সকল মেনু

বিদ্যুতে ভর্তুকি চিরদিন থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

হটনিউজ ডেস্ক: ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় গতকাল ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ ২০১৮’-এর উদ্বোধন শেষে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেশের বিদ্যুৎ খাতকে যেভাবে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল তা নজিরবিহীন, যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি।গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ-২০১৮’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা তুলে ধরে অপচয় বন্ধের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই ভর্তুকি চিরদিন থাকবে না।শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের খরচ হচ্ছে ছয় টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু আমরা বিক্রি করছি চার টাকা ৮২ পয়সায়। অর্থাৎ আমরা এখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে খরচ সেটা কিন্তু আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে নিচ্ছি না।’ কিন্তু একসময় এ সুযোগ আর থাকবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় আর্থ-সামাজিক উন্নতি যখন হবে, তখন যতটা খরচ ততটাই দিতে হবে। আমার একটা অনুরোধ থাকবে, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করার জন্য আমি অনুরোধ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, চারদিকে হাহাকার, এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের ঘরে আলো ছিল না। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য সর্বপ্রথম আইন করে আমরা বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করি এবং বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেই।’তিনি বলেন, ‘আমরা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে নিয়ে যেতে সক্ষম হই। সেই সঙ্গে জেনারেটরের ওপর থেকে সকল ট্যাক্স তুলে দেই এবং শিল্প-কারখানার মালিকদের বলে দেই আপনারাও আপনাদের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করুন এবং সেই বিদ্যুৎ আশপাশে বিক্রিও করতে পারবেন। আমরা গ্রিড লাইন আপনাদের ভাড়া দেব। কিন্তু ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকারে আসি তখন দেখি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ যা আমরা রেখে গিয়েছিলাম, তার থেকে কমে তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট হয়ে গেছে।’

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ২০০১-০৬ মেয়াদে বিদ্যুতের বেহাল দশার উল্লেখ করে বিস্ময় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। পৃথিবীর আর কোনো দেশের জনগণের এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচ বছরে কোনো দেশ এভাবে পিছিয়ে যায় সেটাও আমার জানা ছিল না।’আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে গত প্রায় ১০ বছরে দেশের বিদ্যুৎ খাতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং যেসব সাফল্য এসেছে তার বিস্তারিত অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার মেগাওয়াটে। গত সাড়ে ৯ বছরে মোট ২৪ হাজার ৩৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩৫টি বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি বিদ্যুেকন্দ্র চালু হয়েছে এবং প্রায় ১২ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

বর্তমান সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত, সেখানে গত সাড়ে ৯ বছরে তা ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা ছিল এক কোটি আট লাখ, তা এখন তিন কোটির বেশি।শেখ হাসিনা সম্প্রতি নেপালের কাঠমাণ্ডুতে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে বিদ্যুৎ খাত নিয়ে আলোচনা করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা একটা বিমসটেক সোলার গ্রিড লাইন করে দিচ্ছি। এই আন্তর্দেশীয় গ্রিড লাইনের মাধ্যমে কে কত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, তা থেকে বাংলাদেশ কিনবে, এটা আমরা স্পষ্ট করে ফেলেছি। আঞ্চলিক সহযোগিতার যুগান্তকারী পদক্ষেপটা আমরা ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছি।’ভারত থেকে বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সেখান থেকে আরো বিদ্যুৎ আমদানির আলোচনা চলছে। ভুটান ও নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top