সকল মেনু

আল্লাহ যেন এমন সন্তান কাউকে না দেন, সংবাদ সম্মেলনে তুরিনের মা

হটনিউজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার মা শামসুন নাহার। এসময় তার ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরও উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে নিজ বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ আনেন তারা। একই ঘটনায় ১৪ জুন উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করেছিলেন তার ভাই শিশির।

নিজ মেয়ের কাছে নিগৃহীত হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের মা সামসুন নাহার তসলিম বলেন,আজ দুই বছর তিন মাস ১৯ দিন ধরে আমি আমার বাসার বাইরে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার ১৮ দিন পর আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয় তুরিন। আমার দোষ তার (তুরিন আফরোজ) কিছু আচরণের প্রতিবাদ করা। যেমন, আমাদের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে সবসময় ভাড়ার টাকা আমিই নিতাম। আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ি ভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার ও ওষুধের খরচ চলতো। এরপর ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তুরিন বাসা ভাড়ার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়। অপরিচিত লোকদেরকে রাত-বিরাতে ঘরে প্রবেশ করানো নিয়ে দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে, তুরিনের সঙ্গে প্রায়ই (ঝগড়া) লাগতো। এসব বিষয়ে নিষেধ করলে ডিজিএফআই,র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম করে সে ভয় দেখাতো এবং বলতো— ‘ওরা সবাই তার বন্ধু।’ কোনও কিছু বললেই ৫৭ ধারায় গ্রেপ্তার করানোর ভয় দেখাতো।

তিনি আরো বলেন, আমি তো ধারা বুঝি না। সে (তুরিন) আরও বলতো,‘পৃথিবীর যেখানেই থাকো সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসবো।’ আর তার গান ম্যান দিয়ে ভয় দেখাতো। গ্রামের বাড়ি নীলফামারি যেতে পারি না। সে সেখানকার দায়িত্ব নিয়ে জমিজমা ও বাড়ি নিজের নামে কুক্ষিগত করেছে। প্রতিবাদ করলে কথায় কথায় বড় আপু (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ও ছোট আপুর (প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা) প্রসঙ্গ টানতো।

সামসুন নাহার তসলিম বলেন, এসব জানাতে আমি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে ব্যর্থ হই। ভেবেছিলাম, তিনি একজন মা। ওনার ঘরে এমন হলে উনি কী করতেন? আমরা জানি, উনি অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। আমি আজ মিডিয়ার মাধ্যমে উনার সহযোগিতা কামনা করছি। আমার শরীর ভীষণ খারাপ। ৬৫ শতাংশ কিডনি অকেজো (বলতে গিয়ে সামসুন নাহার কাঁদতে থাকেন)। সঙ্গে আবার ডায়াবেটিকস আছে। ওষুধ কেনার পয়সা বাড়িভাড়া থেকে পেতাম, সেটাও সে কেড়ে নিয়েছে। দেশে থাকার জায়গা নেই। এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াই। আমি আমার দেশ ছেড়ে এ বয়সে কেন বিদেশে পড়ে থাকবো? এ দেশ আমার জন্মস্থান ও আমার ৪৮ বছরের সংসার। আমি তো এখানেই থাকতে চাই। আমি আমার সংসারে ফিরে যেতে চাই। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ক্ষমতার দাপটে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমাকে এবং আমার বিধবা মাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানি করে আসছে। তার কারণ একটিই, আর তা হলো— দেশে আমাদের সম্পদ কুক্ষিগত করা। চক্ষু লজ্জায় এতদিন বিষয়টি আড়াল করে রেখেছি। আমি ও আমার মা ক্ষমতাসীন কাউকে অবমাননা করতে চাইনি। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বাসা থেকে আমাদের বের করে দেওয়ার পরও রাজউকের কর ও ভূমি কর আমি নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। অথচ আমার অনুপস্থিতিতে তুরিন আফরোজ ক্ষমতার দাপট ও প্রশাসনকে সংবিধান বর্হিভূত কাজে বাধ্য করে আমাকে আর আমার মাকে ক্ষতি করছে। ব্যারিস্টার তুরিন শুধু ঢাকাতেই নয়, নীলফামারীতে আমাদের চাচাতো ভাইবোনদের জমিজমাও জিম্মি করে রেখেছে।

