সকল মেনু

ঐতিহ্য বাইশরশি জমিদার বাড়ি রক্ষায় হতে পারে আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় অবস্থিত আটরশি পীরের বাড়ি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার পশ্চিম দিকে গেলেই চোখে পড়বে সদরপুর-ফরিদপুর সড়ক এই বাড়ির মাঝখান চিরে চলে গেছে পুখুরিয়ার দিকে। পুখুরিয়ার অদূরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন ভাঙ্গা রেলস্টেশন। এই বাড়ি থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দক্ষিণে ভাঙ্গারদিয়া গ্রামে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। ১৮ শতকের দিকে গোড়াপত্তন হওয়া ফরিদপুর জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যে সু-সমৃদ্ধ একটি অসম্ভব সুন্দর ঐতিহাসিক নিদর্শন বাইশরশি জমিদার বাড়ি।

বাইশরশি জমিদার বংশের গোড়াপত্তনকারী সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বৃটিশ আমলে এক লবন ব্যবসায়ী সাহা পরিবার এই জমিদারীটি ক্রয় করেছিলেন বলে জানা যায়। এই জমিদার বংশের জমিদারীর আওতায় স্থানীয় ফরিদপুর জেলা ছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন অংশ মিলিয়ে মোট ২২টি পরগণা ছিল। তারা তাদের ক্ষুদ্র জমিদারীকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরগণা ক্রয় করার মাধ্যমে বিশাল জমিদারীতে পরিণত করেছিলেন। পরগণার সংখ্যা এবং আয়তন বিচারে তৎকালীন সময়ের বৃহত্তম জমিদারী ছিল এটি। এই জমিদারদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯১৩ সালে বাইশরশি হাইস্কুল তথা ‘শিবসুন্দরী একাডেমী’ গড়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ, সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ এবং আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কংগ্রেস সভাপতি অম্বিকাচরণ মজুমদারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল এই জমিদারদের সাথে।

জমিদারীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বংশ পরম্পরায় জমিদাররা তাদের জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর ঐ সময়ের জমিদার ভারতের কলকাতায় বসে জমিদারী পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ত আইনের বলে তৎকালিন পূর্বপাকিস্তানে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বংশের একজন (সুকুমার রায় চৌধুরী) ছাড়া বাকি সকলেই ভারতে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন।

সুকুমার রায় চৌধুরীর সময় জমিদার বাড়ির অর্ধেক অংশ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার দখল করে নেয়। আর বাকি অর্ধেক অংশে সুকুমার রায় তার পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের দিকে জমিদারদের শেষ বংশধর সুকুমার রায় চৌধুরী আত্মহত্যা করেন। তারপর থেকে অবিভাবকহীন ভাবে পড়ে থাকে বাড়িটি। আর কোন দাবিদার না থাকায় বাড়িটি পরিত্যক্ত হিসেবে গণ্য হয়। এরপর জমিদার বাড়ির সম্পূর্ণ জায়গা সরকারি খাসজমি হিসেবে রেকর্ড হয়।

এর কিছুকাল পর সেখানে একটি বিদ্যুৎ অফিস, ভূমি অফিস, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপিত হয়। ভূমি অফিসের পাশে একটি মসজিদ ও নানান ধরনের দোকানপাট গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ জনগণের আনাগোনা বাড়ে। সরকারি জমিতে সরকারি অফিস স্থাপিত হবে এটাই স্বাভাবিক। জমিটি ব্যক্তি মালিকানায় থাকলে নিশ্চয়ই এসব হত না। এদিকে স্থানীয় লোকজনের নজর পড়ে বাড়িটির উপর। যে যা পারে নিজের মত করে কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো রাতের অন্ধকারে চুরি করে নিয়ে যেতে থাকে মূল্যবান জিনিসপত্র। তৎকালীন একজন থানার অসাধু কর্মকর্তা নিজের প্রভাব খাটিয়ে উক্ত বাড়ির মূল্যবান কাঠ ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যান ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। এভাবে প্রতিদিনই বাড়িটি তার মূল্যবান সম্পদগুলো হারাতে থাকে। নষ্ট হতে থাকে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো।

তিন দশক আগে আটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সরকার থেকে খাসজমি হিসেবে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেয় উক্ত বাড়ি সহ জমিদারদের অন্য আরো সম্পত্তি।

লিজ নেয়া জমিতে সরকার ছাড়া অন্য কারো দ্বারা স্থায়ী স্থাপনা তৈরি কিংবা স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা, জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং সম্পদ নষ্ট করার আইনি বাধা রয়েছে। এই পর্যন্ত ভালোই ছিল। হঠাৎ করে এত দীর্ঘ সময় পরে এখন নাকি জমিদারদের উত্তরাধিকার খুঁজে পাওয়া গেছে! এরা যদি জমিদারদের সত্যিকার উত্তরাধিকার হন তাহলে এতদিন তারা কোথায় ছিলেন? কেন তাদের পূর্বপুরুষের সম্পত্তি দেখভাল করতে বা এর কোন খবর নিতে আসেননি তারা! আজ অর্থের প্রয়োজনে জমিদার ও কাঙাল সেজেছেন? কাদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন আপনাদের সম্মান, গৌরব, ইতিহাস?

এই সম্পদের উত্তরাধিকার পুরো বাংলাদেশ, এই ইতিহাসের অংশীদার প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। শুধু কিছু অর্থে এর বিনিময় হতে পারে না। আমরা হতে দিব না। এমন মন্তব্য করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেপটোস ফোর এর সভাপতি হাওলাদার শামিম আহমেদ। বাংলাদেশ জমিন কে শামিম আহমেদ জানান, আমাদের ঐতিহ্য বাইশরশি জমিদার বাড়ি, আমরা এ বাড়ির সংস্করণ চাই। এ বাড়ি সরকারি তত্ত্বাবধানের মাধ্যম টিকিয়ে রাখা হোক৷ যদি কোন মহল এ বাড়ির ক্ষতি করতে চায় তাহলে আমরা ফরিদপুর বাসী কঠোর আন্দোলনে যাবো। শামিম আহমেদ এর পাশাপাশি ফরিদপুর সিটি পেজ এবং ঘুরিফিরি ফরিদপুর টিমসহ অন্যান্য সংগঠনও এই আন্দোলনে যুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top