সকল মেনু

৪০ ফুট গভীর গর্তে ফেলা হয় ব্রিটিশ দূতকে !

হটনিউজ ডেস্ক:

মধ্য এশিয়া দখলে ব্রিটিশ ও রাশিয়ানদের মধ্যে তখন চলছে শক্তির লড়াই। বুখারা, খিবা, খোকান্ড সে সময় বাণিজ্য পথের গুরুত্বপূর্ণ শহর।

রাশিয়াকে ঠেকাতে বুখারার (বর্তমানে উজবেকিস্তানে অবস্থিত) পাশে থাকার বার্তা দেয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই বার্তা নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ কর্নেল চালর্স স্টোডার্ট। ১৮৩৯ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার দূত হয়ে তিনি গিয়েছিলেন বুখারা।
কূটনীতির বার্তা নিয়েই বুখারার আমিরের কাছে গিয়েছিলেন স্টোডার্ট। কিন্তু আমিরের কাছে এলেও কোনো উপহার নিয়ে যাননি তিনি। এতেই চটে যান সে সময় বুখারার আমির নাসরুল্লা খান। উপহার না নিয়ে যাওয়ার ‘অপরাধে’ স্টোডার্টকে বিষাক্ত পোকা ভর্তি এক গর্তে (পরে নাম হয় দ্য বাগ পিট) ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

বুখারার জিন্দন কারাগারে রয়েছে এই গর্ত প্রায় ৪০ ফুট গভীর। অর্থাৎ তিনতলা বাড়ির সমান এর গভীরতা। দড়ির সাহায্য ছাড়া নামা সম্ভব নয় এখানে। নামলেও বিপদ। কারণ সেই গর্তের ভেতর নানা রকম বিষাক্ত পোকামাকড়, ইঁদুরের বাস।

সেখানেই ফেলে দেওয়া হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্টোডার্টকে। মৃত্যুদণ্ডের আগে প্রায় তিন বছর সেই গর্তের ভেতর নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল তাকে। যদিও কীভাবে ওই পোকামাকড় ভর্তি গর্তের ভেতর বছর তিনেক বেঁচে ছিলেন তিনি, তা আজও বিস্ময়ের। স্টোডার্টের আগেও সেখানে অনেককে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু এত দিন কেউই বাঁচেননি

বুখারা থেকে স্টোডার্টকে উদ্ধার করতে ১৯৪১ সালে সেখানে যান ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন আর্থার কনোলি। প্রথমে তার সঙ্গে ভালই ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু নাসরুল্লা যখন জানতে পারলেন, রানীকে তার লেখা চিঠির জবাব আনেনি কনোলি, তখন তাকেও ওই গর্তে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। স্টোডার্টকে উদ্ধারের পরিবর্তে তার সঙ্গেই যন্ত্রণাময় জীবনের সঙ্গী হতে হয় কনোলিকে।

উজবেকিস্তানের অত্যাচারী শাসক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন নাসরুল্লা খান। ‘কসাই’ বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৮৪২ সালে প্রথম অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধের পর ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্কে উৎসাহ হারান নাসরুল্লা। তখন তিনি স্টোডার্ট ও কনোলির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

দুর্গের সামনে জনসমক্ষে সেই আদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাদের দু’জনকে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। স্টোডার্ট ও কনোলিকে যখন গর্ত থেকে তুলে আনা হয়, তখন তাদের সারা শরীরে ফোঁড়া। আর মুখ-চুল ভর্তি উকুন-সহ নানা পোকায়।

সেই অবস্থাতেই রাস্তার উপর নতজানু হয়ে বসানো হয় তাদের। প্রথমে তরবারি ধড় থেকে স্টোডার্টের মুণ্ডুকে আলাদা করে। তারপর কনোলির গলা কেটে দেওয়া হয়। এরপরই ব্রিটেন জুড়ে শোক পালন করা হয় এই দু’জনের জন্য। স্টোডার্ট ও কনোলির নাম ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটেনে ঘরে ঘরে।

বর্তমানে বুখারার ‘দ্য বাগ পিট’ পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। বুখারার জিন্দন প্রিজনে ইতিহাসের সাক্ষী হতে প্রতি বছর বহু মানুষের সমাগম ঘটে।

সূত্র: আনন্দবাজার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top