সকল মেনু

বাগদাদ গণহত্যায় দোষীদের ক্ষমা ঘোষণা ট্রাম্পের

হটনিউজ ডেস্ক:

বিভিন্ন অপরাধে দোষী ১৫ জনকে ক্ষমা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাদের মধ্যে ২০০৭ সালে বাগদাদে গণহত্যায় সাজাপ্রাপ্ত মার্কিন সরকারের চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা বাহিনীর ৪ সদস্যও রয়েছে। ওই হামলায় বহু সাধারণ মানুষ হতাহত হয়। এর জেরে যুদ্ধে ক্ষেত্রে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

মঙ্গলবার ক্ষমা পাওয়াদের মধ্যে জর্জ পাপাদোপল্লোস রয়েছেন। তিনি ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের সহযোগীর দায়িত্ব পালন করেন। তদন্ত কমিটির কাছে নির্বাচনে রুশ সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন তিনি। এ ছাড়া সাবেক রিপাবলিকান দুই আইনপ্রণেতাও ক্ষমা পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন।

রাশিয়ার ধনকুবের জার্মান খানের ডাচ জামাতা ৩৬ বছর বয়সী অ্যালেক্স ভ্যান ডার জাওয়ানকেও ক্ষমা ঘোষণা করেছেন মার্কিন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২৯১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সময় রুশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মার্কিন স্পেশাল কনসাল রবার্ট মুয়েলারের তদন্ত কমিটিকে মিথ্যে বলেছিলেন অ্যালেক্স ভ্যান ডার জাওয়ান। এ কারণে তার ৩০ দিনের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা হয়।

‘ব্ল্যাকওয়াটার গার্ডের সদস্যদের ক্ষমা বিদ্বেষপূর্ণ’

বাগদাদ গণহত্যায় দোষীদের দায়মুক্তির জন্য ব্ল্যাকওয়াটার গার্ডের সমর্থকরা ব্যাপক তদবির চালায়। তাদের দাবি, তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দোষের চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা কারাদণ্ড ভোগ করছে।

গণহত্যায় দোষীরা ইরাকে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সাঁজোয়া বহরের দায়িত্বে ছিল। দায়িত্ব পালন অবস্থায় একদল নিরস্ত্র ইরাকি সাধারণ নাগরিকের ওপর সরাসরি গুলি চালায় তারা।

এ ঘটনা নিসুর স্কয়ার গণহত্যা নামে আলোচিত। ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বধীন বাহিনী যত হামলা চালিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে নিম্ন পর্যায়ের নৃশংসতা এটি।

ওই হামলায় ১৪ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে কমপক্ষে দুজন শিশু ছিল।

মাসব্যাপী বিচার প্রক্রিয়া চলার পর পল স্লাও, ইভান লিবার্টি, ডাস্টিন হিয়ার এবং নিকোলাস স্লটেনকে ২০১৪ সালে দোষী সাব্যস্ত করেন ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালত।

পরের বছর সাজার শুনানিতে প্রত্যেকে নিজেকে নির্দোষ বলে জোর দাবি জানায়। স্লাও, লিবার্টি এবং হিয়ারকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ফেডারেল কোর্টে আপিল করে তারা। শুনানি শেষে রায় পুনর্বিবেচনা করে নামমাত্র শাস্তি দেওয়া হয়। স্লটেনকে হামলা উসকে দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

পরে ফেডারেল আপিল কোর্ট স্লটেনের ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার কনভিকশন বাতিল করে। পরে বিচার বিভাগ তাকে আরেকটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

সংঘাতপূর্ণ কর্মকাণ্ড এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মার্কিন সেনা বা তাদের ভাড়া করা নিরাপত্তাকর্মীরা কোনো অপরাধ করলে তা ক্ষমা করে দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের তাদের সেই ক্ষমতা বলে ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।

ট্রাম্পের সহযোগী এবং মার্কিন শিক্ষামন্ত্রী বেটসি দেভোসের ভাই এরিক প্রিন্স ব্ল্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা। গণহত্যার পর প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করা হয়।

আমেরিকান সিভিল লিভার্টিজ ইউনিয়নের ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রজেক্টের পরিচালক হিনা শাসমি ট্রাম্পের ক্ষমার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ওই গুলিবর্ষণ ঘটনা বিধ্বস্ত ইরাকের চিত্র, হতাশাজনক এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী কেলেঙ্কারির জন্ম দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লজ্জার। দোষীদের ক্ষমা করে দিয়ে ট্রাম্প ইরাকি ভুক্তভোগীরদের স্মৃতিকে অপমানের পাশাপাশি তার শাসনামলকে আরও কলুষিত করেছেন।

