সকল মেনু

এসএম সুলতানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

 

নড়াইল প্রতিনিধি ,Narail-02১০ আগস্ট :এসএম সুলতান। পুরোনাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। তবে, নড়াইলবাসীর কাছে ‘লাল মিয়া’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। এসএম সুলতানের ৮৯তম জন্মদিন আজ (১০ আগস্ট)। বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিমান কবি আল মাহমুদ এসএম সুলতানকে এভাবেই মূল্যায়ন করেছেন-“তাঁর চেয়ে বড় শিল্পী নিশ্চয়ই আছেন, এই উপমহাদেশেই কয়েকজন আছেন। তবে তাঁর মত মৌলিক নিরপেক্ষতা তাঁদের মধ্যে প্রায় অনুপস্থিত বলা চলে। তাঁর আঁকা সব নর-নারীই বাস্তবের চেয়ে একটু সুন্দর, পেশীবহুল, নিখুঁত ও কর্মপরায়ণ। ফিগারগুলো বাস্তবের চেয়ে একটু বিস্তৃত। এই বাহুল্যই সুলতানের প্রতিটি রচনাকে মহিমা দিয়েছে।” বরেণ্য এই গুণী শিল্পী ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মেছের আলী। মা মাজু বিবি।

তার সংক্ষিপ্ত জীবন ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজমিস্ত্রি বাবার সংসারে দারিদ্রতার মাঝেও ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন শেখ মোহাম্মদ সুলতান। স্কুলের অবসরে বাবাকে কাজে সহযোগিতার করার সময় ছবি আঁকতে শুরু করেন। এ সময় তার আঁকা ছবি স্থানীয় জমিদারদের দৃষ্টি আর্কষণ হয়। রাজনীতিক ও জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে নড়াইলের জমিদার ব্যারিস্টার ধীরেন রায়ের আমন্ত্রণে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে গেলে তার একটি পোট্রেট আঁকেন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র এসএম সুলতান। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ অন্যরা। লেখাপড়া ছেড়ে ১৯৩৮ সালে কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা ও জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। সে সময় চিত্র সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান। ১৯৪৩ অথবা ’৪৪ সালে আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। এ সময় কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতীয়দের সাথে বসবাস এবং জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাংকন শুরু করেন। ১৯৪৫ মতান্তরে ’৪৬ সালে ভারতের সিমলায় তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতিমা জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে লাহোরে সুলতানের চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানের জন্য তিনি আমেরিকা যান। এরপর ইউরোপের বেশ কয়েকটি একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালি, পল ক্লী প্রমুখ খ্যাতিমান শিল্পীদের ছবির পাশে সুলতানই এশিয়ার একমাত্র শিল্পী যার ছবি এসব প্রদর্শনীতে সুযোগ লাভ করে। ১৯৫৩ সালে জন্মভূমি নড়াইলে ফিরে গ্রামের শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠা করেন তিনটি স্কুল। এরপর নড়াইল থেকে শুরু করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন এবং ঘুরেছেন। শিশু-কিশোর প্রিয় সুলতান ১৯৮০ সালে শিল্পী নিজ বাড়িতে শুরু করেন শিশুস্বর্গের নির্মাণকাজ। ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ নামে দ্বিতল নৌকা নির্মাণ করিয়েছিলেন। সুলতানের শিল্পকর্ম ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি। চিত্রাংকনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতে পারতেন। পুষতেন সাপ, ভলুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিক, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন পশু-পাখি। হিংস্রতা, হানাহানি ও বিবাদ সহ্য করতেন না।

চিত্রাপাড়ের লালমিয়া শিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে পেয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার। এছাড়া দেশের মধ্যে ১৯৮২ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর অসুস্থ অবস্থায় যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রামে তাকে শায়িত করা হয়।

আজ (শনিবার) তার জন্মদিনে সকাল ১০টায় পুস্পমাল্য, কোরআনাখানি ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাওলাদার মোঃ রকিবুল বারী, এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু, এস এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অশোক কুমার শীল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিমানেশ বিশ্বাস, চিত্রশিল্পী বলদেব অধিকারী, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুলক কবীর টুকুসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আগামি ২৯ আগস্ট থেকে সুলতান জন্মোৎসব শুরু হচ্ছে। শেষ হবে ১ সেপ্টেম্বর। ২৯ আগস্ট জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং বাংলালিংক এর সহযোগিতায় চিত্রা নদীতে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হবে। এসএম সুলতান শিশুচারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সুলতান মঞ্চে ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর তিনদিনব্যাপি সুলতান উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top