সকল মেনু

কালো দিবসের ইতিহাস থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিতে হবে: ঢাবি উপাচার্য

হটনিউজ ডেস্ক :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘শিক্ষক ও ছাত্রদের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে ক্ষমতালিপ্সু অপশক্তি পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। কালো দিবসের ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার (২৩ আগস্ট) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গণবিচ্ছিন্ন কিছু মানুষ ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক পন্থায় সেদিন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে ক্ষমতালিপ্সু সেই অপশক্তি পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। এতে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। এসব ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

উপাচার্য ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ আগস্ট বিভীষিকাময় ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা তখন সম্মিলিতভাবে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলাম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অপশক্তির অপশাসনের অবসান চেয়েছিলাম। গণমানুষ আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল। ফলে আমাদের আন্দোলন যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছেছিল। আমরা দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলাম।’

২০০৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ক্যাম্প স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনা ছিল প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ।’

উপাচার্য বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক ধারা বাধাগ্রস্ত হলে সমগ্র জাতি বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এ কারণে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা জরুরি।’

সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া, কারা নির্যাতিত শিক্ষক অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, কারা নির্যাতিত ছাত্র মানবেন্দ্র দেব ও মো. তৈয়ব আলী, ছাত্রনেতা মো. সাদ্দাম হোসেনসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার।

আলোচনা সভা ছাড়াও দিবসটি পালন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের কালো ব্যাজ ধারণ।

২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলা চলছিল। ওই খেলার জের ধরে শিক্ষার্থী ও সেনা সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর সদস্যদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। দাবি ওঠে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করারও।

পরদিন ২১ আগস্ট শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটে আহত হয় শতাধিক ছাত্র। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ক্যাম্প সরাতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী। ২৩ আগস্ট রাতে আটক করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ও তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি সদরুল আমিনকে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার হন ঢাবির পাঁচ ছাত্রনেতা।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘটনার পর দীর্ঘ ৬৬ দিন পর খুলে দেওয়া হয় ঢাবি। এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ২৩ আগস্ট ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে ঢাবি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top