পুলিৎজার পুরষ্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ইন্টারসেপ্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড এ ক্ষমাকে বিদ্বেষপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেছেন।

এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, গণহত্যার খবর প্রকাশ করেন স্লোডেন এবং অ্যাসাঞ্জ। তারা কিন্তু গণহত্যায় জড়িত ছিলেন না। যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তারা যেহেতু ক্ষমা পেয়েছেন এবং দেখার অপেক্ষা স্লোডেন এবং অ্যাসাঞ্জের বিষয়ে ট্রাম্প সাহসী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

অ্যাডওয়ার্ড স্লোডেন যিনি মার্কিন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির কনট্রাক্টর ছিলেন। ২০১৩ সালে সরকারি অতি গোপনীয় নজরদারির তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের কারাগারে আটক। যুক্তরাষ্ট্র তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়। বর্তমানে ব্রিটিশ আদালতে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যার্পণ মামলার শুনানি চলছে।

‘গুরুতর অপরাধ’

৩৩ বছর বয়সী পাপাদোপল্লোস ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের উপদেষ্টা ছিলেন।

রুশ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয় এফবিআইকে মিথ্যা তথ্য দেন তিনি। ২০১৭ সালে অপরাধ স্বীকার করেন পাপাদোপল্লোস। তার এ মিথ্যা সাক্ষীর কারণে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ তদন্ত প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে বিশেষ কনসাল রবার্ট মুয়েলারের তদন্ত দল তার কারাদণ্ডের সুপারিশ করে।

তার ১৪ দিন কারাদণ্ড হয়। ১২ দিন সাজা খেটে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান তিনি। রাখা হয় ১২ মাসের পর্যবেক্ষণে। হোয়াইট হাউস জানায় পাপাদোপল্লোস মারপ্যাচের শিকার। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ‍মুয়েলারের তদন্তকে অদ্ভুত জিনিস খোঁজার সঙ্গে তুলনা করে প্রায়ই সমালোচনা করতেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউস জানায়, মুয়েলারের তদন্ত দলের কারণে অনেকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে। তাদের ক্ষমা করে দেয়ার মাধ্যমে ভুল শোধরানো হয়েছে।

গত মাসে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিশেল ফ্লিনকে ক্ষমা করেন ট্রাম্প। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ তদন্তে এফবিআইকে মিথ্য বলেন তিনি। দুটি অপরাধে তাকে দোষী করা হয়। ফ্লিনকে ক্ষমা করে দেয়ায় ডেমোক্র্যাটসহ বিভিন্ন মহলের নিন্দার মুখে পড়েন ট্রাম্প।

ক্ষমা পাওয়া সাবেক আইনপ্রণেতারা

নিউইয়র্কের প্রতিনিধি ক্রিস কোলিন্সসহ দুই রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও ক্ষমা পেয়েছেন।

৭০ বছর বয়সী কোলিন্স প্রথম কংগ্রেস সদস্য হিসেবে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পক্ষে সমর্থন জানান। তিনি প্রেসিডেন্টের কট্টর সমর্থকও। ২০১৮ সালে নিউইয়র্ক থেকে পুনরায় নির্বাচিত হন। পরের বছর পদত্যাগ করেন।

চ্যারিটেবল ফান্ডের অর্থ অপব্যবহারের কারণে ২০১৮ সালে অভিযুক্ত হন সাবেক রিপাবলিকান প্রতিনিধি স্টিভ স্টোকম্যান। ৬৪ বছর বয়সী সাবেক এ রিপাবলিকান নেতারও কারাদণ্ড মওকুফ করেছেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউস জানায়, স্টিভকে দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের মধ্যে তিনি ২ বছরের বেশি সাজা ভোগ করেছেন। ১০ লাখ মার্কিন ডলার ফেরত দেওয়ার শর্তে তিনি এখন জামিনে রয়েছেন।

গাঁজা ব্যবসায় জড়িত থাকার অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ক্রিস্টাল মুনোজের বাকি সাজা মওকুফ করে দিয়েছেন ট্রাম্প। অ্যালিস জনসনের সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকবছর ফোর্ট ওয়ার্থের কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে জামিন রয়েছেন তিনিও। ২০১৮ সালে রিয়েলিটি টিভি তারকা কিম কার্দিশিয়ান ওয়েস্টের তদবিরে মুক্তি পান অ্যালিস জনসন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top