামে হুলিয়া হয়।

বিপ্লবী মনোরঞ্জন সেনগুপ্তঃ বাঘা যতিনের চার যুদ্ধ সঙ্গীর মধ্যে মনোরঞ্জন ছিলেন সবার ছোট। ১৮৯৬ সালে মাদারি পুরে জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লবী মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত। তার বাবার নাম হলধর সেনগুপ্ত। ১৯১২ সালে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় তিনি আলোচিত মাদারিপুর ষড়যন্ত্রে ধরা পড়েন। সেকারনে ৮ মাস কারাবরন করেন তিনি। একবার অল্প কিছু মুড়ি-মুড়কি খেয়ে ৭২ মাইল পথ পায়ে হেটে নিদ্দিষ্ট স্থানে গিয়েছিলেন তিনি। জেল থেকে বের হয়ে বিপ্লবী মনোরঞ্জন অতুল ঘোষের সান্নিধ্যে যান। গার্ডেনরীচ ডাকাতির পর বেশ কিছুদিনের জন্য গাঢাকা দেয় বিপ্লবী মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত।

বিপ্লবী জ্যোতিষ পালঃ ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে উপেক্ষিত বিপ্লবী জ্যোতিষ পাল। কুষ্টিয়ার কমলাপুর গ্রামের মাধবচন্দ্র পালের ছেলে তিনি। বাঘা যতিন আদর করে তাকে ডাকতে চাক্ বলে। খুব অল্প বয়সে গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top