সকল মেনু

লালমনিরহাটে যুবককে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা

হটনিউজ ডেস্ক:

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় এক যুবককে পিটিয়ে ও পরে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের বুড়িমারী স্থলবন্দর (বাঁশকল) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম শহীদুল নবী জুয়েল (৪২)। তাঁর বাড়ি রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়া এলাকায়। তিনি আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। একসময় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।

তবে কী কারণে এই যুবককে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। যদিও স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনছে।

রাত সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবু জাফরসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তখন জেলা প্রশাসক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কী কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারপর এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে।’

তবে ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করায় এবং প্রশাসনের সক্রিয় চেষ্টায় বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত একজনকে পুড়িয়ে মারার খবর নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ ঘটনায় অপর এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে উত্তেজিত জনতার কারণে আমরা এখনো ঘটনাস্থলে ঢুকতে পারিনি।’

কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘এটা পরে জানানো যাবে।’

স্থানীয়দের কেউ কেউ দাবি করে, আজ বিকেলে আসরের নামাজের পর ওই যুবক মোটরসাইকেলে এসে বুড়িমারী জামে মসজিদে ঢুকে পড়েন। তিনি সেখানে কোরআন অবমাননা করেন। তবে কীভাবে ওই যুবক কোরআন অবমাননা করেন সে বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনি।

মুহূর্তের মধ্যে সেই খবর বাইরে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ওই ব্যক্তিকে বাঁচাতে এ সময় বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। একপর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদে রাখা ওই যুবককে টেনে-হিঁচড়ে বাইরে এনে পেটানো শুরু করে উত্তেজিত জনতা। একপর্যায়ে বিজিবির চেকপোস্ট (বাঁশকল) এলাকায় ওই ব্যক্তির শরীরে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় তার মোটরসাইকেলটিতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন নাহার, পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মোহন্ত। তাঁরা উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে তাঁরাও সেখানে আটকে পড়েন।

এদিকে, এ ঘটনায় রংপুর নগরীর মুন্সীপাড়া এলাকার সুলতান জোবায়ের আব্বাস (৫১) নামের আহত এক ব্যক্তিকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহত যুবক শরীফকে (২২) পাঠানো হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

চিকিৎসাধীন সুলতান জোবায়ের আব্বাস নিজেকে দলিল লেখক দাবি করে হাসপাতালে আজ রাতে গণমাধ্যমকে জানান, তিনি তাঁর এক মক্কেলের সঙ্গে দেখা করতে এসে বুড়িমারীতে উত্তেজিত জনতার মারধরের শিকার হন। তাঁর সঙ্গে নিহত ব্যক্তির কোনো পরিচয় নেই।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের একজন চিকিৎসক আজ রাতে জানান, আহত দুই ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত শরীফকে রংপুরে পাঠানো হয়।

এ ঘটনার ফলে বাঁশকল এলাকায় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে উত্তেজিত পুলিশ তাদের সরাতে পারেনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top