সকল মেনু

সিনহার ক্যামেরা ল্যাপটপ কোথায়?

হটনিউজ ডেস্ক:

কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পরামর্শক ও সহযোগীদের খোঁজা হচ্ছে। ঘটনার পরবর্তী সময়ে ওসি প্রদীপ যাদের সহায়তা নিতে ফোন করেছিলেন, তাদের তালিকা এরই মধ্যে প্রস্তুত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। পর্যায়ক্রমে তাদের প্রত্যেককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

অন্যদিকে একটি হত্যার ঘটনায় করা দুটি মামলায় তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। মেজর (অব.) সিনহার ব্যক্তিগত ল্যাপটপ ও শুটিংয়ে ব্যবহৃত ক্যামেরার খোঁজও মিলছে না। এ ছাড়া ওই ঘটনার অংশ হিসেবে দায়ের করা পুলিশ বাদী তিনটি মামলার তদন্তভার চাইছে র‌্যাব। নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে বাকি মামলাগুলোর তদন্তভার নিতে গতকালই আদালতে আবেদন করেছেন র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে গতকাল মেজর সিনহার সহযাত্রী শিপ্রা দেবনাথ জামিন পেয়েছেন। এছাড়া জেলগেটে গ্রেফতার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। আজ রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে অন্যতম অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন পুলিশ সদস্যকে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, তথ্য রয়েছে বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অপকর্ম ঢাকতে পরামর্শ গ্রহণ করতেন। এ বিষয়টা র‌্যাবের নজরে আসার পর পরামর্শকদের খোঁজে মাঠে নেমেছে।

তিনি বলেন, ‘রবিবার জেলগেটে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী এবং উপ-পরিদর্শক নন্দলাল রক্ষিতকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

জানা যায়, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ হত্যার অন্যতম অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ কুমার দাশ বিভিন্ন অপকর্ম করে তা চাপা দেওয়ার জন্য নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। প্রদীপের এ তালিকায় পুলিশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রয়েছেন আইনজীবীসহ কয়েকটি শ্রেণি-পেশার মানুষ। নিজের অপকর্ম ঢাকতে ভুঁইফোড় অনলাইন ও ফেসবুককেন্দ্রিক কিছু কথিত গণমাধ্যমকর্মীকে ব্যবহার করতেন ওসি প্রদীপ।

সর্বশেষ মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করার পর আল্লাহ বক্স নামের এক আইনজীবীকে ফোন করেন তিনি। এরই মধ্যে ওই ফাঁস হওয়া ফোনালাপে প্রদীপ মহাবিপদে পড়ার কথা জানিয়ে ওই ব্যক্তির কাছে আইনি জটিলতা এড়াতে সহায়তা কামনা করেন। ওই ফোনালাপে মেজর (অব.) সিনহাকে গুলির পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করে আইনি ঝামেলা থেকে পরিত্রাণ পেতে পরামর্শ কামনা করেন প্রদীপ। এ সময় অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি নানা ধারা উল্লেখ করে প্রদীপকে আইনি ঝামেলা থেকে রক্ষার পথ বাতলে দেন।

একাধিক সূত্র বলছে, মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটি তদন্ত করছে র‌্যাব। পুলিশ বাদী মামলাটির তদন্ত এখনো পুলিশের কাছেই রয়েছে। থানার সিসিটিভি রেকর্ডও তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা উচিত। তবে এর বাইরে মেজর সিনহার ল্যাপটপ ও ভিডিও ক্যামেরার হদিস না পাওয়ায় অনেক তথ্য গায়েব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কয়েকজন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, একটি হত্যার ঘটনায় দুটি মামলার কোনো নজির নেই। আবার তদন্ত সংস্থাও দুটি। এটা রীতিমতো হাস্যকর। এতে সুষ্ঠু তদন্ত নিয়েও অনেক প্রশ্ন থাকবে। সূত্র বলছে, সিনহাকে খুন করার পর গ্রেফতার প্রদীপ কাদের কাছে ফোন করেছিলেন এর তালিকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কারা তৎপরতা দেখিয়েছেন তাদের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। এর বাইরে শুটিংয়ে ব্যবহৃত ভিডিও ক্যামেরা এবং মেজর সিনহার ব্যবহৃত ল্যাপটপ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পেশার লোকজন প্রদীপের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন বলে তথ্য রয়েছে। এসব পরামর্শকের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

চাঁদা না পেয়ে একই পরিবারের তিনজনকে খুন করেন প্রদীপ : একে একে বের হয়ে আসছে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কুকীর্তি। চাহিদামতো মাসোহারা না দেওয়ায় রোহিঙ্গা অপবাদ দিয়ে এক আনসার সদস্যসহ একই পরিবারের তিন সদস্য হত্যা করেন প্রদীপ ও তার অনুসারী পুলিশ সদস্যরা। তিনজনকে খুনের পর থেমে থাকেনি প্রদীপের তা-ব। এরপর অভিযানের নামে ওই পরিবারে চালানো হয় লুটপাট। অগ্নিসংযোগ করা হয় তাদের ঘরে। জীবন বাঁচাতে পরিবারের অন্য সদস্যরা পালিয়ে বেড়িয়েছেন মাসের পর মাস।
নিহত আনসার সদস্য নুরুল আলমের ছোট ভাই শাহ আলম বলেন, ‘স্থানীয় থানার সোর্স গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে চুক্তি করে আমার দুই ভাই ও ভাগ্নেকে বন্দুকযুদ্ধের নাম করে হত্যা করেন ওসি প্রদীপ। এরপর তাদের রোহিঙ্গা নাগরিক ও ডাকাত দলের সদস্য বলে অপবাদ দেন। অথচ তাদের কারও বিরুদ্ধে ডাকাতি কিংবা মাদকের মামলা ছিল না। তিনজনকে হত্যার পর আমাদের ঘনিষ্ঠ আরও ২৬ জনকে দুই মামলার আসামি করেন প্রদীপ। এরপর আমাদের পরিবারে নেমে আসে প্রদীপ ও তার অনুসারীদের নারকীয় যন্ত্রণা।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘ক্রসফায়ার দেওয়ার আগে এসআই মশিউর রহমানকে পাঠান আমাদের কাছে প্রদীপ। জীবন রক্ষা করতে চাইলে পাঁচ লাখ টাকা করে মাসোহারা দাবি করেন তারা। তাদের চাহিদামতো মাসোহারা না দেওয়ায় তিনজনকে হত্যা করা হয়।’

জানা যায়, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার পুলিশের কথিত সোর্স গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে আনসার সদস্য মো. নুরুল আলমের পরিবারের জমি-সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। এ বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েকবার সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে থানায় মামলাও হয় উভয় পক্ষ থেকে। থানার সোর্স গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে সখ্য ছিল টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের। এই সম্পর্ককে পুঁজি করে আনসার সদস্য নুরুল আলমকে হত্যার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে ওই সোর্স।

এ বছরের ৬ মে সাহরি খেয়ে মসজিদ থেকে ফজরের নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে আনসার সদস্য নুরুল আলম, তার ভাই সৈয়দ আলম ও কিশোর ভাগ্নে সৈয়দ হোসেন ওরফে মোনাফকে তুলে নিয়ে যান প্রদীপ ও এসআই মশিউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা। পরে তাদের রঙ্গিখালী পশ্চিম গাজীপাড়ার পাহাড়ের পাদদেশে নিয়ে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যার পর অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। ওই দুটি মামলায় ২৬ জনকে আসামি করা হয়, যার মধ্যে আনসার সদস্যের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top