সকল মেনু

ধর্ষক শিক্ষকের গ্রেপ্তারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ভাংচুর, তালা

images (2)হুমায়ুন কবীর, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) থেকে: শিক্ষার্থীকে ধর্ষন ও নির্যাতনের ঘটনায় ধর্ষক শিক্ষকের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী নামক স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা সহ এলাকার লোকজন ওই শিক্ষকের কোচিং সেন্টার ও বাসভবনে ভাংচুর করে ঘরে তালা মেরে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, ধর্ষক ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে লাহিড়ী নামক স্থানে শিক্ষার্থীরা এ ভাংচুর ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটনায়। গত বুধবার লাহিড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী এ শিক্ষার্থীকে ব্যাক মেইল করে ধর্ষনের ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পরে।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন, পবিত্র কুমার, রনি সহ কয়েকজন জানান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আঃ রশীদ স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি স্কুল সংলগ্ন এলাকায় একটি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। ওই কোচিং সেন্টারে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও আশপাশের শিক্ষার্থীরাও কোচিং করেন। শিক্ষক আঃ রশীদ বিভিন্ন বয়সী নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে নানা রকম প্রলোভন, পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেয়া, বেশি নম্বর পাইয়ে দেয়া সহ প্রলোভন দেখিয়ে নানা রকম কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। কিছুদিন আগে এমন কু-প্রস্তাব দেবার জন্য অভিভাবকরা ওই শিক্ষককে শাসিয়ে দেন। পঞ্চম শ্রেনীতে বৃত্তি প্রাপ্ত, জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ও শ্রেনীতে প্রথম রোল নম্বরধারী সংখ্যালঘু দরিদ্র এক মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রতি ললুপ দৃষ্টি পরে শিক্ষক আঃ রশীদের। আঃ রশীদ এর কোচিং সেন্টারে গত বুধবার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সকাল ৭ টায় সেখানে আসতে বলা হলেও দরিদ্র ওই মেধাবী শিক্ষার্থীকে সকাল ৬ টার মধ্যে আসতে বলে আঃ রশীদ। ওই শিক্ষার্থী শিক্ষর্কে কথামত সহজ সরল ভাবে সকাল ৬ টায় কোচিং সেন্টারে আসলে শিক্ষক আঃ রশীদ ওই শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অধিক নম্বর পাইয়ে দেবার কথা বলে এবং শিক্ষার্থীকে কু-প্রস্তাব দেয়। ওই শিক্ষার্থী শিক্ষকের এমন আচরনে হতবাক হয়ে পড়ে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যেতে পারে চিন্তা করে ওই শিক্ষার্থীকে আঃ রশীদ মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনে জোড়পূর্বক অশীল ছবি তোলে। এ ছবি ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়া হবে শিক্ষার্থীকে ব্যাক মেইল করে ধর্ষন করে আঃ রশীদ। পরক্ষনে সেখানে আসা অন্যান্য সহপাঠিরা ধর্ষিতা ওই শিক্ষার্থীর কান্নায় ঘটনা জানতে চায়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষনাৎ ওই শিক্ষার্থী সহ কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়ে আসে। খবর পেয়ে এলাকার অভিভাবকরাও ছুটে আসেন সেখানে। ঘটনার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে সটকে পরেন শিক্ষক আঃ রশীদ।

বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কোচিং সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং শিক্ষক আঃ রশীদকে খুজতে থাকে। ঘটনাটি এলাকার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও জানান অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। ঘটনার একদিন পেরিয়ে গেলেও বিষয়টিতে বিদ্য্লায় কর্তৃপক্ষ আইনী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লাহিড়ী এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বিক্ষুব্ধরা ধর্ষক ও শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান ও কোচিং সেন্টারে ভাংচুর চালিয়ে তালাবদ্ধ করে দেন। তারা দাবি করেন, ধর্ষক ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আজ শনিবার তারা বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় এলাকার সকল শিক্ষার্থীকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগদানের আহ্বান জানান। এদিকে ধর্ষিতা ওই স্কুল ছাত্রী লজ্জায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে। অতি দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারের ওই মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে বিরুপ প্রভাব পড়ায় শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন উপজেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

 

কান্নায় ভেঙে পড়ে এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক শিক্ষার্থীর বাবা জানান, দিনমজুর আর বর্গা চাষ করে একমাত্র মেয়ে ও ৪ সন্তান সহ ৬ জনের সংসার নির্বাহ করেন তিনি। মেধাবী মেয়ের পড়াশোনার জন্য তিনি অধিক পরিশ্রম করছেন বলে জানান। এমন ঘটনায় তার মেয়ের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটেছে। তার মেয়ে আর আদৌ পড়াশোনা করতে পারবেন কি না বলতে বলতে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনি। তিনি আঃ রশীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে লাহিড়ী বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এতটাই লজ্জার যে, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্থ শিক্ষকরা লজ্জায় এলাকায় চলতে পারছেন না। ধর্ষনের ঘটনা জানাজানি হয়ে যাবার পর শিক্ষক আঃ রশীদ স্কুলে আসেননি বলে জানান তিনি। বিষয়টি উপজেলা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে শিক্ষক আঃ রশীদ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তার গ্রামের বাড়ি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নাগেশ্বরহাট গ্রামে গিয়েও আঃ রশীদকে পাওয়া যায়নি। ওই শিক্ষকের বাবা মাজেদুর ইসলামও বলতে পারেননি তার ছেলে কোথায় রয়েছে। তবে তিনি বলেন, এমন ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানেন না।

বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ আসেনি। এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে কোন অবনতি না হয়, এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা তিনি নিবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা এডভোকেট ইন্দ্রনাথ রায় জানান, বৃহষ্পতিবার ওই শিক্ষার্থী ও তার বাবার কাছে সহ এলাকার লোকজনের কাছে ঘটনাটি তিনি সহ পরিষদের নেতারা শুনেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষক নামের কলংক আঃ রশীদ একটি মেধাবী ছাত্রীর জীবনটাই নষ্ট করে দিলো। এ বিষয়ে ধর্ষক ওই শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে সব প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এত ভয়াবহ একটি ঘটনার পরেও স্থানীয় প্রশাসন এখনো ধর্ষক ওই শিক্ষককে খুজে বের করে গ্রেপ্তার না করার বিষয়টি বেশ রহস্যজনক।

এদিকে বৃহষ্পতিবার রাতে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে ৫ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। শিক্ষার্থীটির বাবা কষ্ট সংবরন করে বলেন, ওরা টাকা দিতে চায়। কিন্তু আমার মেয়ের জীবন এখন কি হবে তার বিচার তারা করছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top