সকল মেনু

সিনহাকে পুলিশের চেকপোস্টে গুলি করা হয়নি

হটনিউজ ডেস্ক:

অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে মনে করছেন র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ঘটনার দিন পুলিশের পক্ষ থেকে যে অভিযান চালানো হয়েছিল, সেটিও অবৈধ ছিল।

কারণ, বিধান অনুযায়ী নিউনিফর্ম পরে অভিযান চালানোর কথা; কিন্তু তা করা হয়নি। পাশাপাশি মেজর (অব.) সিনহাকে পুলিশের চেকপোস্টে গুলি করা হয়েছে বলে এতদিন প্রচার করা হলেও সেটি সত্য ছিল না।

তাকে যে চেকপোস্টে গুলি করা হয়েছে, সেটি ছিল আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)। অযাচিতভাবে পুলিশ সেখানে গিয়ে গুলি চালিয়েছে।

আসামিদের রিমান্ড আবেদনে র‌্যাব উল্লেখ করেছে, ঘটনার আগে এবং পরে আসামিদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই, জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ এবং গত কয়েকদিনের তদন্তে মনে হয়েছে, সিনহা হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত।

হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত হওয়ায় গ্রেফতার হওয়া আসামিদের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, র‌্যাব মঙ্গলবার যে তিন আসামিকে (মো. আয়াছ, নুরুল আমিন ও নাজিমুদ্দিন) গ্রেফতার করেছে তাদের বাড়িতে গিয়ে আসামির স্বজনকে দিয়ে অপহরণের মামলা করতে বাধ্য করে টেকনাফ থানা পুলিশ।

ওই তিনজন ছিলেন পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী। সিনহা হত্যার পর পুলিশের সাক্ষী নুরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, হত্যকাণ্ডটি তিনি নিজের চোখে দেখেননি। ঘটনাটি তিনি শোনেনওনি।

কোনো কিছু জিজ্ঞাসা না করেই তাকে সাক্ষী বানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে তার কোনো আলাপই হয়নি। মো. আয়াছ তখন বলেছিলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় সাক্ষী হইনি। আমি সেদিন চেকপোস্টেই যাইনি।’

সোমবার বিকালে এই দুই সাক্ষীসহ অপর সাক্ষী নাজিমুদ্দিনের বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। পরদিন মঙ্গলবার সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

এর আগেরদিন সোমবার মধ্যরাতে ওই তিনজনের বাড়িতে গিয়ে তাণ্ডব চালায় টেকনাফ থানা পুলিশ।

নিজামুদ্দিনের স্ত্রী শাহেদা বেগম বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ দরজা ভেঙে আমার ঘরে ঢোকে। আমাকে পুলিশ জানায়, আপনার স্বামীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপনাকে আমাদের সঙ্গে থানায় গিয়ে স্যারদের কাছে ঘটনাটি বলতে হবে। তখন পুলিশকে বলে দিই, আমি থানায় যাব না। এরপর আমার কাছ থেকে সাদা কাগজে একটি সই নেয়া হয়।’

আয়াছের ভাই মোবারক বলেন, ‘রাত তিনটার পর পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে দরজায় সজোরে ধাক্কা দিতে থাকে। দরজা খোলার পর পুলিশ আমার ভাবিকে বলে, তোমার স্বামী আয়াছকে অপহরণ করা হয়েছে। চলো, তোমাকে থানায় যেতে হবে। স্বামীকে ফেরত পেতে চাইলে থানায় মামলা করতে হবে। তখন ভাবি বলেন, আমি এখন থানায় যাব না। সকালে যাব। এরপর ভাবির কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে পুলিশ চলে যায়।’

পরে ভোররাতে নুরুল আমিনের মা খালেদা বেগমকে টেকনাফ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। খালেদা বলেন, ‘থানায় নিয়ে পুলিশ আমাকে বলে, তোর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। তুই যদি তোর ছেলেকে ফেরত চাস, তাহলে সাদা কাগজে সই দে। না-হলে তোর ছেলের মরা মুখ দেখবি। আমি স্বাক্ষর দিতে পারি না জানালে পুলিশ বলে, টিপসই দিয়ে যা। পরে দুটি টিপসই নিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয় পুলিশ।’

এদিকে ওই টিপসইয়ে একটি অপহরণ মামলা নেয় পুলিশ। পরে মঙ্গলবার এ বিষয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করতে ওই মামলায় ভিকটিম হিসেবে তিন আসামির (আয়াছ, নুরুল এবং নাজিমুদ্দিন) বক্তব্য রেকর্ড করার আবেদন জানায় পুলিশ।

কিন্তু তারা সিনহা হত্যা মামলায় ইতোমধ্যে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় পুলিশের আবেদন খারিজ করে দেন আদালত।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপহরণ মামলা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। র‌্যাব এবং পুলিশ-এই দুই সংস্থার কার্যক্রম একই ধরনের।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাউকে হেফাজতে নিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ওই তিন আসামি গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা যেতে-না-যেতেই পুলিশ কেন অতি উৎসাহী হয়ে মামলা করল?

কেন আসামিদের অপহৃত উল্লেখ করে তাদের দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় বক্তব্য রেকর্ড করতে চাইল? শুধু তাই নয়, তারা ওই তিনজনের স্বজন দিয়ে থানায় জিডিও করিয়েছে।

সিনহা হত্যার তদন্তের বিষয় ঘিরে র‌্যাব ও পুলিশের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে কি না, জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান, র‌্যাব এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত ও অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে করতে চায়।

কাজেই এটি নিয়ে দুই সংস্থার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যেসব অভিযোগ এসেছে, সবই আমাদের নজরে রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট সব বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত করছেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বুধবার জানান, তিন আসামিকে আজ থেকে র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে। তারা হলেন : পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. আয়াছ, নুরুল আমিন এবং নাজিমুদ্দিন।

বুধবার এদের প্রত্যেকেরই সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কক্সবাজারের আদালত। এদিন কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আবদুল্লাহ আল মামুন এবং এএসআই লিটন মিয়ারও ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

অপরদিকে টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত আলী এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতের ৭ দিনের রিমান্ড আরও অগেই মঞ্জুর করেছেন আদালত।

তবে প্রদীপ-লিয়াকতসহ তিনজনকে এখনই রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে না। আজ যাদের রিমান্ডে নেয়া হচ্ছে তাদের রিমান্ড শেষ হলে প্রদীপসহ কারাগারে থাকা অন্য সাত আসামিকে পর্যায়ক্রমে র‌্যাব হেফাজতে নিয়ে রিমান্ড কার্যকর করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top