সকল মেনু

১ সপ্তাহের ব্যবধানে চার স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ; আতংকে অভিভাবকরা

imagesমিয়া মোঃ নোমান, টাঙ্গাইল:  দিনদিন বেড়েই চলছে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের ধর্ষণের সংখ্যা। সপ্তাহের ব্যবধানে চার স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আতংকের মধ্যে পড়েছে অভিভাবকরা। আর এ ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে চলছে সবত্রই আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ভূঞাপুরে গত সোমবার থেকে শনিবার টানা ৫দিন ধরে ধর্ষণের শিকার হয়েছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর দুই স্কুল ছাত্রী। এছাড়াও রবিবার একটি মাদরাসার পিয়ন কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেনীর আরেক ছাত্রী ধর্ষিত হয়েছে। গত বুধবার গোপালপুর সদর উপজেলার মৃত দুলাল মিঞার মাদকসেবী পুত্র সোহেল (৩৫) চতুর্থ শ্রেনীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। গণহারে এভাবে ধর্ষণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অভিভাবকদের মধ্যে সঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের একটাই চিন্তা সন্তানকে স্কুলে পাঠালে আবার ঠিকমত বাড়ি ফিরতে পারবে তো? রোববার রাতে গ্রেফতার হওয়া মাসুদ নামের এক ধর্ষক পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে ৫দিন ধরে ওই দুই শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ করার কথা। আর এর পিছনে মদদ দিয়েছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য আসাদুল মাসুদ লিটন ও গ্রাম্য মাতব্বররা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পরই তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি ঘটনাটি যাতে কোন মিডিয়াতে প্রকাশিত না হয় সেজন্যও হুমকি দিয়েছে ধর্ষিতার অভিভাবকদের। পরে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ধর্ষিতা এক ছাত্রীর পিতা রোববার সকালে ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের সাফলকুড়া গ্রামের দুই যুবক মাসুদ ও মোবারক নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। বর্তমানে ওই দুই ছাত্রীর একজন গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ১২৪ নং কক্ষের ৩নং ওয়ার্ডে ডা. জাকিয়া রশিদ শাফির তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। এছাড়া রবিবার দুপুরে ভূঞাপুর আসাদুজ্জামান খান হাফেজিয়া মাদরাসার পিয়ন সাইফুল ইসলাম (২৫) কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দুইটি ধর্ষণের ঘটনায় রবিবার রাতে পুলিশ ধর্ষক সাইফুল ইসলাম, মাসুদ ও মোবারককে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানির পর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিভাবকরা বিপদের আশংঙ্কায় তাদের সন্তানদের নিয়ে কোচিং ও স্কুলে যেতে দেখা গেছে। সন্তানদের একলা ছাড়তেও নারাজ তারা। আবার স্কুল ছুটি হলেই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন অভিভাবকরা নিজেই। জেসমিন আরা, মিনারা বেগম, আফরিন সুলতানা, শাম্মী আক্তারসহ অনেকে জানান, আমরা সন্তানদের নিয়ে আতংকের মধ্যে আছি। ঘটনাগুলো জানার পরই আমরা আমাদের সন্তানদের স্কুলে নিয়ে আসি এবং ছুটি শেষে বাড়িতে নিয়ে যাই। অনেকটা হতাশ হয়ে বলেন, কতদিন এভাবে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাব এবং নিয়ে আসবো? রক্ষক হয়ে যখন ভক্ষকের রূপ নেয় সে প্রতিষ্ঠানেও সন্তানদের নিরাপত্তা কতটুকু?

একাধিক অভিভাবকরা জানান, সন্তানদের নিয়ে আমরা চিন্তিত। যেভাবে ধর্ষণ বেড়ে চলছে তাতে করে আতংকের মধ্যে আছি। স্কুলে যাওয়ার পথে যদি বখাটের কবলে পড়ে তারা। এছাড়া যারা অপরাধী তাদের কঠোর বিচার হয় না। ফলে তারা অপরাধ করতেও ভয় পায় না।

ভূঞাপুর ইব্রাহীম খা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগীয় সহকারী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারনে ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটছে সমাজে। এর জন্য সমাজপতিরা দায়ী বলে মনে করেন এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব আর সমাজপতিদের যে দায়বদ্ধতা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। আবার দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top