সকল মেনু

খুমেক হাসপাতালে রুটিন অপারেশন বন্ধ

Khulna-kumak-120130818150613খুলনা প্রতিনিধি: বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে, ওষুধ আছে, অপারেশন থিয়েটার (ওটি) আছে। অথচ অপারেশনের যন্ত্রপাতি নেই!

খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে এক মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও মাথা ব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। যেকারণে সেখানে বন্ধ রয়েছে রুটিন অপারেশন।চলতি বছরের ১৯ জুলাই রাতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে চারটি অপারেশন থিয়েটারের প্রায় সব মূল্যবান যন্ত্রপাতি পুড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, খুলনা বিভাগের একমাত্র বৃহৎ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন হাজার হাজার রোগী।যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অন্য হাসপাতাল থেকে একটি মেশিন এনে জোড়াতালি দিয়ে গত কয়েকদিন ধরে চালানো হচ্ছে অপারেশনের কাজ।হটনিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯ জুলাই রাতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে অপারেশন থিয়েটারের তিনটি অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন, একটি ডায়া থার্মা মেশিন, তিনটি সাকার মেশিন, তিনটি ওটি সিলিং লাইট এবং দু’টি এয়ার কন্ডিশনার পুড়ে যায়। এসব যন্ত্রপাতি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গেই এনেসথেসিওলজির (অজ্ঞান) প্রয়োজন হয় এমন অপারেশন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।এতে ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ২০০ রোগীর জটিল অপারেশন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এরপর কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করে অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন। আবার অনেকে অর্থের অভাবে খুমেকেই রয়ে গেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে কুষ্টিয়া থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল্লাহ হটনিউজকে বলেন, ওটি বন্ধ, তা জানতাম না। এখন তাই ফিরে যাচ্ছি অন্য কোথাও।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ছটফট করছেন বটিয়াঘাটা থেকে আসা অপর সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী অর্পণা সাহা। তার দুই পা সম্পূর্ণ থেতলে গেছে।তার আত্মীয়রা জানান, অপারেশন বন্ধ তা তারা জানতেন না। এসে পড়েছেন মহাবিপদে। পরে তারা খুলনা পঙ্গু হাসপাতালে চলে যান।খাদ্যনালীতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে অপারেশনের মাধ্যমে রাণী বিশ্বাসের বিকল্প খাদ্যনালী প্রতিস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকায় মুমূর্ষু এই রোগীকে তার আত্মীয়স্বজন ঢাকায় নিয়ে গেছেন।

শুধু আব্দুল্লাহ, অর্পণা সাহা ও রাণী বিশ্বাস নন। এই হাসপাতালের সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, গাইনি ও ইএনটি বিভাগের শতশত রোগী প্রতিদিন অপারেশন করতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল রোগীরা ঢাকা বা অন্যত্র চলে যেতে পারলেও অস্বচ্ছলদের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

তারা হটনিউজকে জানান, অনেকেই নিজের প্রিয়জনকে বাঁচাতে গবাদি পশু, কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, ধান ও মাছ বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করে অপারেশনের জন্য এ হাসপাতালে অপেক্ষা করছেন।খুমেকের অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. শেখ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, ১৯ জুলাই রাতে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে অপারেশন থিয়েটারের লাইট, অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন ও ডামাথার্মি মেশিন পুড়ে যাওয়ায় অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।

তবে, বর্তমানে গত কয়েকদিন আগে একটি জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে এনে অপারেশন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।খুমেকের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পরিতোষ কুমার কুন্ডু হটনিউজকে বলেন, রুটিন অপারেশন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে এমনটি বলা যাবে না। শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে একটি মেশিন এনে বিশেষ অপারেশনগুলো করা হচ্ছে।এছাড়া যেসব যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে সেগুলো আবার স্থাপন করার জন্য ঢাকায় জানানো হয়েছে। আগের মতো রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার জন্য সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বাংলানিউজকে জানান, রুটিন অপারেশন এক মাস সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কেবল মাত্র সিজার ও ছোটখাট (অজ্ঞান ছাড়া) অপারেশন করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও হাসপাতালের স্টোর রুম থেকে আইভি ক্যানোলা, ফলিস ক্যাথেটার, মাইক্রোপোর, সিরিঞ্জ, কমফিট গ্লোবস, ভিকরিল, ক্যাটগাট ওষুধ নেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। ওষুধগুলো অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বে নিয়োজিত জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেসথেওলজি) ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) স্বাক্ষরে স্টোর থেকে বের করা হচ্ছে।অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকলেও ওষুধগুলো কোথায় যায় এ নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। যদিও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো সদত্তর পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top