সকল মেনু

পুবে উন্নতি হলেও,মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি

হটনিউজ ডেস্ক:

দেশের পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। উত্তরে পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। তবে আসাম, সিকিম, মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত আবার শুরু হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। মধ্যাঞ্চলের কিছু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সবমিলে অন্তত ১৫ জেলায় বন্যা চলছে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বৃহস্পতিবার বলেছে, ৯টি নদীর পানি বইছে বিপদসীমার উপরে। ইতোমধ্যে যমুনার পানি নেমে পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমা পার করেছে।

যমুনা নদী ছয়টি পয়েন্টে, ব্রহ্মপূত্র দুই পয়েন্টে, সুরমা ও পুরাতন সুরমা তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমা পার করেছে। এছাড়া ঘাগট, ধরলা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, বিপদসীমার উপরে আছে। এসব নদী ১৫ স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যাদুর্গত এলাকার ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যার পানির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকটে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় বৃহস্পতিবার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ ৯ দশমিক ০৩ মিটার উচ্চতা থাকার ফলে বন্যার পানি বিপদসীমার ৩৮ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এতে উপজেলা পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের চরহরিরামপুর ইউনিয়ন ও চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের আবাদি ফসলি মাঠ প্লাবিত হয়েছে এবং বেশির ভাগ ধান, তিল ও বাদাম ফসলসহ সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। একই সাথে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলা সদর ইউনিয়ন ও গাজীরটেক ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

চরাঞ্চলের পাকা ও আধাপাকা ফসলি মাঠের বেশির ভাগ আকস্মিক বন্যায় ডুবে গেছে। স্রোতের কোপে অনেক রাস্তা ভেঙে গেছে। চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন মৃধা বলেন, আর মাত্র ১৫ দিন সময় পেলে কৃষকরা ফসলগুলো ঘরে তুলতে পারত।

রংপুর : গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর পানির তোড়ে মার্জিনাল ডাইকে ব্লক পিচিং ধসে গেছে। প্রায় ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক দিনের বন্যায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলে উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের বৈরাতি নামক স্থানে মার্জিনাল ডাইকের ব্লক পিচিং ধসে যাওয়ায় উৎকণ্ঠায় আছেন নদীপারের মানুষ।

স্থানীয় লোকজন বলছেন এই ডাইক ভেঙে গেলে পানি মূল বাঁধে এসে আঘাত করবে। ফলে হুমকিতে পড়বে মূল বাঁধ। লোকজন বাঁশ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধা ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাটে বিপদসীমার ৩৩ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপর দিকে ঘাঘট নদীর পানি সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১ সেমি. কমলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত একই লেভেল থেকে বিপদসীমার ৩৭ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিস্তার পানি বিকাল ৩টায় ১ সেমি. বেড়েছে। তবে করোতোয়ার পানি ১ সেমি. কমেছে।

কুড়িগ্রাম : ধরলা নদীর ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে বাঁধের বেশির ভাগ অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে নদী তীরবর্তী ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়বে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধটি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বাঁধের ভাঙা অংশ ঘেঁষে ধরলার মূল সে াত প্রবাহিত হওয়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ফলে ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার আশঙ্কা করছে বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়ার।

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আকস্মিকভাবে নতুন করে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে রাস্তা ভেঙে উপজেলা শহরের সাথে রাণীগঞ্জ কাচকোল এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে কিছুটা হ্রাস পেয়ে এখনও বিপদসীমার ৫৩ সেমি. উপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। বুধবার বিকেল থেকে আকস্মিকভাবে বুড়িতিস্তা দিয়ে পানি প্রবেশ করায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১০ গ্রাম।

পানির স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলা সদর থেকে ঠগেরহাট হয়ে কাচকোল বাজার সড়কসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি রাস্তা। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে, কৈজুরি, জালালপুর, খুকনি, সোনাতনী, গালা ও রূপবাটি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম।

দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী (জামালপুর) : যমুনার পানি কমলেও দেওয়ানগঞ্জ বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ছয় দিন থেকে পানিবন্দি থাকায় বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টের যমুনার পানি ২৪ ঘণ্টায় ৭ সেমি. কমে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরিষাবাড়ীতে ঝারকাটা ও ঝিনাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনার পানি কমলেও অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পৌর এলাকার ছয়টি গ্রামের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

শেরপুর : উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুরে পুরনো ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুর কাছে ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) : পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়, ঢাকার দোহারের নয়াবাড়ী ধোয়াইর বাজারসংলগ্ন উত্তর পাশ দিয়ে পদ্মারক্ষা বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এর ফলে পশ্চিম ধোয়াইর এলাকার জনসাধারণ চরম ঝুঁকিতে রাত দিন পাড় করছে।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) : ভাটিতে পানির টান না থাকায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বন্যার পানি কমছে শম্ভুক গতিতে। সুরমাসহ উপজেলার সব নদ-নদীর পানি ধীরে ধীরে হ্রাস পেলেও হাওরের পানি অপরিবর্তিতই রয়েছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে উপজেলার ৯ ইউনিয়নের অর্ধলাখ পানিবন্দি মানুষের। উপজেলা সদরের সাথে সব ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গৃহপালিত গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার পানি আগের অবস্থায় রয়েছে। তবে পানিবন্দি রয়েছে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-তারাকান্দি গাইড বাঁধ। ভূঞাপুর অংশে যমুনার পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top