সকল মেনু

কুমিল্লায় ভূয়া সাংবাদিক ইলিয়াস সবুজ গ্রেফতার

images (32)এইচ খান কুমিল্লা: কুমিল্লার সীমান্তবর্তী বড়জ্বলা এলাকা থেকে মদ পান করে মাতলামি করা অবস্থায় তিন ভুয়া সাংবাদিককে আটক করেছে বিজিবি। রোববার বিকেলে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন, মো. ইলিয়াস সবুজ (২৮), মো. মঞ্জিল (৩০) ও মো. রাসেল মাহমুদ (৩০)। মাইক্রো বাসটিসহ তাদেরকে কোতয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিভিন্ন পত্রিকার নাম ব্যবহার করে তদবিরবাজ, প্রতারণা, বিভিন্ন লোকদের হয়রানি, ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আসছিল ভূয়া সাংবাদিক ইলিয়াস সবুজ। কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তির প্রভাব খাটিয়ে কুমিল্লায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করে ইলিয়াস সবুজ। এক সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় সে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তার এই অপকর্মের দায়ভার নিতে অনিচ্ছুক ছিল ওই প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। পরে বিভিন্ন মামলা কাঁদে নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে ইলিয়াস সবুজ। এ পথ এসে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় ফেনসিডিল পাচার করতো। ফেনসিডিল পাচারের সময় নারায়নগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে আটক করে ৩ মাস জেল খেটে পুনরায় কুমিল্লায় এসে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। তার অত্যাচারে পুলিশ, ডিবি, আবাসিক হোটেল, খাওয়ার হোটেল, বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, বিভিন্ন থানা, কাপড়ের দোকান, কাচা মালের আড়ৎ, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মাসোহারা নিতো। পরবর্তীতে একই রাজনৈতিক ব্যক্তি এক সাংবাদিককের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তার। ওই সাংবাদিকের সাথে প্রতিদিন সে বিভিন্ন স্থানে চলাচল করতো। পরে সে আস্তে আস্তে সাংবাদিকতার খাতায় নাম দেয়। শুরু করে ক্ষমতাসীন হলের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির দৈনিক একটি পত্রিকায় লেখা লেখি। লেখা যাই হোক তাই ছাপাতো ওই পত্রিকায়। কখনো যাচাই বাছাই ছাড়াই ইলিয়াস সবুজের নাম দিয়েই ছাপা হতো তার সংবাদ। ফলে এ পত্রিকাটি নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন জনদেরকে দেখাতো সে একজন বড়মাপের সাংবাদিক। সাংবাদিকতায় নাম দেওয়ার পর সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। বেশ কিছুদিন ধরে, কুমিল্লার কাগজ, রূপসী বাংলা, ময়নামতি, বাংলার আলোড়ন, মুক্তির আলো, মুক্তির লড়াই, ইউনিভাসেলসহ বিভিন্ন পত্রিকার পরিচয় দিয়ে ধান্দাবাজি, প্রতারণা করে আসছিল। তার সাথে সব সময় একটি ছুরি, কাটা,সহ বিভিন্ন কিছু থাকতো। ১ বৎসরের মাথায় সে বিভিন্ন ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী, আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিতো, পুলিশ কোন আসামী আটক করলে রাজনৈতিক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে ওই আসামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে বিভিন্ন ভাবে তদবির, হয়রানি করতো। ক্ষমতাসীন ওই প্রভাবশালী রাজনৈতিক বিরুদ্ধে কুমিল্লার বিভিন্ন প্রশাসনের লোকজন তার উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ছিল। সে বিভিন্ন পত্রিকার নাম ব্যবহার করে প্রশাসনের সাথে প্রতারণা করছে। রোবাবর বিকালে ভারত থেকে সে ও তার ৩ সাংবাদিকদের নিয়ে মদ্যপান অবস্থায় বিজিবি আটক করার পর সে কুমিল্লার ডাক পত্রিকার পরিচয় দেয় এবং কুমিল্লা ১০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের ঘনিষ্ঠ লোকজন জানান। পরে অধিনায়ক তাকে চিনেন না এবং তাকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে কুমিল্লার ডাক পত্রিকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকের সাথে বিজিবি যোগাযোগ করলে এ নামে কোন সাংবাদিককেই তারা চিনেন না বলে জানান। এবং তাদের পত্রিকায় কাজ করে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অসহায় মানুষদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিতো বহু অর্থ। প্রশাসন নিরূপায় হয়ে তার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। সে কুমিল্লার কোন সংগঠনের সাথে জড়িত নয়। এমন কি কুমিল্লা প্রেস ক্লাবও সে সদস্য নয়। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরী ও ডিবি রয়েছে। ঈদের আগের দিন ৯ আগষ্ট কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়িতে এসআই ফিরোজ মিয়ার সামনে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সিনিয়র এক সাংবাদিককে ছুরি দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেছিল। পরে আরেক সহকারী সাংবাদিক ও ফিরোজ মিয়া তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু ফিরোজ মিয়া ভুয়া সাংবাদিক ইলিয়াস সবুজের দাপটের কারণে তাকে গ্রেফতার করেনি। এ ঘটনায় কুমিল্লার সাংবাদিকদের মধ্যে নিন্দার ঝড় উঠে। কুমিল্লা প্রেসক্লাব’র সহসভাপতি শহীদুল হক সেলিম, মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী এনামুল হক ফারুক, নির্বাহী সদস্য দেলোয়ার হোসেন জাকির, সাংবাদিক ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, কাজী শামীম আহমেদ, দেলোয়ার হোসাইন আকাইদসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক মহলের মধ্যে ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠে। সকলে জানান এ ভুয়া সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। পরে ওই সাংবাদিক কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আইয়ুব এর নিকট একটি অভিযোগ দাখিল করেন। পরে অভিযোগ যাতে গ্রহণ না করে সে জন্য তাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে অপর এক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক। কুমিল্লা ১০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের মেজর মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, বড়জ্বলা সীমান্ত এলাকায় মদ পান করে মাতলামি করা অবস্থায় বড়জ্বালা বিজিবির টহল দলের সদস্যরা একটি মাইক্রোবাস আটক করা হয়। এসময় মাইক্রোবাসে থাকা ৩ জন নিজেদের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়। আটককৃতদের কোতয়ালী থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে তাকে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top