সকল মেনু

সাংসদ রনি, তাঁর দুই শ্যালকসহ ৬৫ জনের বিরুদ্ধে গলাচিপা থানায় মামলা

images (28)নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী, ১২ আগষ্ট ॥ পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের আলোচিত সাংসদ গোলাম মাওলা রনি, তাঁর শ্যালক গলাচিপার ডাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মকবুল খান এবং চাচাতো শ্যালক মো.মাহাজিব খানসহ রনির ৬৫ জন অনুসারীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় চাঁদাবাজি ও ছিনাতাইয়ের অভিযোগ এবং অপরটিতে সমাবেশে হামলা, দোকান ভাঙচুর এবং মালামাল চুরির অভিযোগ করা হয়েছে। গত রোববার রাতে গলাচিপা থানায় মামলা দুটি করা হয়।

গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের গেরামর্দন গ্রামের বাসিন্দা মো. সামসুজ্জামান ওরফে লিকন সমাবেশে হামলা, দোকান ভাঙচুর এবং মালামাল চুরির অভিযোগে করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট বিকেলে জাতীয় শোক দিবসে শহীদদের স্মরণে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে পানপট্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে পানপট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সমাবেশ চলছিল। ওই সমাবেশে আসামী গোলাম মাওলা রনির নেতৃত্বে মো. মকবুল খান, মো. মাহাজিব খান, পানপট্টি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান, সাংসদ রনির অনুসারী গলাচিপা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. লিটু পেয়াদা, পানপট্টি ইউনিয়নের মো. আসাদ, মো. আব্বাস, নূর মমিন, মো. মঈন, বশার খাঁ, মো. মনির দফাদার, মো. আলম, মো. বশির, মো. আনোয়ার, ডাকুয়া ইউনিয়নের মো. শামীম বিশ্বাস, সান্টু আকন, মো. জসিম মৃধাসহ অজ্ঞাত আরো ২৫ জন ব্যক্তি হামলা করে সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজনকে পিটিয়ে জখম করে। এর পর আসামীরা পানপট্টি বাজারের মো. জাহাঙ্গীরের মুদি দোকান ভেঙে দোকানের মালামাল চুরি করে নেয়। হামলাকারীরা পানপট্টি বাজারে আবুল কালাম আজাদের বাসায় হামলা করে ঘর ভাঙচুর এবং মালামাল লুট করে। গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জিয়াউল হক বলেন, ‘এ মামলাটি আসামীদের বিরুদ্ধে ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ৪৪৮, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৭, ৩৭৯ এবং ৩৮০ ধারায় বেআইনি জনতাবদ্ধে মারাত্মক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হইয়া খুনের উদ্দেশে মারপিট করিয়া গুরুত্বর ও সাধারণ জখম এবং চুরির অপরাধে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মামলাটি রোববার রাত নয়টা ৫০ মিনিটে থানায় রেকর্ড করা হয়।’

ডাকুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পূর্বপাড়ডাকুয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. বদরুল ইসলাম খানের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০১২ সালের ২৫ মার্চ বেলা ১১টার দিকে পূর্বপাড়ডাকুয়া গ্রামেবাদির বাড়ির সামনে আসামী গোলাম মওলা রনি, তাঁর শ্যালক ডাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মকবুল খান, পূর্বপাড়চাচাতো শ্যালক মাহাজিব খান, পূর্বপাড় ডাকুয়া গ্রামের শামিম বিশ্বাস, বাসু দাস, জসিম মৃধা, সান্টু আকন, হায়দার খাঁ, বড়চত্রা গ্রামের জালাল হাওলাদার, পাড়ডাকুয়া গ্রামের মো. মতলেব গাজী, উলানিয়া বন্দরের নিত্যহরি দেবনাসহ আরো ১৮ জন তাঁর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ সময় আসামী গোলাম মাওলা রনি তাঁর বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে ধরেন এবং অন্যান্য আসামীরা তাঁর কাছ থেকে নগদ ৩৬ হাজার ৭০০ টাকা, তিনটি মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়।

ওসি এস এম জিয়াউলহক বলেন, ‘বেআইনি জনতাবদ্ধে ভয় দেখিয়ে চাঁদাদাবি, চাঁদাদাবিতে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ১৪৩, ৩৮৬, ৩৮৭, ধারায় এ মামলাটি নেওয়া হয়েছে। রোববার রাত নয়টা ৪৫ মিনিটে এ মামলাটি রেকর্ড করা হয়।’

মামলা দুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা দুটি এফআইআরের পর তদন্ত কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আসামীদের গ্রেপ্তারেও পুলিশের তৎপরতাচলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আসামীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’

এর আগে গত রোববার সাংসদ গোলাম মাওলা রনির বিরুদ্ধে গত সাড়ে চার বছরে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ৭৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে পটুয়াখালী দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা করেন দশমিনার বাসিন্দা মো. জামাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। মামলাটিতে রনিসহ তাঁর ১৪জন অনুসারীকে আসামী করা হয়। আদালতের বিচারক জেলা দায়রা জজ ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আবু জাফর মো. নোমান মামলাটির গ্রহনযোগ্যা শুনানির জন্য আগামী ২০ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইন্ডিপেনডেন্টের দুই সাংবাদিককে মারধর করার ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা একটি মামলায় গত ২৪ জুলাই সাংসদ রনি গ্রেপ্তার হন। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top