সকল মেনু

ধর্ষক শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানব বন্ধন, বিক্ষোভ

manobbondonহুমায়ুন কবীর, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) থেকে:  মেধাবী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে অবশেষে শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষন মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট সহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপিড়নের ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।

প্রসংগত, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আঃ রশীদ স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি স্কুল সংলগ্ন এলাকায় একটি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। ওই কোচিং সেন্টারে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও আশপাশের শিক্ষার্থীরাও কোচিং করেন। শিক্ষক আঃ রশীদ বিভিন্ন বয়সী নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে নানা রকম প্রলোভন, পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়া, বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া সহ প্রলোভন দেখিয়ে নানা রকম কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কিছুদিন আগে এমন কু-প্রস্তাব দেবার জন্য অভিভাবকরা ওই শিক্ষককে শাসিয়ে দেন। পঞ্চম শ্রেনীতে বৃত্তি প্রাপ্ত, জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ও শ্রেনীতে প্রথম রোল নম্বরধারী সংখ্যালঘু দরিদ্র এক মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রতি ললুপ দৃষ্টি পরে শিক্ষক আঃ রশীদের। আঃ রশীদ এর কোচিং সেন্টারে গত বুধবার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সকাল ৭ টায় সেখানে আসতে বলা হলেও দরিদ্র ওই মেধাবী শিক্ষার্থীকে সকাল ৬ টার মধ্যে আসতে বলে আঃ রশীদ। ওই শিক্ষার্থী শিক্ষর্কে কথামত সহজ সরল ভাবে সকাল ৬ টায় কোচিং সেন্টারে আসলে শিক্ষক আঃ রশীদ ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাইয়ে দেবার কথা বলে এবং শিক্ষার্থীকে কু-প্রস্তাব দেয়। ওই শিক্ষার্থী শিক্ষকের এমন আচরনে হতবাক হয়ে পড়ে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যেতে পারে চিন্তা করে ওই শিক্ষার্থীকে আঃ রশীদ মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনে জোড়পূর্বক অশীল ছবি তোলে। এ ছবি ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়া হবে শিক্ষার্থীকে ব্যাক মেইল করে ধর্ষন করে আঃ রশীদ। পরক্ষনে সেখানে আসা অন্যান্য সহপাঠিরা ধর্ষিতা ওই শিক্ষার্থীর কান্নায় ঘটনা জানতে চায়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষনাৎ ওই শিক্ষার্থী সহ কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়ে আসে। খবর পেয়ে এলাকার অভিভাবকরাও ছুটে আসেন সেখানে। ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে সটকে পরেন শিক্ষক আঃ রশীদ।

ঘটনা জানাজানির পরে থানায় মামলা করতে চাইলে নিপিড়নের শিকার ওই শিক্ষার্থীকে একটি প্রভাবশালী মহল মামলা করতে বাধা দেয় এবং আপোষ করার জন্য চাপ ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। এতে করে ওই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিলে ছাত্র সংগ্রাম ঐক্য পরিষদ গড়ে তোলে আন্দোলন করতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী থানা পুলিশ অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষনের মামলা রেকর্ড করে। এ ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, শিক্ষক আঃ রশীদ এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর চাচা বাদী হয়ে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলা করেছেন। আঃ রশীদ পলাতক থাকায় তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে আজ শনিবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নারী শিক্ষার্থী সহ সহস্রাধীক শিক্ষার্থী শিক্ষক আঃ রমীদকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। সে সময় শিক্ষার্থীরা ঘোষনা দেন, আগামী ২ দিনের মধ্যে আঃ রশীদকে গ্রেপ্তার করে আইনে সোাপর্দ করা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট সহ কঠোর কর্মসূচি পালন করবে তারা।

শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে এলাকার শত শত অভিভাবক ও সচেতন মানুষ সমর্থন জানিয়ে তারাও এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এ প্রসংগে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী জনি, মনোয়ার, আসাদ, জুলফিকার সহ কয়েকজন শিক্ষক আঃ রশীদ দীর্ঘদিন থেকেই এমন অপকর্ম করে আসছিলেন। জঘন্য এ অপরাধী একটি অতিদরিদ্র ও অত্যন্ত মেধাবী এক শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করে ফেললো।

লাহিড়ী এলাকার শরীফুল ইসলাম সহ কয়েকজন জানান, ওই কোচিং সেন্টারে ইতোমধ্যে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রয়োজনে ওই কোচিং সেন্টারকেই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। অতিসত্তর আঃ রশীদকে গ্রেপ্তার করা না হলে ২ দিন পরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট সহ কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এমন জঘন্য কাজে লিপ্ত আঃ রশীদ এর শিক্ষকতা করার কোন যোগ্যতা নাই উলেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে কলুষিত করা আঃ রশীদকে স্কুল থেকে বহিষ্কার ও এলাকা থেকে বিতারিত করার দাবি এখন সকলের। তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষার্থী ও এলাকার এ দাবিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গুরুত্ব দিবেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top