সকল মেনু

চার্জসিটভুক্ত আসামিকে ধরে এনে ছেড়ে দেবার অভিযোগ

Chandpur_District_Map_Bangladesh-19শাহ মোহাম্মদ মাকসুদুল আলম, চাঁদপুর: চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মোঃ এরফান কর্তৃক একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার চার্জসিটভুক্ত আসামিকে ধরে এনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেবার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই আসামির বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা রয়েছে। বিষয়টি চাঁদপুরের সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করলেও অভিযুক্ত ওসির বিরুদ্ধে তার অপকর্মের জন্য কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং দায় এড়ানোর জন্য ঘটনার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলামকে প্রধান করে বিষয়টি তদন্তের জন্য এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এখনো কাজ শুরুই করেনি।

জানা যায়, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি ইউনিয়নের নয়াকান্দি এলাকায় বিগত ২০১২ সালের ২৭ আগষ্ট বিকেলে একদল সন্ত্রাসী ওই এলাকার মোস্তফা গাজীর ছেলে শাহ আলম গাজী (২৫)’র উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালায়। শাহ আলমকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাতে এসে তার চাচাসহ এলাকার বেশ কয়েকজন আহত হয়। সন্ত্রাসী হামলায় শাহআলম গুরুতর আহত হলে তাকে পর্যায়ক্রমে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সবশেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরদিন শাহআলমের চাচা মোঃ মুক্তার হোসেন গাজী (৩৮) বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় মোট ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় যাদের আসামি বা বিবাদী করা হয়েছে তারা হচ্ছে ঃ উত্তর সরদার কান্দির মৃত শরীফউদ্দীনের ছেলে সহিদুল্লাহ (২৮), মজিবুর রহমানের ছেলে শাহজালাল, জমশেদ, মোছলেম, হাফিজ বেপারীর ছেলে বোরহান বেপারী (২৭), নূরুল ইসলামের ছেলে মহসিন (৩০), কালাই বেপারীর ছেলে ফারুক বেপারী (৩৮), ফজলে আলীর ছেলে দ্বীন ইসলাম (৩২), ডাঃ আব্দুল মান্নানের ছেলে এমরান এবং নয়াকান্দির নূর হোসেন মিজির ছেলে মোঃ বোরহান মিজি (২৫)। মামলা দায়েরের চার দিনের মাথায় ৩১ আগষ্ট ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহ আলম মারা যায়। ফলে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। মামলার আসামিদের মধ্যে একমাত্র জামশেদ ছাড়া বাদবাকি সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিলেও জামশেদ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেরিয়েছে। তদন্ত শেষে মতলব উত্তর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম চলতি বছরের গত ৩০ এপ্রিল এজাহারভুক্ত চারজন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন চারজনকে আসামি হিসেবে সংযোজন করে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। অভিযোগপত্র থেকে এজাহারভুক্ত যে চারজনকে বাদ দেয়া হয়েছে তারা হচ্ছে ঃ শাহজালাল, মোছলেম, মহসীন ও বোরহান। আর যে চারজনকে নতুন করে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তারা হচ্ছে ঃ ইব্রাহিম, লুৎফুর রহমান, রুবেল ও রাকিব। চার্জসিট দাখিলের পর আদালত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও পুলিশ অজ্ঞাত কারণে তাদের ধরা থেকে বিরত থাকে। ফলে আসামিরা এলাকায় দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াতে থাকে এবং মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য অব্যাহতবাবে হুমকি দিতে থাকে। এই অবস্থার ভেতর গত ২৭ আগষ্ট বিকেলে ওই মামলার কথিত পলাতক আসামি জামশেদ ফরাজিকান্দি ওয়েসীয়া মাদ্রাসা এলাকায় একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায়। খবর পেয়ে মতলব উত্তর থানার এ এস আই মোবারক হোসেন ঘটনাস্থলে যেয়ে জামশেদকে ধরে নিয়ে আসে। থানায় আনার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় জামশেদ শাহআলম হত্যা মামলারও চার্জসিটভুক্ত আসামি। এটা জানার পরও তাকে ৩/৪ ঘন্টা আটকে রাখার পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাতেই জামশেদকে ছেড়ে দেয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মোঃ এরফান। বিষয়টি এক কান দু’কান করে স্থানীয় সাংবাদিকদের কানে এসে পৌঁছার পর তারা এ বিষয়ে খোঁজ থবর নিয়ে ঘটনা সত্যতা জানতে পারে। ওসিকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি ঠায় অস্বীকার করেন। পরে পুলিশ সুপারের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনিও বিষয়টি জানতে পেরে ওসিকে জিজ্ঞেস করেছেন। ওসি প্রথম অবস্থায় এসপি’র কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও পরে জানিয়েছে, রাজনৈতিক চাপে সে আসামি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রধান করে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এদিকে ওই বিষয়ে মতলব উত্তর থানার এ এস আই মোবারক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বার বার বলতে থাকেন ওসির সাথে যোগাযোগ করতে।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মোঃ এরফানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির নানা অভিযোগ বহু আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। কথায় কথায় স্থানীয় সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের দোহাই দিয়ে তিনি অবলীলায় নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ উপজেলার অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যানরা তার উপর ক্ষুব্দ। মাস তিন আগে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় এমপি’র উপস্থিতিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে তার প্রচন্ড বাক-বিতন্ডা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানরাও উপজেলা চেয়ারম্যানকে সমর্থন করে। শেষে এক পর্যায়ে সমন্বয় কমিটির সভা তড়িঘড়ি করে শেষ করে দেয়া হয়। বিষয়টি গত জুলাই মাসের জেলা আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায়ও আলোচিত হয়েছে।

বছর খানেক আগে খান মোহাম্মদ এরফান মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ক্লোজড করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক তদ্বির ও চাপে তাকে আবার অন্য থানায় পোষ্টিং দিতে হয়। ক্ষমতাসীন দলের কিছু কিছু নেতা ওসিকে শেল্টার দিচ্ছে বলে জানা যায়। এছাড়া ওসি এরফান ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যের আতœীয় বলে বহুল প্রচারিত রয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার বিশাল বিত্ত ও বৈভব। এসব অভিযোগ সম্পর্কে খান মোঃ এরফানের বক্তব্য, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত একটি অভিযোগও সত্য নয়।

চট্রগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উল্লেখিত বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য চাঁদপুর -২ আসনের সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভার্শাল রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি হয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে রয়েছেন অথবা মিটিংয়ে আছেন বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top