সকল মেনু

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি চলাচল বন্ধ

feri20130903231416নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর :  নাব্যতা সংকটের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গেটওয়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ড্রেজিং করেও নতুন কোনো চ্যানেল উন্মুক্ত করা যায় নি। শেষ পর্যন্ত কাজ অসমাপ্ত রেখেই ড্রেজারগুলি গুটিয়ে ফেলা হয় । কর্তৃপক্ষ বলছে এই রুটটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আপাতত: সকল যানবাহনকে বিকল্পপথে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, নতুন চ্যানেল খুলছে এই ঘোষণার পরপরই মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচুর যানবাহন ঘাটের উভয়পাড়ে ভিড় করে। ফলে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
এখন তাদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট আকস্মিক পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ঘাটে যানবাহন না নেওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন।
নৌরুট স্বাভাবিক অবস্থায় না ফেরা পর্যন্ত বিকল্পপথ ব্যবহারের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দেন। মঙ্গলবার রাত ৯ টায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রচার করে।
তবে কবে নাগাদ এই ঘাট দিয়ে ফেরী চলাচল স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারেনি বিআইডব্লিউটিসি। বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন মঙ্গলবার রাতে জানান, সোমবার পর্যন্ত পুরনো চ্যানেল দিয়ে হাফ লোডে ফেরি চলাচল করে।
কিন্তু ওইদিন রাত ১০টার দিকে একটি ফেরি দৌলতদিয়ার কাছে চ্যানেলে আটকে যায়। এরপর থেকে ওই চ্যানেল দিয়ে আর ফেরি চলাচল করতে পারেনি।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে আটকে যাওয়া ফেরিটি টাগবোট দিয়ে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পুরনো চ্যানেলে পর্যাপ্ত গভীরতা না থাকায় ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
আরেক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জানান, মঙ্গলবার দুটি কে-টাইপ ফেরি হাফ লোড দিয়ে নতুন চ্যানেল দিয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু গভীরতা না থাকায় ফেরি দুটি শেষে ফিরিয়ে আনা হয়।
এদিকে ড্রেজার বসিয়ে গত ২৯ আগস্ট রাত থেকে দৌলতদিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাটের ভাটিতে নতুন চ্যানেল তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খননকাজ অসমাপ্ত রেখেই ড্রেজার দুটি গুটিয়ে ফেলা হয়।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মতিন বলেন, `তীব্র স্রোতের মুখে ড্রেজারগুলো স্থির না থাকায় খননকাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট ব্যবস্থাপক নুরুল আনোয়ার জানান, নৌপথের দৌলতদিয়া চ্যানেলে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় ফেরীর পাশাপাশি লঞ্চ চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
যাত্রীবোঝাই লঞ্চগুলো দৌলতদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায়ই ডুবোচরে আটকা পড়ছে। ফলে এই পথটি ব্যবহার করা এখন খুবই ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
এদিকে সন্ধ্যার মধ্যে নতুন চ্যানেল খুলে যাবে এমন প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে বিপুল সংখ্যক ট্রাক, বাস ও ছোট গাড়ি ভিড় করে।
কিন্তু ফেরি চলাচল না করায় দুই ঘাটে আটকে পড়ে কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যবোঝাই প্রায় ৬০০ ট্রাক এবং দু শতাধিক ছোট যানবাহন।
মঙ্গলবার রাত থেকে এসব যানবাহন শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু দিয়ে পারাপারের জন্য বিকল্পপথে যেতে শুরু করে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় বিআইডব্লিউটিসি গত ৯ দিনে প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, গত ৯ দিনে ১১টি ফেরি ডুবোচরে আটকে পড়ে।
তাদের হিসাবে ডুবোচরে এই ৯টি ফেরি মোট ৬২ ঘণ্টা আটকে থাকে। আটকে যাওয়া ফেরিগুলো চর থেকে মুক্ত করার জন্য ইঞ্জিনে অতিরিক্ত চাপ দেওয়ায় ব্যাপক যান্ত্রিক ক্ষতি হয়েছে।
এগুলো মেরামত করতে বড় অংকের টাকা ব্যয় হবে। সব মিলেও ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি টাকা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top