সকল মেনু

যে কারণে বাতিল হলো যুক্তরাষ্ট্রে লবিইস্টের মাধ্যমে স্থাপিত ‘জিয়াউর রাহমান ওয়ে’

হটনিউজ ডেস্ক:

জোট সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে তারেক জিয়া সহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছিল, সেই তহবিল থেকে লবিয়িস্টদের মাধ্যমে অর্থ খরচ করে বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যাল্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোর সিটিতে ‘জিয়াউর রহমান ওয়ে’ নামে যে রাস্তার নামকরণ করিয়েছিলো, যুক্তরাষ্ট্র সরকারী কর্তৃপক্ষ সেটি বাতিল করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এবং বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরবেলায় বাল্টিমোর ডিপার্টমেন্ট অব ট্রন্সপোর্টেশন এবং বাল্টিমোর সিটি মেয়র অফিস যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

লবিইস্টদের মাধ্যমে বিপুল অর্থ খরচ করে একজন স্বৈরশাসক ও খুনীর নামে রাস্তার নামকরণ স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিসহ অনেকেই মেনে নিতে পারেনি । তাঁরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিলো।

আপত্তিকারীদের বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশে জাতির পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী, সামরিক- বেসামরিক অসংখ্য ব্যক্তিকে ঠান্ডা মাথায় হত্যাকারী, স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়ার নামে যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোন রাস্তার নামকরণ হতে পারে না ।

অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে । এই বিষয়ে তাঁরা একটি ভার্চুয়াল শুনানির আয়োজন করেন। শুনানির পূর্বে বাংলাদেশ থেকে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং কয়েকজন আইনজ্ঞ জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাসহ একটি সাংবিধানিক ও আইনি মতামত যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করেন।

সেখানে দেখানো হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট জিয়াকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল যদিও মৃত্যুজনিত কারণে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে তার বিচার করা যায়নি । সাংবিধানিক ও আইনি মতামতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট জিয়াকে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে তার শাসনামলকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জিয়াকে অসংখ্য সামরিক- বেসামরিক ব্যক্তির হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় । বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী- খুনীদের সরকারী চাকুরীতে নিয়োগসহ তাদের কে সুরক্ষা দেয়া সহ তাদের সাথে সার্বিক যোগসাজশে জিয়া রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলো ।

এমনকি স্বপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার রহিতকরণে জিয়ার পরামর্শে ও সমর্থনে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নামে যে অসভ্য আইন জারী হয়েছিল, ঐ অবৈধ আইনকে বৈধকরণ ও সুরক্ষা দেয়ার জন্য ১৯৭৯ সালে জিয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাশ করেছিল।

আইনি মতামতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, সেই দেশে সংবিধান লংঘনকারী কোন খুনী- স্বৈরশাসক যাকে তার দেশের সর্বোচ্চ আদালত খুনী ও অবৈধ স্বৈরশাসক হিসেবে ঘোষণা করেছে, তার নামে কোন রাস্তার নামকরণ হতে পারে না । যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের কাছে এই সাংবিধানিক ও আইনি মতামত গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল । পরে ভার্চুয়াল শুনানীতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তাঁরা বিষয়টির আইনি, নৈতিক ও বাস্তবিক দিক বিবেচনা করে জিয়ার নামে রাস্তার নামকরণ বাতিল করেন । এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় বাল্টিমোর ডিপার্টমেন্ট অব ট্রন্সপোর্টেশন এবং বাল্টিমোর সিটি মেয়র অফিস।

বাংলাদেশ থেকে যে সাংবিধানিক ও আইনি মতামত প্রেরণ করা হয়েছিল, সেটির খসড়া প্রস্তুত করেছিলেন বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী, ড۔ সেলিম মাহমুদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল ।

ভার্চুয়াল শুনানিতে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনের পক্ষে লেজিসলেটিভ অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার লিয়াম ডেভিস এবং বাল্টিমোর মেয়র অফিসের পক্ষে ডিরেক্টর অব ইমিগ্র্যান্ট অ্যাফেয়ার্স ক্যাটরিনা রড্রিগস লিমা এবং বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী, শামীম চৌধুরী, ড۔ প্রদীপ রঞ্জন কর, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, অধ্যাপক এম এ আরাফাত প্রমুখ অংশ নিয়েছেন ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top