সকল মেনু

এএসপি আনিসুল হত্যায় চিকিৎসক গ্রেপ্তার

হটনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিম শিপন হত্যার ঘটনায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামুনকে আজ মঙ্গলবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, যে চিকিৎসকরা প্রায় নিয়মিত মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী পাঠাতেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলকেও কৌশলে বিতাড়িত করে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ওই হাসপাতালে চিকিৎসার নামে অনৈতিক বাণিজ্য করা হয়—তা জেনেশুনেও তাঁকে সেখানে পাঠানো হয়। ঘটনার দিন মাইন্ড এইড হাসপাতালের ম্যানেজার আরিফকে ফোন করে ডা. মামুন পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন।

এরই মধ্যে আনিসুলের মৃত্যুর ঘটনায় চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্যে মাইন্ড এইডের অপকর্মে ডা. মামুনের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে আসে। এ ছাড়া আনিসুলের ব্যাপারে হাসপাতালটির ম্যানেজারের সঙ্গে একাধিকবার সরকারি হাসপাতালের এই চিকিৎসকের কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে রাজধানীর আদাবর থানায় আনিসুল করিম শিপনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বাদী বলেন, ‘আমার ছেলে আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। আমার ছেলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) হিসেবে কর্মরত ছিল। তিন-চার দিন ধরে তাকে চুপচাপ হয়ে যেতে দেখে পরিবারের সবার মতামত অনুযায়ী চিকিৎসা করানোর জন্য গত ৯ নভেম্বর প্রথমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাই। পরে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য একই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

‘এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আরিফ মাহমুদ জয়, রেদোয়ান সাব্বির ও ডা. নুসরাত ফারজানা আনিসুল করিমকে হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া করতে থাকেন। ওই সময় আমার ছেলে হাসপাতালের সব স্টাফের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করে। হাসপাতালের নিচতলায় একটি রুমে বসে হালকা খাবার খায়। খাবার খাওয়ার পর আমার ছেলে ওয়াশরুমে যেতে চায়। বেলা পৌনে ১২টার দিকে আরিফ মাহমুদ জয় আমার ছেলেকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যান। তখন আমার মেয়ে উম্মে সালমা আমার ছেলের সঙ্গে যেতে চাইলে আসামি আরিফ মাহমুদ জয় ও রেদোয়ান সাব্বির বাধা দেন এবং কলাপসিবল গেট আটকে দেন। তখন আমি, আমার ছেলে রেজাউল করিম ও মেয়ে ডা. উম্মে সালমা (সাথী) নিচতলায় ভর্তি প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলাম। এরপর এজাহারে উল্লেখিত আসামিসহ আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আমার ছেলে আনিসুল করিমকে চিকিৎসার নামে দোতলার একটি অবজারভেশন রুমে (বিশেষভাবে তৈরি কক্ষ) নিয়ে যান।’

এজাহারে আরো বলা হয়, ‘আসামিরা আমার ছেলেকে চিকিৎসা করার অজুহাতে অবজারভেশন রুমে মারতে মারতে নিয়ে যান। তাঁকে ওই রুমের ফ্লোরে জোরপূর্বক উপুড় করে শুইয়ে তিন থেকে চারজন হাঁটু দিয়ে পিঠের ওপর চেপে বসেন, কয়েকজন আমার ছেলেকে পিঠ মোড়া করে ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধেন। কয়েকজন আসামি কনুই দিয়ে আমার ছেলের ঘাড়ের পেছনে ও মাথায় আঘাত করেন। একজন মাথার ওপরে চেপে বসেন এবং আসামিরা সবাই মিলে আমার ছেলের পিঠ, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মেরে আঘাত করেন।’

এজাহারে আরো বলা হয়, ‘এরপর দুপুর ১২টার দিকে আমার ছেলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। যা হাসপাতালে স্থাপিত সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান। নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর আসামি আরিফ মাহমুদ জয় নিচে এসে আমাদের ইশারায় উপরে যাওয়ার জন্য ডাক দেন। আমি আমার ছেলে ও মেয়েসহ অবজারভেশন রুমে গিয়ে আমার ছেলেকে ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পাই। এরপর জরুরি ভিত্তিতে আমার ছেলেকে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা করে আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।’

এজাহারে আরো বলা হয়, ‘আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার নামে অর্থ উপার্জনের একটি অনুমোদনহীন অবৈধ এবং অসৎ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। এজাহারের ১১ হতে ১৫ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত আসামিদের ব্যবস্থাপনায়, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্ররোচনায় ১ থেকে ১০ নম্বর ক্রমিকে বর্ণিত আসামিরাসহ তাদের কয়েকজন অজ্ঞাতনামা সহযোগী আসামিরা পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে অবজারভেশন রুমে নিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে মৃত্যু ঘটায়।’

মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিরা হলেন মাইন্ড এইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন শেফ মো. মাসুদ, ওয়ার্ড বয় জোবায়ের হোসেন, ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হাসান, ওয়ার্ড বয় মো. তানিম মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, মো. লিটন আহাম্মদ ও মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ। এ ছাড়া এ মামলায় চার আসামি পলাতক রয়েছেন। তাঁরা হলেন মুহাম্মাদ নিয়াজ মোর্শেদ, মো. সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন ও মোছা. ফাতেমা খাতুন ময়না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top