সকল মেনু

আট জেলায় বন্যার উন্নতি স্থিতিশীল ৬ জেলায়

হটনিউজ ডেস্ক:

প্রতিদিনই অনবরত পানি নামায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এছাড়া উত্তরের ৮ জেলায় বন্যা চলছে। তবে ভারতের পূর্বাঞ্চল ও ভুটানে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বানের পানি আসার হারও কমেছে। এতে উত্তরের জেলাগুলোয় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। এসব জেলা থেকে পানি নামছে। একইভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে।

শনিবার সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) নিয়মিত বুলেটিনে বলেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এটা অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে। ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি একই রকম থাকবে। আপার মেঘনা অববাহিকা বা সিলেট থেকে ভৈরব বাজার পর্যন্ত নদ-নদীগুলোর পানিও হ্রাস পাচ্ছে। এ ধারা ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় হ্রাস পাবে।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে।

এফএফডব্লিউসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ধরলা, তিস্তা, ঘাগট, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, পদ্মা ও সুরমা নদীর অন্তত ১৭ স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে যমুনা অন্তত ছয় স্থানে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপরে। সংস্থাটি দেশের ১০১ স্থানে নদীতে পানি প্রবাহের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। এতে দেখা যায়, ৬১ স্থানে পানি আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে, অপরিবর্তিত আছে একটি স্থানে।

বাংলাদেশে বন্যার কারণ প্রধানত দুটি, একটি হচ্ছে, উজানের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি, আরেকটি বাংলাদেশের ভেতরের বৃষ্টির পানি।

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীতে শনিবার বন্যার পানি বিপদসীমার ৪৬ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ৩শ’ বাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

রংপুর : রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চরাঞ্চলের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তার পানি শুক্রবার রাত থেকে বাড়তে শুরু করেছে। এতে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তার চরাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, শনিবার বেলা ১২টার দিকে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) : জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগে রয়েছে বানভাসি মানুষ। শনিবার ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্রসহ শাখা নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। ইসলামপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছে। দেওয়ানগঞ্জে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বন্যাদুর্গত ও নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। সরকারিভাবে ৬০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকলেও তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের ১৪ সেমি. কমে বিপদসীমার ৫২ সেমি., শহরের নিউ ব্রিজ পয়েন্টে ঘাঘট নদীর পানি ৯ সেমি. কমে বিপদসীমার ২২ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুইদিনে গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৭টি পয়েন্টে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে।

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) : নাগেশ্বরীতে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। এখনও জাগেনি রাস্তাঘাট। সরকারি হিসাবে বন্যা প্লাবিত করেছে উপজেলার ১০ ইউনিয়ন। পানিবন্দি হয়েছে ৪ হাজার ৬২৮ পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

পাবনা : পাবনায় পদ্মা-যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে পদ্মা নদীর পানি। এ দুইটি বড় নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার বেড়া, সুজানগর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ জানান, ইতোমধ্যে বেড়া ও সুজানগরে যমুনা এবং পদ্মা নদীর বাঁ তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২.২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : হাওরবেষ্টিত দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘরসহ রাস্তাঘাটে এখনও হাঁটু ও কোমরসমান পানি লেগে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বানভাসিরা। খেটে খাওয়া বিভিন্ন পেশার লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন।

শেরপুর : শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কুলুরচর-বেপারিপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। ৫০টি পরিবারের ২ শতাধিক মানুষ পরিবার-পরিজন, জিনিসপত্র ও ছাগলসহ রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে। শেরপুর সদর উপজেলার কামারের চর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী ৬নং চর, ৭নং চর ও পয়স্তিরচর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

রাজবাড়ী : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ার পদ্মাার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফেরিঘাট ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ফেরিঘাট রয়েছে হুমকির মুখে। ভাঙনের কারণে এখানকার কয়েক শতাধিক পরিবার বাড়িঘর নিয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন রোধ করার দাবি জানিয়েছে ভাঙনকবলিত স্থানীয় এলাকাবাসী। দৌলতদিয়া বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে ফেরিঘাটের পল্টুনের র‌্যাম মিড ওয়াটার থেকে হাই ওয়াটার পয়েন্টে সরানো হয়েছে।

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের নাগরপুরে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শনিবার সকালে নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ঘোনাপাড়া পয়েন্টে ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্যনির্মিত বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top