সকল মেনু

নেশার টাকা না পেয়ে মাকে পুড়িয়ে হত্যা, মৃত্যুদণ্ড চাইলেন বাবা

হটনিউজ ডেস্ক:

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় নেশার টাকা না পেয়ে খুকি বেগম (৬৫) নামে এক গৃহকর্তীকে হাত-পা বেঁধে শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তার ছেলে সোহানুর রহমান খোকন (২৯)। নিহত খুকি বেগম উপজেলার চিকাশি ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের আব্দুস ছামাদ মন্ডলের স্ত্রী। রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার গজারিয়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আব্দুস ছামাদ একজন আদর্শ কৃষক। তার ১২ বিঘা জমি ছিল। ২ ছেলে ও ৩ মেয়েকে নিয়ে সুখেই কাটছিল আব্দুস ছামাদের সংসার। পাঁচ সন্তানের মধ্যে সোহানুর রহমান খোকন সবার ছোট। নবম শ্রেণিতেই লেখাপড়ায় ইতি টেনেছে খোকন। শৈশব থেকেই খোকনের বেপরোয়া জীবনযাপন। প্রায় ৩ বছর ধরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে খোকন। তার স্ত্রী ও ২ মেয়ে সন্তান রয়েছে।

২০১৮ সালে মাদকদ্রব্য সেবনের দায়ে গ্রেপ্তার হয় খোকন। সেবারে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তার মাদক সেবনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন থেকেই মাদক সেবনের টাকার জন্য মা-বাবাকে নির্যাতন করে। মা-বাবাকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের জন্য তার ঘরে দেশীয় তৈরি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র রয়েছে। মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতন সইতে না পেয়ে ২০১৮ সালে মা-বাবা খোকনকে থানায় সোপর্দ করে। দ্বিতীয় দফায় জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে এসে মা-বাবার ওপর আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ২টি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

প্রতিদিন তার দাবি অনুযায়ী ২ থেকে ৫ হাজার টাকা করে দিত মা-বাবা। তার দাবিকৃত টাকা না দিলেই মা-বাবার ওপর চালাত অমানবিক নির্যাতন। গত ২ বছরে ছেলের মাদক কেনার টাকার যোগান দিতে প্রায় ৬ বিঘা জমি বিক্রি করতে হয়েছে বাবা আব্দুস ছামাদকে। প্রতিদিন ছেলের টাকা জোগাড় করতে একসময়ের স্বচ্ছল ছামাদের সংসারে অভাব দেখা দেয়। তাই ছেলেকে মাদকের টাকা দিতে পারছিলেন না তার বাবা।

প্রতিদিনের ন্যায় রবিবার বিকেলে মাদক কেনার জন্য মা-বাবার নিকট ৫ হাজার টাকা দাবি করে খোকন। কিন্ত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে মাকে ঘরের ভেতর খাটের সাথে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করতে থাকে। স্ত্রীর এমন দৃশ্য দেখে আব্দুস ছামাদ ধারকর্জ করে টাকা সংগ্রহের জন্য প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরতে থাকে।

এ অবস্থায় টাকা পেতে বিলম্ব হওয়ায় ঘরের ভেতর রাখা নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল থেকে পেট্রল বের করে মায়ের শরীরে ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে মায়ের শরীরের ৯০ শতাংশ ঝলসে যায়। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ৭টার দিকে খুকি বেগমের মৃত্যু হয়। এদিকে ঘটনার পর বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টাকালে স্থানীয় লোকজন খোকনকে আটক করে গণধোলাইয়ের পর থানায় সোপর্দ করে। বর্তমানে খোকন পুলিশ পাহারায় ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

খোকনের স্ত্রী শেফালী খাতুন বলেন, প্রায় ৩ বছর ধরে আমার স্বামী মাদকাসক্ত। প্রতিরাতেই নেশা করে বাড়ি ফিরে এসে আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। তার নির্যাতন সইতে না পেয়ে সন্তানদের নিয়ে ৭ মাস ধরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। মাকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় আমার পাষণ্ড স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

বৃদ্ধ আব্দুস ছামাদ মন্ডল বলেন, প্রায় ৩ বছর ধরে খোকন মাদক সেবন করে। তাকে ভালো করতে থানায় সোপর্দ করেছি, পারিবারিকভাবে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যর্থ হয়েছি। মাদকের টাকা না দিলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারপিট করত। বাধ্য হয়ে দিনে দিনে ৬ বিঘা জমি বিক্রি করে তাকে মাদকদ্রব্য কেনার টাকা দিয়েছি।

রবিবার বিকেলে আমার স্ত্রীকে বেঁধে রাখার দৃশ্য দেখে মাদক কেনার জন্য টাকা ধার করতে পাশের বাড়ি যাই। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে এসে দেখি স্ত্রীর শরীরে ছেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ২ ঘণ্টা পরই আমার স্ত্রী মারা গেছে। আমার সন্তানের মতো এমন কুলাঙ্গার সন্তান যেন আর করো ঘরে জন্ম না নেয়। এ জন্য প্রশাসনের নিকট আমার ছেলের মৃত্যুদণ্ড দাবি করছি।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নেশার টাকা না পেয়ে মাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে সোহানুর রহমান খোকন। নিহত খুকি বেগমের মৃতুদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার সকালের দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top