সকল মেনু

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে ভোলার জলসীমায়

Rajshahi-fish20130821081005 (1) ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ভোলা: মৌসুমের শেষ সময়ে এসে ভোলার জলসীমায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। বিলম্বে হলেও মাছ ধরা পড়ায় সরগরম মৎস্যঘাটগুলো। এতে খুশি জেলে ও আড়তদাররা। জেলেরা নতুন উদ্যোমে মাছ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকার পর উৎসাহী জেলেদের বসে থাকার বিন্দুমাত্র সময় নেই। সবাই ছুটছেন মাছ শিকারের জন্য নদী ও সাগরে। তবে পাইকারী বাজারে মাছের মূল্য সহনীয় পর্যায় থাকলেও খুচরা বাজারে মাছ অগ্নিমূল্য।

জেলে ও মৎস্যজীবীরা খুশি থাকলেও ক্রেতারা হতাশ। তবে আড়তদাররা দাবী করছেন, এলসি বন্ধ থাকায় পাইকারী বাজারে মাছের দাম কিছুটা কম।

মৎস্যজীবীরা জানান, বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ৬ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। প্রকৃতিক নিয়মে ওই সময় ভোলা সংলগ্ন তেতুলিয়া, মেঘনাসহ বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরার কথা থাকলেও মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে মাছ ধরা পড়া শুরু হয়েছে।

কয়েকদিন থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাছের আনাগোনা অনেক বেশী।
মৎস্যজীবীরা জানান, মৌসুমের শুরুতে জেলেদের জালে মাছ ধরা না পড়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে অনেক আড়তদারকে।

এখন অনেকেই সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করছেন। তবে পাইকারী বাজারে দাম কমে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী আবার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। তাদের আগামী মৌসুমের জন্য অপক্ষো করতে হতে পরেও বলে মনে করছেন।

আড়তদাররা জানান, প্রতি মৌসুমেই ভোলা থেকে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ বরিশাল, ঢাকা, চাঁদপুর ও নারায়নগঞ্জের বড় বড় পাইকারী বাজারে বিক্রি হয়। সেখান থেকেই কাঙ্খিত পরিমাণ মূল্য পেয়ে আসছিলেন তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম একটু কম।

ভোলার চরফ্যাশনের বৃহৎ মৎস্য অবতরন কেন্দ্র ঢালচরের মৎস্য আড়তদার মো: মাহাবুবুর রহমান জানান, এখন বরিশালের পাইকারী বাজারে এক পন (৮০পিচ) ইলিশ ২৭ থেকে ৩০ হাজার টাকার করে বিক্রি হচ্ছে।

গত বছর এর দাম ছিলো ৩২ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত। চাঁদপুর ও ঢাকায় মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৯ থেকে ২৪ হাজার পর্যন্ত। গত মৌসুমে ছিলো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার। নারায়ণগঞ্জের পাইকারী বাজারে প্রতি পন বিক্রি হচ্ছে ২৪ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। গত মৌসুমে এর দাম ছিলো ২ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশী।

তিনি বলেন, এখন ঝাঁকে ঝাঁকে নদী ও সাগরে মাছ ধরা পড়ছে। তাই আগামী আরো কয়েকদিনে দাম আরো নিচে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আড়তদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে বেশী মূল্যে মাছ কিনে মোকামে তা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ একটু কম হচ্ছে।

তিনি বলেন, একদিকে মাছের দাম কম অন্যদিকে ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছ শিকারে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন জেলেরা। লোকসান গুনতে হচ্ছে আড়তদারকেও। এলসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের ব্যবসায় অনেকটা মন্দা ভাব চলছে বলে জানান তিনি।

পুবের চর, কিল্লার ঘাট, আনন্দ বাজারের মৎস্য আড়তদার জাহাঙ্গীর তালুকদার, কাজী সালাউদ্দিন, শাহে আলমসহ অন্যরা জানান, গত বছর এ সকল ঘাট থেকে দৈনিক ৪০ লাখ টাকার মাছ ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় যেতো। এ বছরও তা ছুঁই ছুঁই করছে। কিন্তু দাম কম হলেও খরচ বেড়েছে বহুগুণ।

মৎস্য আড়তদার সহিদ জানান, ১০/১৫ দিন ধরে মেঘনায় মাছ পড়া শুরু করেছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলেদের জালে আরো মাছ আটকা পড়ছে। ৯০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের মাছ ধরা পড়ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ২ কেজিও ধরা পড়ছে।

মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের মাঝে খুশির বন্যা বইলেও মাছের দাম পড়ে যাওয়ায় হতাশ অনেকে। তিনি বলেন, জলদস্যুদের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এর উপর আবার মাছের বাজারে মন্দাভাব।

তজুমদ্দিন সইস ঘাটের মৎস্য আড়াতদার রফিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় তেমন একটা মাছ ধরা পড়ছে না। মৌসুমের একেবারে পর্যায়ে এসে মাছ পড়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর এ মৎস্য ঘাট থেকে প্রতিদিন অর্ধ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হলেও এখন ২৫/৩০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, বোরহানউদ্দিনের মেঘনায় ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। বড় সাইজের মাছ ধরা পড়ায় দামও বেশী। তবে এখানকার আড়তদাররা অনেকটা লাভের মধ্যে রয়েছেন বলে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান।
হাকিমুদ্দিন মৎস্য ঘাটের আড়তদার উজ্জ্বল হাওলাদার জানান, মাছ ধরা পড়ছে, আবার বৃদ্ধি পেয়েছে জলদস্যুতা। জেলেদের জালে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। পাইকারী বাজারে মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫/ ৪০ হাজার টাকায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রীতিষ কুমার মল্লিক জানান, এখন মাছের ভরা মৌসুম চলছে তাই কয়েকদিন থেকে নদী ও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে। এ সময়ে ইলিশ সাগর থেকে নদী মোহনায় চলে আসেছ। প্রজনন মৌসুম সামনে রেখে ইলিশ শিকার পরিমাণ বেড়ে গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top