সকল মেনু

ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া ময়দান

Solakia20130808032714
আছাদুজ্জামান,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা :দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। ঈদ জামাতকে সামনে রেখে সম্পন্ন করা হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি।প্রতি বছর ঈদুল ফিতরে এ ময়দানেই অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জামাত। প্রায় তিন লক্ষাধিক মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করেন এখানে। এছাড়া প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে জামাতের কলেবর।এদিকে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে ।মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিশেষ ট্রেন নিশ্চিত করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও শোলাকিয়া মাঠ থেকে ঈদের জামাত সরাসরি সম্প্রচার করবে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল আই’।

এবারের ১৮৬ তম জামাতে ইমামতি করবেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়।ঈদের নামাজ মাঠে পড়া সুন্নতে মোয়াক্কাদা বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট আলেমরা। এছাড়া যে জামাতে মুসল্লি যত বেশি হয় ছওয়াবও তত বেশি হয় ও গোনাহ মাফ হয়। মূলত এ বিশ্বাস থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শোলাকিয়ায় নামাজ পড়তে আসেন।

২৬৫টি কাতার সম্বলিত শোলাকিয়া ঈদগাহের জামাতে প্রতি বছরই দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। জামাত শুরুর মুহূর্তে মাঠের অনুচ্চ প্রাচীরের বাহিরের সড়ক, নদীর পাড় এবং আশপাশের এলাকায় মুসল্লিদের কাতার ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে ঈদের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হলেও এর যাত্রা শুরু হয় ১৭৫০ সালে। পরবর্তীতে মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হযরত খানের উত্তরসূরি দেওয়ান মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সালে ৪ দশমিক ৩৫ একর ভূমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করে দেন। দেওয়ান সাহেবের মা মাহমুদা আয়শা খাতুনের অসিয়ত মোতাবেক এ ওয়াকফনামা সম্পাদিত হয়।

পরবর্তী সময়ে অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত জমি মিলে বর্তমানে এ জায়গার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ একর, যা আগত মুসল্লির মাত্র অর্ধেকের কিছুটা বেশি ধারণ করতে পারে।

এ এলাকার পূর্বনাম ছিল রাজাবাড়িয়া। জনশ্রুতি আছে, ঈদগাহ মাঠের প্রথম বড় জামাতে সোয়া লাখ লোক অংশ নিয়েছিলেন। যে কারণে এর নামকরণ করা হয় সোয়ালাখিয়া।

ভিন্নমতে, মোঘল আমলে এখানকার পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। সেই থেকে এর নাম হয় সোয়া লাখিয়া।পরবর্তীতে উচ্চারণগত ভিন্নতার কারণে এই ঈদগাহ মাঠ শোলাকিয়া নামেই বেশি পরিচিতি লাভ করে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মাঠের সার্বিক সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে।

তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী-এমপিসহ মুসলিম বিদেশি কূটনীতিকদের এ মাঠে নামাজ আদায়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

কর্মীরা মেহরাবের চুনকাম, মাঠে দাগ কাটার কাজ ও ওজুখানা পরিষ্কার করেছেন। ঈদের দিন শহরের বিভিন্ন সড়ক ও মাঠের প্রবেশ পথে কঠোর ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে। জরুরি ও সংবাদপত্রের গাড়ি ছাড়া কোন গাড়ি শহরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পোশাকি সিকিউরিটির পাশাপাশি র‌্যাব সদস্য ও ছদ্মবেশে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠ ও মাঠের বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরো জানান, ঈদের জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য স্বেচ্ছাসেবক দল ও স্কাউটদের নিয়োগের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ইতিমধ্যেই ঈদকে স্বাগত জানিয়ে বড় বড় তোরণ নির্মাণ, সড়কদ্বীপে রং-বেরংয়ের ব্যানার-পোস্টার স্থাপন করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, মাঠে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং পুরো এলাকাটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। মাঠে ঢোকার ২২টি গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক জানান, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top