সকল মেনু

যে ৬ কাজ করলে নাজাতের সুপারিশ মিলবে

হটনিউজ ডেস্ক:

আখিরাতের দিন সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আখিরাতের ওই কঠিন সময়ে মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা হবে সুপারিশ। সবাই নিজের মুক্তির জন্য সব নবী রাসুলের দারে দারে ঘুরবেন। কিন্তু কেউ সে সময় আমাদের জন্য সুপারিশ করবে না। একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী হয়রত মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন। যে সুপারিশে মিলবে নাজাত।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের জন্য ৬ টি কাজের নসিহত পেশ করেছেন। যে নসিহতগুলো মনে চললে কেয়ামতের কঠিন সময়ে সুপারিশ লাভ করে নাজাত পাবেন মুমিন।

১. কালেমার একনিষ্ঠ স্বীকৃতি

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে ধন্য হবে ওই ব্যক্তি, যে আন্তরিকভাবে বলবে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ (বুখারি)

২. কুরআন তেলাওয়াত

হজরত আবু উমামা বাহেলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন- ‘তোমরা কুরআন পড়। কেননা কুরআন কেয়ামতের দিন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হবে।’ (মুসলিম)

৩. রোজা পালন

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রোজা এবং কুরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে প্রভু! আমি তাকে দিনের বেলায় খাদ্য ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণে বিরত রেখেছি। অতএব আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। তারপর তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

৪. আজানের পর দরূদ ও দোয়া

হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনে বলবে-
وَ اَنَا اَشْهَدُ اَنْ لَا اِلهَ اِلَّا اللهُ – وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ – وَ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَ رَسُوْلُهُ – رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا – وَ بِالْاِسْلَامِ دِيْنَا – وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلَا
উচ্চারণ : ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, রাদিতু বিল্লাহি রাব্বান, ওয়া বিল ইসলামি দিনান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসুলান’ আল্লাহ তাআলা তার গোনাহ মাফ করে দেন।’ (তিরমিজি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)

অন্য হাদিসে প্রিয়নবী হয়রত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজানের পর প্রচলিত দোয়াটি পাঠ করবে, তার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুপারিশ করবেন। অথচ অনেকেই আজান শুনে ঠিকই; অলসত বা খেয়ালের ভুলে আজানের উত্তর দেয়া না আবার দরূদ এবং দোয়াওপড়ে না।

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে বলে-
اَللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ – وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَة – اتِ مُحَمَّدَانِ الْوَاسِلَةَ وَ الْفَضِيْلَةَ – وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَانِ الَّذِىْ وَعَدْتَه
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াস-সালাতিল কায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবআছহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আদ্তাহ’ তার জন্য কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত ওয়াজিব হবে।’ (তিরমিজি, বুখারি, ইবনে মাজাহ)

৫. ধৈর্যধারণ ও মদিনায় মৃত্যু

ঐতিহাসিক হাররার সময়ের ঘটনা। হজরত আবু সাঈদ মাওলা আল মাহরি বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এসে মদিনা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ চান। তিনি কারণ জানান যে, মদিনার আসবাবপত্র ও পণ্যের দাম বেশি আর তার সন্তান-সন্তুতির সংখ্যাও বেশি। আর বললেন- মদিনার এ দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতাও তার নেই।

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আফসোস! তোমাকে আমি এ পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি – যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যধারণ করে আর সেখানেই মৃত্যুবরণ করে কেয়ামতের দিন আমি তার জন্য সুপারিশকারী বা সাক্ষী হব যদি সে মুসলিম হয়।’ (মুসলিম)

৬. নফল নামাজ ও বেশি সেজদা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার খাদেমকে লক্ষ্য করে যে সব কথা বলতেন সেগুলোর মধ্যে একটি কথা হল-
‘তোমার কি কোনো প্রয়োজন/হাজত আছে? একদিন তিনি তার খাদেমকে এ কথাটি বললে-

খাদেম বলল- ’হে আল্লাহর রাসুল! আমার একটি প্রয়োজন বা সমস্যা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতে চান- তোমার কী সমস্যা/প্রয়োজন?
খাদেম বলল- ‘আপনি কেয়ামতের দিন আমার জন্য সুপারিশ করবেন।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- কে তোমাকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জানাল?
খাদেম বলল- আমার প্রতিপালক (আল্লাহ)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘এটাই যদি তোমার চাওয়া হয়, তবে অধিক পরিমাণে সেজদা করা তথা বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আমাকে (এ ব্যাপারে) সাহায্য কর।’ (মুসনাদ আহমদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের কঠিন মুহূর্তে উল্লেখিত ৬ আমলের মাধ্যমে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top