সকল মেনু

এমএলএম আইনের অনুমোদন, সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর জেল

cabinate-meeting-sm20130819010239সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: গ্রাহকের সাথে প্রতারণা বন্ধে মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং(এমএলএম)কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনে বিদ্যমান কোম্পানিগুলোকে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নিতে হবে। ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল অথবা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। আছে প্রশাসক নিয়োগের বিধানও।

এছাড়া নতুন করে কেউ এ ধরনের ব্যবসা করতে চাইলে তাকে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স বিহীন ভাবে কেউ ব্যবসা পরিচালনা করলে তাকেও একই ধরনের সাজা পেতে হবে।

সোমবার সকালে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এসব শাস্তির বিধান রেখে এই আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন ভুইয়া সাংবাদিকদের একথা জানান।

সচিব বলেন, যেহেতু সংসদ অধিবেশন নেই। তাই এটি এখন অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বেশ কিছু এমএলএম কোম্পানি গড়ে ওঠেছে। কিন্তু দেশে এর আইনি কাঠামো ছিলো না। তাই এগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছিল। কিন্তু প্রতারণা বন্ধে ও আইনি কাঠামোতে আনতে আইন জরুরি হয়ে পড়ে। এতে করে বিকাশমান এমএলএম কোম্পানিগুলো আইনের আওতায় আসবে। স্বচ্ছতা আসবে। নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ করা যাবে।

তিনি বলেন, ‘নতুন আইনে এমএলএম কোম্পানি করতে চাইলে আগে কোম্পানি গঠন করতে হবে। এবং সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। তবে লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করতে এবং প্রতারণা করলে সরকার তার লাইসেন্স বাতিল ও স্থগিত করতে পারবে ।এছাড়া প্রয়োজনে সরকার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সেই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। সেখানে এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।’

সচিব বলেন, ‘এর ফলে বিদ্যমান কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হবে না। তাদের কে অধ্যাদেশ জারির ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স না নিলে আইনগতভাবে দণ্ডনীয় হবে।’

তিনি জানান, নতুন করে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর বিদ্যমানরা ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স না নিলে একই মেয়াদে দণ্ড হবে। আইনে কেউ সরকারের অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১ থেকে ১০ বছরের জেল অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

সাংবাদিকদের মোশাররাফ হোসেন আরও বলেন, ‘আইনে সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে অনুমতি ছাড়া তার বাড়িতে যাওয়া যাবে না। এমন কাজ করলেও আইন ভঙ্গ হবে। এবং ৬ মাস থেকে ১ বছর জেল অথবা ১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আইনের বিদ্যমান কোন ধারা দ্বিতীয় বারের মতো লঙ্ঘন করলে সাজা দ্বিগুণ হবে। আইন না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিনা ওয়ারেন্টে আটক করতে পারবে আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা।’

সোমবারের সভায় ফাইন্যান্সিয়াল রির্পোটিং আইন-২০১৩ নীতিগত অনুমোদন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (সংশোধন) ২০১৩ ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন
আইনটি নিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, ‘২০০৮ সালে তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে ফাইন্যান্সিয়াল রির্পোটিং নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরবর্তীতে সরকার সেটি আর আইনে রূপ দেয়নি। তবে অর্থ বিভাগ মনে করছে, এমন একটি আইন থাকা দরকার। তাই ২০০৯ সালে মে মাসে আইনের একটি খসড়া মন্ত্রিসভায় আসে। তবে মন্ত্রিসভা কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়। এরপর ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় বার মন্ত্রিসভায় আসে। আজ তা নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হলো।’

সচিব বলেন, আমাদের দেশে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কোন একক মানে ছিলো না। কোন একক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছিলো না। কিন্তু একটি নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা জরুরি হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘আইনে একটি একটি কাউন্সিল রাখার বিধান রাখা হয়েছে। যাতে চেয়ারম্যান থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এছাড়া সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন, বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আইসিএমএবি, আইসিএবি এর প্রতিনিধিরা থাকবে। এতে মোট ১২ জন সদস্য থাকবেন। দুইজন থাকবে বিশেষজ্ঞ সদস্য।

আইনে অডিটরদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে। সেটি আগে ছিলো না। লংঘনে ১ থেকে ৫ বছরের জেল অথবা ১ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে অডিটরদের।

সচিব বলেন, তবে কোন প্রতিষ্ঠান কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ক্ষুব্ধ হলে তিনি আপিল করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে একটি ট্রাইব্যুন্যাল গঠন করে তা পর্যালোচনা করা হবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশোধন আইন:
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংশোধন আইন: ডিজিটাল সরকারের এই সময়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। তবে একই সঙ্গে বেড়েছে অপপ্রয়োগ। এটি রোধ করা দরকার। তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ কে আরো সুনির্দিষ্ট করতে সংশোধনী আনা হয়েছে। পুরনো আইনে বেশ কিছু অস্পষ্টতা ও অপর্যাপ্ততা রয়েছে। তাই নতুন আইন করে সেগুলো দূর করা হয়েছে।

সরকার এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করবে বলেও জানান তিনি।

সচিব বলেন, আইন লংঘনে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। গুরুতর অপরাধে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই আটক করতে পারবে। আইনে সাজার মেয়াদ রাখা হয়েছে ৭ থেকে ১৪ বছর। যা বিদ্যমান আইনে ছিলো সর্বোচ্চ ১০ বছর। তবে কেবল সরকার ও পুলিশ আইন লংঘনে মামলা করতে পারবে। কোন ভুক্তভোগী মানহানির স্বীকার হলে মামলা করতে পারবেন না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top