সকল মেনু

ঝর্ণা অবশেষে চাকরি পেলেন

 jarna20130828211543রাজশাহী প্রতিনিধি, ২৯ আগস্ট : অবশেষে চাকরি পেলেন সাহসী নারী ঝর্ণা বেগম।  রাজশাহী পুলিশ লাইনস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজে পিয়ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি মাসিক তিন হাজার টাকা বেতন পাবেন। গতকাল বুধবার ভোরে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফিরেই এই নতুন চাকরির খবর পান ঝর্ণা। রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আবু সালেহ গোলাম মাহমুদ তাকে এই খবর দেন। একই সঙ্গে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে তাকে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা সম্মানী দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে নতুন এই চাকরির খবরে সন্তুষ্ট না ঝর্ণা বেগম। তিনি চেয়েছিলেন একটি স্থায়ী সরকারি চাকরি। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে (রাসিক) সাধারণ প্রশাসনিক শাখায় গত এপ্রিল থেকে এমএলএসএস পদে যে চাকরিটি তিনি করছিলেন সেটিও ছিল অস্থায়ী, দৈনিক মজুরিভিত্তিক। আর নতুন চাকরিটিও চুক্তিভিত্তিক। যে কোনো সময় কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই তার চাকরি চলে যেতে পারে।

গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে ঝর্ণাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়। গত মঙ্গলবার ঢাকায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সঙ্গে ঝর্ণা দু`দফা সাক্ষাত্ করার পর রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার ও নগরীর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এসএম মনিরুজ্জামান তাকে পিয়ন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়।

রাজশাহী পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাওলা জানান, কলেজের জনবল কাঠামো অনুযায়ী পিয়নের কোনো পদ শূন্য না থাকায় তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর তাকে চাকরিতে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল রাজশাহী নগরীর শালবাগান মোড়ে শিবির কর্মীদের ভয়াবহ বর্বরতার শিকার হন উপ-শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আর্মড পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম। শিবির কর্মীরা তাকে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে ইট ও হেলমেট দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেয় এবং সঙ্গে থাকা পিস্তলটি কেড়ে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশের অন্য সদস্যরা যখন পালিয়ে বাঁচলেও মুমূর্ষু অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকেন এসআই জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তাকে উদ্ধারে দুই সংবাদকর্মীর আহ্বানে ছুটে যান ঝর্ণা বেগম।

পরম মমতায় গুরুতর আহত পিতৃতুল্য পুলিশ কর্মকর্তার রক্তাক্ত মাথা নিজের সম্ভ্রম ঢাকতে ব্যবহূত ওড়না দিয়ে বেঁধে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ দৃশ্য বিভিন্ন বেসরকারি টিভিতে প্রচারিত হওয়ায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

এই সাহসী ভূমিকার জন্য রাসিক মেয়র, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, পুলিশের আইজি, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঝর্ণা বেগমকে সম্মাননা, স্মারকপত্র ও ফুলেল সংবর্ধনা দেন। সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে তৎকালীন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ঝর্ণাকে রাসিকের সাধারণ প্রশাসনিক শাখার এমএলএসএস পদে দৈনিক মজুরিভিত্তিক চাকরি দেন। ওই পদে গত ২২ এপ্রিল থেকে এখনও চাকরি করছেন।

জানা গেছে, ঝর্ণা বেগম রাজশাহী মহানগরীর আরডিএ মার্কেটের একটি বিউটি পার্লারে সামান্য বেতনে কাজ করতেন। তার ছেলে নীরব (১২) ও মেয়ে সানজিদাকে (৫) নিয়ে শালবাগান এলাকায় একটি ভাড়া কক্ষে চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে কোনো মতে খেয়ে-না খেয়ে জীবন যাপন করছিলেন।  তার (ঝর্ণা) স্বামী শাহীন ঢাকার মিরপুরে একটি সিল্কের কারখানায় ব্লক মাস্টারের কাজ করেন। পাঁচ বছর ধরে ঝর্ণার সাথে স্বামীর যোগাযোগ নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে ঝর্ণা বেগম শুনেছেন, সেখানে স্বামী শাহীন দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। ঝর্ণা বেগম জানান, গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত নতুন চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পাননি। নতুন চাকরির খবরে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

তিনি একটি স্থায়ী সরকারি চাকরির আশা করেছিলেন।

ঝর্ণা বেগমের প্রশ্ন, সরকার কি তার এই সামান্য আবদার রাখবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top