সকল মেনু

পেঁয়াজ এখন গলার কাঁটা

সাড়ে তিন মাস পর পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। সরকার অনুমতি দিলে আগামী ২ জানুয়ারি থেকে সেই পেঁয়াজ দেশে আসতে শুরু করবে। কিন্তু ভারত এমন সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল যখন বাজারে দামে ধস নামায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানীকৃত বিপুল পেঁয়াজ জমে আছে; দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম প্রায়ই ‘নাগালের’ মধ্যে চলে এসেছে। একই সঙ্গে আগামী মাস থেকে পুরোদমে নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এখনো কিছু আসছে।

এমন সময়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে ব্যবসায়ীরা দেউলিয়া হবেন; কৃষকরাও ন্যায্য দাম পাবেন না মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তবে সন্দেহ নেই ক্রেতারা আরো কম দামে পেঁয়াজ খেতে পারবেন। কারণ ভারত থেকে পেঁয়াজ দেশে এলেই পাইকারিতে দাম ২০ টাকায় চলে আসবে।

পেঁয়াজ আমদানিকারক চট্টগ্রামের মনজুর মোরশেদ কালের কণ্ঠকে বলছেন, ‘আমি মিয়ানমার থেকে সমুদ্রপথে ছয় কনটেইনার পেঁয়াজ ৪৮ টাকায় কিনে এনে ৩০ টাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকেই বিক্রি করে দিয়েছি। সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে আমি নতুন করে ঋণপত্র খোলার সাহস পাইনি। এর মধ্যেই শুনলাম ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা জানুয়ারি থেকে ভারতের পেঁয়াজ আনব কি না?’

গত ২৮ ডিসেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আনলে বন্দরে যাঁদের পেঁয়াজ আছে তাঁরা আর বন্দর থেকে ছাড় নেবেন না। আসার পথে থাকা পেঁয়াজগুলোর আমদানিকারক দেউলিয়া হবেন। এ রকম হতে দিলে সংকট সামাল দিতে আর কোনো ব্যবসায়ী কি সরকারের ডাকে সাড়া দেবেন? বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আনবেন?’

জানা গেছে, ঘাটতি মেটাতে আমদানীকৃত পেঁয়াজ আনতে ভারতের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল বাংলাদেশ। আমদানিতে এই একক নির্ভরশীলতার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ পেঁয়াজ নিয়ে সংকটে পড়ছে; গত দুই বছর তা প্রকট আকার ধারণ করেছিল। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট এবং মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ভারত হঠাৎ করেই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর পরদিন থেকেই দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। তবে এবার পেঁয়াজের দাম বেশ চড়েনি। কারণ সরকার দ্রুত বেসরকারি আমদানিকারক এবং বড় শিল্প গ্রুপগুলোকে দিয়ে দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। এতে বাজার যেভাবে চড়ে যাওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। ভারতের বদলে ইউরোপ-আফ্রিকা-মধ্যপ্রাচ্যের ১৫ দেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে পেঁয়াজ আসতে থাকায় পেঁয়াজের বাজার প্রায় নিয়ন্ত্রণেই ছিল। সর্বশেষ একসঙ্গে এত বেশি পেঁয়াজ আসায় দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দামে ধস নামে। কেনা দামের চেয়ে বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। এই অবস্থায় আমদানি করে অনেকেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকেই পেঁয়াজ সরবরাহ নেননি। এমন অনেক পেঁয়াজ নিলামে তুলতে বাধ্য হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর বিকল্প ১৬টি দেশ থেকে দেড় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এরই মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন পেঁয়াজ ছাড়ের জন্য অনুমতি নেন। এর মধ্যে অনেক পেঁয়াজ ছাড় হয়েছে; বাকিগুলো আটকা পড়েছে বন্দর ইয়ার্ডে।

বন্দর থেকে পেঁয়াজ ছাড় না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পেঁয়াজ আমদানিকারক ওকেএম ট্রেডিংয়ের এমডি অসিয়র রহমান বলছেন, মূলত কেনা দামের চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ কমে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এত লস দিয়ে বিক্রির আগ্রহ না থাকায় বন্দর থেকে ছাড় নিচ্ছেন না অনেকে। আবার পাকিস্তান ও মিসর থেকে আসা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট পড়েছে; এ জন্য সেগুলোও অনেকেই গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছেন না।

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে এলে দেশের আড়তে কেজি ২০ টাকার মতো হবে। সুতরাং বিকল্প দেশের পেঁয়াজ প্রতিযোগিতায় পেরে উঠবে না। সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে যাঁরা আমদানি করেছেন অন্তত সেগুলো বিক্রি করে দেওয়ার একটা সুযোগ অবশ্যই সরকারের দেওয়া উচিত।’ এ ছাড়া গত কয়েক বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিয়ন্ত্রিতভাবেই করার দাবি অনেক ব্যবসায়ীর।

এদিকে স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আসার খবরে খাতুনগঞ্জের বাজারে এখনো প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ চট্টগ্রামের আড়তে আসতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। বাজারে তুরস্কের ছোট জাতের পেঁয়াজ ছাড়া সব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। আর তুরস্কের ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আড়তে ৪৫ টাকা দরে।

স্থলবন্দর দিয়ে কবে নাগাদ পেঁয়াজ আসবে জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম বলছেন, নতুন করে আমদানি অনুমতিপত্র নিয়ে ঋণপত্র খুলে পেঁয়াজ আসতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে আগের অনুমতিপত্র নেওয়া এবং ঋণপত্র খোলা অনেকেরই পেঁয়াজ দেশে পৌঁছবে ২ জানুয়ারি থেকে।

এসব পেঁয়াজ কত দাম হবে উত্তরে তিনি বলছেন, ভারতের পেঁয়াজের তো নির্দিষ্ট দর থাকে না। যে যেমন পারে সেই দামে কেনে। তবে স্থলবন্দরে সেই পেঁয়াজ কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top