সকল মেনু

স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেফতার

হটনিউজ ডেস্ক:

গাজীপুরে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। তাকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত রাজু আহম্মেদ (৩১) জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে। সে বর্তমানে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার জামতলা এলাকায় বসবাস করতো। নিহত জরিফুল (৩৫) জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার পাঁচ বাড়ীয়া গ্রামের মো. আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে।

গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত আসামি প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রাজু আহমেদ কালিয়াকৈরের সফিপুর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় গার্মেন্টসে ডায়িংয়ের কিউসি হিসাবে চাকুরী করে এবং তার স্ত্রী জরিফুল (৩৫) মৌচাক নীটে চাকুরী করে। ২০০৭ সালে তারা প্রেম করে বিয়ে করে। তাদের ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে, সে গ্রামের বাড়ীতে থাকে। তার স্ত্রী ভিকটিম একই বাসার পাশের রুমের ভাড়াটিয়া রুবেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আসামি বিষয়টি জানতে পেরে বাসা ছেড়ে দেয়।

এ নিয়ে তার স্ত্রী প্রায় সময় তার সাথে ঝগড়া বিবাদ করতো। ভিকটিম তার বেতনের টাকা তার ছোট ভাই সুজার মোবাইলের বিকাশ একাউন্টে পাঠাত। স্ত্রী সংসার চালাতে বা মেয়ের ভরন পোষনের জন্য কোন টাকা পয়সা দিত না। সমস্ত টাকা তার মা বাবার জন্য পাঠিয়ে দিত। টাকা পয়সা নিয়ে কথা বলতে গেলে খারাপ ভাষায় তাকে গালাগালি করতো এবং প্রায় সময় খারাপ ব্যবহারসহ অযথা গালাগালি করতো। ঠিকমত খাবার দাবার দিত না। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে নাইট ডিউটিতে থাকাবস্থায় আসামি তার স্ত্রীর সাথে বেতনের টাকা নিয়ে কথা বললে ভিকটিম আসামির বাবা মার নাম নিয়ে অনেক গালাগালি করে।
তখন আসামি তার স্ত্রীর ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, কালকে (পরদিন) ভিকটিমকে হত্যা করবে এবং মনে মনে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। তার স্ত্রী অফিস থেকে লাঞ্চের সময় বের হলে আসামি তাকে ফোন দিয়ে স্ত্রীর ফ্যাক্টরীর নিকট মেইন রোডের মোড়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ভিকটিম আসলে বিশেষ কাজ আছে এ কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে তাকওয়া বাসে উঠে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় এসে বাস থেকে নেমে একটি অটোরিক্সায় উঠে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের দিকে আসে। মাস্টার বাড়ী পার হয়ে নির্জন জায়গা দেখে আসামি ভিকটিমকে নিয়ে নেমে যায়।

মেইন রোড পাড় হয়ে পূর্ব দিকে গজারী বনের ভিতরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। নির্জন জায়গা দেখে আসামী দাঁড়িয়ে পরলে স্ত্রী জরিফুল বলে কেন দাঁড়াইছো? তখন আসামি বলে ভিকটিমকে আজ মাইরা ফেলবে। ভিকটিম চিৎকার দিতে চাইলে আসামী এক হাত দিয়ে ঘাড়ে চেপে ধরে ও অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। ভিকটিম পড়ে গিয়ে গাছের সাথে মাথায় ধাক্কা লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তখন আসামি ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচ দিয়ে ধরে। এক/দুই মিনিট পরে ভিকটিম মারা যায়।

এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৭টার দিকে গাজীপুর মেট্রো সদর থানা পুলিশ ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভিতর থেকে অজ্ঞাত মহিলার (৩৫) লাশ উদ্ধার করে। মৃত দেহের ডান কানের পাশে কালো ফোলা আঘাতের চিহ্ন, গালের বাম পাশে ছিলা জখম, ডান হাতের কবজিতে কাটা জখম ও গলায় কালচে দাগ ছিল। সংবাদ পেয়ে পিবিআই গাজীপুর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে উক্ত অজ্ঞাত লাশের পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং তার আত্মীয় স্বজনকে সংবাদ দিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করে।

এ ব্যাপারে নিহতের ভাই মো. সুজা মিয়া বাদী হয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরবর্তীতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ তদন্তকালে গাজীপুর পিবিআইকে মামলাটি স্ব-প্রনোদিত হয়ে অধিগ্রহণ করে। পরে পিবিআই ঘটনার রহস্য উদঘাটনের কাজ শুরু করেই ২০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে তিনটার দিকে কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে নিহতের স্বামী রাজুকে গ্রেফতার করে পিবিআই সদস্যরা। আসামির দেয়া তথ্যমতে সোমবার দুপুরে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে উপস্থিত হন পিপিআই সদস্যরা।

পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আরো বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। ভিকটিম বিভিন্ন পুরুষের সাথে মোবাইলে কথা বলতো এবং তার বেতনের টাকা স্বামীর সংসারে ব্যয় না করে সমস্ত টাকাই ভাইয়ের নিকট পাঠাত। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হতো এবং ভিকটিম স্বামীর সাথে খারাপ ব্যবহার ও গালি গালাজ করত। ঘটনার দিন (১৫ সেপ্টেম্বর) লাঞ্চের বিরতিতে ভিকটিমকে কৌশলে মাস্টারবাড়ী ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে নিয়ে এসে নির্জন জায়গায় এনে ভিকটিমকে তার ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। সোমবার আসামীকে নিয়ে মামলার ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামীর দেখানো মতে আমরা বে্লডটি উদ্ধার করা হয়। মূলত পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top