সকল মেনু

হাউডি মোদি সমাবেশ: মোদির তোষামোদে কংগ্রেসে ছিঃছিঃ

হটনিউজ ডেস্ক:
টেক্সাসের হিউস্টনে রোববার দুই বারে প্রায় ঘণ্টা খানেক ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রথম ১০ মিনিটের পুরো সময়টাই ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা প্রশংসা আর অতি তোষামোদে পূর্ণ।

তার এই প্রশংসার চোটে চার মিনিটের মাথায়ই বিব্রতকর একটা ভাব ফুটে ওঠে ট্রাম্পের চোখে-মুখে। কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই মোদির। বলেই চলেছেন।

একপর্যায়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচারও ছাড়িয়ে গেলেন তিনি। আগামী বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের হয়ে প্রচারণা চালালেন। চাইলেন ভোটও।

ঘরোয়া রাজনীতিতে নিজের বহুল ব্যবহৃত স্লোগানও আওড়ালেন। ধুয়ো তুলে বললেন, ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার!’ কিন্তু বিদেশ বিভূঁইয়ে মোদির এই অতি তোষামোদে ছিঃছিঃ রব পড়ে গেছে।

শুরু হয়েছে বিতর্ক-সমালোচনা। সমালোচনার তীর উড়ে আসছে প্রধানত বিরোধী কংগ্রেস শিবির থেকে। দলটির প্রবীণ নেতা ও রাজ্যসভায় উপদলনেতা আনন্দ শর্মা বলেছেন, মোদি কি ট্রাম্পের স্টার ক্যাম্পেনার।

এটা কী করলেন উনি। ট্রাম্পের জন্য প্রচারণা করে দু-দেশের সময়োত্তীর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্কের শর্ত ভেঙেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানটি ছিল মুলত মোদির গণসংবর্ধনা। কিন্তু মোদির বক্তব্য ধাঁচে তা হয়ে গেল ট্রাম্পের প্রচার সভা।

কেন মোদির সভায় না গিয়ে পারলেন না ট্রাম্প : ‘বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। টেক্সাসে দিনটা ভালোই কাটবে’- রোববার এক টুইট বার্তায় বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি লিখেন, ‘নিশ্চয়ই। আপনার সঙ্গে শিগগিরই দেখা হবে।’ এর কয়েক ঘণ্টা পরই টেক্সাসের হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে পাশাপাশি দেখা যায় দু’জনকে। স্টেডিয়াম তখন কানায় কানায় পূর্ণ। প্রায় ৫০ হাজার ভারতীয় প্রবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন মোদি।

আর পেছনেই দাঁড়িয়ে তার কথা শুনছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিদেশি কোনো নেতা, প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপস্থিত থাকার ঘটনা নজিরবিহীন। এ নিয়ে তাই নানা সমালোচনা-বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা এড়াতে পারলেন না ট্রাম্প? পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরা এর জবাবে বলছেন, শুধু ভোটের রাজনীতির স্বার্থেই হিউস্টনে মোদির ‘হাউডি মোদি’ জনসভায় ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে হাজিরা দিয়েছেন ট্রাম্প।

এক বছর বাদেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফের ক্ষমতায় ফেরাই লক্ষ্য ট্রাম্পের। এর জন্য দরকার বিপুল জনসমর্থন। তাই ট্রাম্পশিবিরের টার্গেট- যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিপুলসংখ্যক ভারতীয় ভোটারদের সমর্থন।

তাদের মন পেতেই নিজের কাজের ঢালাও বিজ্ঞাপন সেরে নিলেন ‘স্বভাব-ব্যবসায়ী’ ট্রাম্প। নিজ দেশেই মোদির নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা উপেক্ষা করে চলে যান ‘হাউডি’তে।

সমর্থন দেন মোদিকেই। তিনি বলেন, গভীর আস্থা রয়েছে তার ওপরে। ট্রাম্পকে পাল্টা ‘ভারতের প্রকৃত বন্ধু’ বলে উল্লেখ করলেন মোদিও। টাইমস অব ইন্ডিয়া হিসেবে বিশ্বে প্রতি বছর যত মানুষ অভিবাসী হয়, এর বেশির ভাগের গন্তব্যই যুক্তরাষ্ট্র।

আর অভিবাসীদের দেশখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে ভারতীয়দের সংখ্যাই বেশি। জাতিসংঘের এক রিপোর্ট মতে, চলতি বছর বিশ্বে আন্তর্জাতিক অভিবাসীর সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭ কোটি ২০ লাখে।

২০১০ সালে যে সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ১০ লাখ। অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে অভিবাসীর হার বেড়েছে ২৩ শতাংশ। চলতি বছর অভিবাসনের ক্ষেত্রে ১ কোটি ৭৫ হাজার অভিবাসী নিয়ে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে ভারতীয়রা।
রিপোর্ট মতে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫ কোটি ৭০ লাখ অভিবাসী আশ্রয় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য যা একটা বড় ভোট ব্যাংক হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top