সকল মেনু

বেলকনিতে ছেলের মৃত্যুর দুঃসহ দৃশ্য দেখলেন অসহায় মা-বাবা

হটনিউজ ডেস্ক:
ছেলের ঘরে আগুন। ভিতরে আটকে পড়া একমাত্র সন্তানের বাঁচার আকুতি। বাবা বাঁচাও আগুন… আম্মা বাঁচাও। ছেলের এমন চিৎকারে পাগলপ্রায় বাবা-মা বাইরে থেকে দরজা খোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান। বাইরে থেকে কোনোভাবেই খোলা যাচ্ছিল না রুমের দরজা। সন্তানের রুমের দরজায় লাগানো আলিবাবা ডোর। ইলেকট্রিক্যাল অটো লক। ছেলের ঘরের আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে পুরো ফ্ল্যাটে। দরজা খুলতে ব্যর্থ বাবা-মা ছেলেকে বলেন, বেলকনিতে চলে যা বাবা! তারাও নিজ ঘরের বেলকনিতে ছুটে যান। গেঞ্জিতে আগুন ধরে যাওয়া ছেলে তখন নিজ রুমের বেলকনিতে ছটফট করছিলেন। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার আর ১০ তলা ফ্ল্যাটের পাশের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সেই দুঃসহ দৃশ্য দেখতে হয় মা-বাবাকে। লোহার গ্রিলের ভিতরে হাতের নাগালেই প্রিয় মুখ, প্রিয় সন্তান। একটু একটু করে ঝলসে যাচ্ছে সন্তানের মায়াভরা মুখখানি। কিন্তু আগুন থেকে সন্তানকে বাঁচাতে অসহায় মা-বাবার করার কিছুই ছিল না। আগুনে দগ্ধ ছেলেটি বেলকনিতেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাকে আর বাঁচানো যায়নি।

গতকাল ভোরে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর একমাত্র সন্তান স্বপ্নিল আহমেদ পিয়াস (২৫) রাজধানীতে তাদের আফতাবনগরের ফ্ল্যাটে দগ্ধ হয়ে এভাবেই মারা যান। ফায়ার সার্ভিস বলছে, শর্ট শার্কিট থেকেই এসিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। আর সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা রুমে। নান্নু দৈনিক যুগান্তরের অপরাধবিষয়ক সাবেক প্রধান প্রতিবেদক— বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি গ্লোবাল টেলিভিশনের এডিটর (ক্রাইম) হিসেবে কর্মরত। পিয়াস একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষে ব্যবসা করছিলেন। প্রোভেন্স লিমিটেড নামে তাঁর একটি কোম্পানি রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি সিসি ক্যামেরাসহ ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আমদানি ও বিক্রির ব্যবসা করে। আফতাবনগরে পিয়াসের নামাজে জানাজা শেষে লাশ গ্রামের বাড়ি যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। আগুনের ধোঁয়ার মধ্যে সাংবাদিক নান্নু নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। নান্নু বলেন, ‘ভোর ৪টার দিকে ছেলের চিৎকার শুনে আমাদের ঘুম ভাঙে। দেখি পুরো বাসা ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। ছেলের রুমে প্রবেশের জন্য দরজা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। দরজায় ইলেকট্রিক্যাল অটো লক ছিল। ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। এরপর বেলকনিতে দেখতে পাই ছেলের গেঞ্জিতে আগুন জ্বলছে। সে বারান্দায় বাবা বাঁচাও বলে চিৎকার করছিল। গেঞ্জি খুলে ফেলে দিতে বলি। গেঞ্জি খোলার পরও পিয়াসের শরীরে আগুন জ্বলছিল। পাশের বারান্দা থেকে সেটা পরিষ্কার দেখছিলাম।’ তিনি বলেন, পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভান। ততক্ষণে আর ছেলেকে বাঁচানো যায়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাসেল সিকদার বলেন, ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে তাঁরা আফতাবনগর বি ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ৪৪ ও ৪৬ নম্বর বাড়িতে আগুন লাগার খবর পান। তাঁদের পাঁচটি ইউনিট ১১ তলা বাড়ির ১০ তলার ওই বাসার আগুন নেভায়। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত। আফতাবনগরের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, পিয়াসের কক্ষসহ বাসার অন্যান্য আসবাবপত্র পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এদিকে আগুনে নান্নুর ছেলের মৃত্যুর খবরে দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও ক্রাইম রিপোর্টাররা হাসপাতালে ছুটে যান। পিয়াসের লাশ দেখে তাঁদের কান্নায় সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নান্নু-শাহীনা আহমেদ পল্লবী দম্পতির একমাত্র ছেলে পিয়াসের মৃত্যুতে কোনো কিছুতেই সান্তনা দিতে পারছিলেন না স্বজন ও সহকর্মীরা। সুরতহাল শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় আফতাবনগরের বাসায়। বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম জানান, মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে যান পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী। তিনি ঘটনাটিকে মর্মান্তিক উল্লেখ করে বলেন, আগুনের নেপথ্য কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর ছেলে স্বপ্নিল আহমেদ পিয়াসের মৃত্যুতে ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়ের ও সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ারসহ কার্যনির্বাহী কমিটি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। তাঁরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনাও জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top