সকল মেনু

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬টি ইউনিয়নের দশ হাজার মানুষ পানিবন্দি

flood-L20130901232535 রফিকুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২ সেপ্টেম্বর :   পশ্চিম উজান থেকে ধেয়ে আসা প্রবল বন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলাসহ চরাঞ্চলের ১৬টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বন্যায় এই দুই উপজেলার প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান ও সব্জিসহ অন্যান্য ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বন্যার কারণে একমাত্র উপার্জিত জমির ধান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার হাজার হাজার কৃষক।
সরজমিনে বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার চরপাঁকা, উজিরপুর, দুর্লভপুর, বিনোদপুর, ঘোড়াপাখিয়া, মনাকষা, সত্রাজিতপুর এবং সদর উপজেলার নারায়নপুর, শাজাহানপুর, আলাতুলি ও দেবীনগর, ইসলামপুর, সুন্দরপুর এলাকা বন্যায় ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে।
এসব এলাকায় বসত ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় অসংখ্য পরিবার খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। কেউ কেউ চালার উপর মাচা করে রাত যাপন করছে।
বন্যায় পদ্মার প্রবল খরশ্রোতে ভেঙে যাওয়া নদী পাড়ের মানুষগুলো বাড়ি-ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস শুর করেছে।
বন্যায় এসব এলাকার প্রতিটি বিদ্যালয় প্রায় ৪ থেকে ৫ ফুট পানি জমে গেছে। এ কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এমনকি লাশ দাফন করার স্থানও ডুবে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
এ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ভাঙন কবলিত চরপাঁকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার একর জমির ধান।
দীর্ঘদিনে পদ্মা নদীর বিশাল পরিবর্তন হলেও এবং চর পাড়ে পদ্মার নাব্যতা হারিয়ে গেলেও সমীক্ষার বিষয়ে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। ফলে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছে প্রশাসনও।
এদিকে জেলা প্রশাসন সদর উপজেলার বিভিন্নস্থানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করলেও শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের অনিহা এবং তথ্য বিভ্রাটের কারণে সঠিক সময়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পদ্মা বিপদসীমার ১৭ সে.মি এবং মহানন্দা বিপদসীমার ৫ সে.মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি হতে থাকলে আগামী দু’একদিনের মধ্যেই পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমক্ষায় পদ্মার বিপদসীমা হচ্ছে, ২২.৫০ সে.মি এবং মহানন্দার বিপদসীমা ২১ সে.মি। জেলার চরাঞ্চলের বেশকিছু ইউনিয়ন বন্যায় ডুবে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হলেও এই সমীক্ষার বেড়াজালে পড়ে ত্রান সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, এবছর বন্যায় সদর উপজেলায় রোপা-আমন ও সবজি মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলায় ১১,১৯৫ হেক্টর আবাদী জমির মধ্যে ৪,৮৯৩ হেক্টর আউশধান এবং ১,৩৩০ হেক্টর জমির সবজি বন্যায় তলিয়ে গেছে। পাকা ধানের প্রায় ৪০ শতাংশই ক্ষতি হয়েছে এবং কাঁচা ধান ও সবজির ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্নয় করা সম্ভব হয়নি।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তা নির্নয় করা হবে।
পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, বন্যায় তার ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজার একর জমির আউশ ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদের মধ্যে ২ হাজার কৃষক পরিবার যারা আউশ ধানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। সেখানকার প্রায় ১ হাজার পরিবার বন্যার পানিতে ডুবে কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করার পর তালিকা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোন সহায়তা মেলেনি এসব এলাকার হতভাগ্য মানুষদের। নলকূপগুলো পানিতে ডুবে যাওয়া বিশুদ্ধ পানির কষ্টে রয়েছে হাজারও মানুষ। নেই শুকনো খাবারের ব্যবস্থা, নেই পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। এ কারণে এলাকার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
তিনি বলেন, বন্যায় শতাধিক বাড়ি-ঘর ভেসে গেছে। এখন পর্যন্ত পাঁকা ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি বাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
চরপাঁকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন ও এলাকাবাসী জানান, বন্যায় মাসব্যাপী তাদের ইউনিয়নের ৮টি প্রাথমিক ও ২টি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ হাজার শিক্ষার্থীর পড়াশুনা বন্ধ রয়েছে।
দারিদ্র দূরীকরণে চরাঞ্চলের পিছিড়ে পড়া মানুষদের উন্নয়নে ‘নদী ও জীবন’-২ প্রকল্পের আওতায় বেসরকারি সংস্থা গ্রামীন বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক তরিকুল ইসলাম টুকু সরেজমিন পরিদর্শনে বলেন, বন্যায় এলাকার একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পানিতে বেষ্টিত হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘদিন থেকে ইউনিয়নটিকে বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করলেও এখন পর্যন্ত কোন সরকারি সাহায্য পৌঁছায়নি। এদিকে বন্যায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা ভয়াবহ হওয়ায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী জানান, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দূর্গতদের মাঝে ত্রান সমাগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার পাকাঁ, দুর্লভপুর, মনাকষা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত দরিদ্র অসহায় মানুষদের মাঝে আজ সোমবার ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
জরুরি ভিত্তিতে বন্যাদুর্গত ওইসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রান সামগ্রী ও অন্যান্য দ্রব্যাদি সরবরাহ করে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছে বানভাসী মানুষগুলো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top