এর আগে, ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর বাসায় ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে জিডি (জিডি নম্বর- ১১৮৮) করছিলেন তার ভাই শাহনেওয়াজ শিশির।সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, শিশিরের নিজস্ব ভবনে বসবাস করেন তুরিন আফরোজ। তিনি কানাডা প্রবাসী। কয়েকবছর আগে তাদের মাকে তুরিন সে বাসা থেকে বের করে দেন। পরে মাকে নিয়ে কানাডা চলে যান শিশির। এখন তিনি কানাডা থেকে ফিরে নিজের বাসায় গেলে সেখানে বোন তুরিন আফরোজ তাকে ঢুকতে দেননি।

এরপর চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকার প্রথম যুগ্ম জজ আদালতে বাড়ি দখলের অভিযোগে তুরিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি।মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ২ মার্চ পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে মা শামসুন নাহার এবং অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়ি থেকে বের করে দেন তুরিন আফরোজ। নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে তুরিন বাড়ি ও জমির দলিলপত্রও দখলে নিয়ে নেন।সবশেষ বাসায় ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে গত ১৪ জুন উত্তরা পশ্চিম থানায় আরো একটি জিডি করেন তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির।

আরো পড়ুন, আমি তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ পরিবারের প্রতিহিংসার শিকার : ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ

প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন দাবি করে ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বলেছেন, আমি হাওয়া ভবনের মালিক ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ আলি আসগর লবির পরিবারের প্রতিহিংসার শিকার। আমার ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরের বউ ইশিতা নাসরিন খান হাওয়া ভবনের মালিক আলি আসগর লবির ভাতিজি। তিনি বলেন, আমি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে যোগদানের পর থেকেই হাওয়া ভবনের মালিক তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ আলি আসগর লবির ভাতিজি ইশিতা নাসরিন খান এবং আলি আসগর লবির ভাই সেকেন্দার হায়াত খান আমাকে বিভিন্নভাবে কাজে যোগদান না করার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। পরবর্তীতে আমি রাজি না হলে তারা আমাকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। তুরিন আফরোজ বলেন, সে সময় আমার পিতা জীবিত থাকায় তারা খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি।

পরবর্তীতে আমার পিতার মৃত্যুর কয়েকদিনের মাঝে শিশির তার শ্বশুর বাড়ির প্রলোভনে আমাকে আমার উত্তরাস্থ বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য হুমকি ধমকি ও চাপ প্রদান করতে থাকে। আমি এমতাবস্থায় আইনের আশ্রয় নেই। তিনি আরও বলেন, শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির আমাকে ও আমার মাকে বিবাদী করে দেওয়ানি ১৬১/২০১৮ নম্বর মোকদ্দমা দায়ের করে এবং আমিও একই সম্পত্তির বিষয়ে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ ৫ম আদালতে ১৬২/২০১৮ নম্বর মোকাদ্দমা দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত উভয় মোকদ্দমার শুনানি করে নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমার বাসস্থানভুক্ত সম্পত্তির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। মূলত বর্ণিত সম্পত্তিতে আমার ভাই যেন আমার শান্তিপূর্ণ অবস্থানে কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে সেই মর্মে আদালত আদেশ প্রদান করেন।

তুরিন আফরোজ বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে শুক্রবার সকাল ৮টার সময় শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির তার শ্বশুরবাড়ির প্ররোচনায় জোরপূর্বক বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং আমাকে ও আমার মেয়েকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরবর্তীতে আমি আমার নিরাপত্তার জন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় জিডি করি। তিনি দাবি করেন, শিশির আমাকে আমার বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করাতে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে হাওয়া ভবনের মালিকের পালিত সাঙ্গ পাঙ্গ দিয়ে আমার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে কুৎসা রটনা করে যাচ্ছে। তুরিন আফরোজ বলেন, আমি প্রশাসন, আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও দেশবাসীসহ সকলকে হাওয়া ভবনের মালিক ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ আলি আসগর লবির পরিবারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top