সকল মেনু

লুঙ্গির অভাবে বৌয়ের ওড়না পরেন স্বামী

স্ত্রী ভিক্ষা করে মানুষের বাসার পান্তা ভাত এনে সেই ভাত রোদে শুকিয়ে চালের মতো শক্ত হলে তা আবার রান্না করে খেয়ে জীবন বাঁচান তারা। যাদের ঘরে ভাতের অভাব, তাদের নতুন পোশাকের প্রশ্নই আসেনা।

তাই লুঙ্গির অভাবে বৌয়ের ওড়না পরেন স্বামী। তাও মানুষের পুরান কাপড়। এভাবেই জীবন চলছে পটুয়াখালী শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রথম লেন বোহালগাছিয়া এলাকার পঁচানব্বই উর্ধ্বো সুলতান ডাক্তার ও সত্তর উর্ধ্বো সকিনা বেগম ভিক্ষুক দম্পতির।
সদর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকার বাসিন্দা মৃত গ্রাম ডাক্তার ইবরাহীম আকনের এক ছেলে মোছলেম ডাক্তার।

মোছলেম ডাক্তারের একমাত্র ছেলে সুলতান। মোছলেম ডাক্তার এক পালের নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
পারিবারিকভাবে মোছলেম ডাক্তারের ছেলে সুলতান ও একই এলাকার বাসিন্দা ডাক্তার নূর মোহাম্মদের মেয়ে সকিনা বেগমের বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘর আলো করে পৃথিবীতে আসে দুই ছেলে মোস্তফা ও মোশাররফ।

বৃদ্ধ সুলতান ডাক্তার বলেন, করোনার কারণে তিন মাস ঘর থেকে নামতে পারি নাই। করোনার মধ্যে আল্লাহ চালাইছে চলছি। মানুষ কিছু দিয়েছে তা দিয়ে চলছি। এখন মানুষের কাছে ভিক্ষার জন্য গেলে দুই টাকা দিলে এক টাকা ফেরত চায়। কাজ করতে পারি না কিন্তু প্রতিদিন ৪০ টাকার ওষুধ খাওয়া লাগে। ওষুধ না খেলে বিছানা থেকে ওঠা দায়। বৌরে খেটে খাওয়ানোর কথা ছিলো আমার কিন্তু এখন বৌ আমাকে ভিক্ষা করে খাওয়ায়। ’

তিনি বলেন, দুই বেলা ভাত খাওয়ার টাকা নাই তার মধ্যে লুঙ্গি কিনমু কেমনে? আমার পরার মতো লুঙ্গি নাই। পুরান যে লুঙ্গি আছে তাও সব জায়গা দিয়ে ছেড়া। তাই ঘরে বৌয়ের ওড়না পড়ে থাকি। আমরা যে ঘরে থাকি সে বাসা মুন্সিবাড়ির জব্বার দারোগার। বাসায় ১০০ টাকার বিনিময়ে থাকি। তিনি অনেক ভালো মানুষ তাই আমাদের কষ্ট দেখে এখানে থাকতে দিয়েছেন। ঘরে কোনো বিদ্যুৎ নাই। বৃষ্টির দিনেও পানি পড়ে।

সুলতান যোগ করে বলেন, দুটি ছেলে আছে আমার। ওরা ঢাকায় রিকশা চালায়। তবে যতটুকু জানি, রিকশা চালিয়ে ওরা নিজেদেরই পরিবারই ঠিকমতো চালাতে পারে না, আমাদের দেখবে কি!
তার স্ত্রী সকিনা বেগম বলেন, ‘আমরা ভিক্ষা করে খাই। বয়সের সময় স্বামী বড় গাড়ি চালাইছে। তখন সুখের দিন ছিলো। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না। আমি ভিক্ষা করে যা পাই তা দিয়ে ওষুধ কিনতে চলে যায়। সরকারি কোনো সহায়তা পাই না। বয়স্ক ভাতার জন্য মেম্বার (পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন) অনেক আগে নাম নিয়েছে। কিন্তু এখনও বয়স্ক ভাতার কোনো খবর নেই।

বর্তমানে কেমন কাটছে দিন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের বাসা থেকে পানি ভাত ভিক্ষা করে এনে সেই ভাত শুকাই। শুকানোর পর ভাত যখন চাল হয় তখন সেই চাল আবার রান্না করে আমরা খাই। মানুষের বাসার একদিনের তরকারি না ফালাইয়া আমাদের দেয় আমরা তা জ্বাল দিয়ে লাল হলে সেটা খাই।

এমন খাবার কেন খান প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাবা চাল ও তরকারি কেনার টাকা নাই। ভিক্ষা করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কেরসিন, বুড়া-বুড়ির ওষুধ আর ঘর ভাড়ার পিছনে চলে যায়। সরকার থেকে আমাদের যদি একটু ভাতার ব্যবস্থা করতো। জীবনের শেষ সময়টা যদি একটু ভালোভাবে খেতে পারতাম, চলতে পারতাম।

এ বিষয়ে কথা বলতে পটুয়াখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উদ্দিন ওরফে কসাই নিজামের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top