সকল মেনু

এবার পোস্তার মোড়ে মোড়ে চামড়ার স্তূপ

হটনিউজ ডেস্ক: এবার কম দামে কোরবানির চামড়া কিনতে একটি চক্র মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।এতে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। এ বছর নানা অজুহাতে পাড়া-মহল্লার মসজিদ-মাদ্রাসা পরিচালনাকারী কমিটির লোকজন থেকে শুরু করে কোরবানিদাতা— কেউই চামড়ার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ‘চামড়ার চাহিদা নেই’— বলে দায়সারা গোছের দাম দিতে চাইছেন ট্যানারি ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছে কম দামে কেনার উদ্দেশ্যে তাদের একটি চক্র মাঠে নেমেছে। এই চক্রের কারসাজিতে এ বছর পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে যারা চামড়া কিনেছেন তারা পড়েছেন বিপাকে। তাই বিক্রি করতে নিয়ে আসা চামড়া পড়ে আছে রাজধানীর লালবাগের পোস্তা এলাকার রাস্তার মোড়ে-মোড়ে।

পোস্তায়এলাকায় প্রবেশ করলেই ছোট-বড় চামড়ার স্তূপ চোখে পড়ছে। বিক্রেতাদের আশঙ্কা, সময়মতো লবণ দিতে না পারলে বা বিক্রি করতে না পারলে এই চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে।রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ হোসেন আলী বলেন, ‘৯০ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া বিক্রি করলাম মাত্র সাড়ে চারশ’ টাকায়। উপায় নেই। বেশি সময় রাখলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অল্পমূল্যেই বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।’বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা বরকত আলী কোরবানির জন্য গরু কেনেন ৬০ হাজার টাকা দিয়ে। কোরবানিও দিয়েছেন। মহল্লায় চামড়া কিনতে যারা এসেছেন, তারা এই চামড়ার মূল্য বলেছেন মাত্র ৩০০ টাকা। উপায় না দেখে তিনি এই চামড়া দান করেছেন স্থানীয় নুরানি মাদ্রাসায়।

শুধু বরকত আলী নয়, একই মহল্লায় মোবারক ভূইয়া, আহসান হাবীব রুবেল নিজ নিজ এলাকার মাদ্রাসা ও মসজিদে দান করে দিয়েছেন নিজের কোরবানি করা পশুর চামড়া।অভিযোগ পাওয়া গেছে, একটি সিন্ডিকেট ছল-চাতুরীতে কম দামে চামড়া কেনার চক্রান্ত করছে। গত বছর এক কোটি পিস চামড়া কিনলেও এ বছর ট্যানারি ব্যবসায়ীরা সোয়া কোটি পিস পশুর চামড়া কিনবে বলে নির্ধারণ করছেন। তবে বেমালুম চেপে যাচ্ছেন সেই বিষয়টি। উল্টো তারা বলছেন, গত বছরের চামড়ার ৫০ শতাংশ রয়ে গেছে। নতুন করে চামড়া কেনার আগ্রহ নেই। এসব অজুহাতে তারা সরকারের কাছ থেকে গত বছরের দরেই চামড়া কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন। গতবছর প্রতি ফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা ও খাসির চামড়া সারাদেশে ২২ টাকা দরে কিনেছেন। এবার তারা প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম চার টাকা কমিয়ে দর নির্ধারণ করেছেন। পাশাপাশি শর্ত দিয়ে রেখেছেন, চামড়ায় লবণ মাখানো হতে হবে। ঢাকার বাইরে এই চামড়ার দর হবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লবণ মাখানো প্রতিফুট খাসির চামড়ার মূল্য ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ টাকা। এভাবেই দেশের চামড়া খাত এখন পুরোপুরি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ট্যানার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মাহিন সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘হাজারীবাগ থেকে আমাদের চামড়া কারখানাগুলো গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। এখনও সাভারের স্থানান্তরিত কারখানাগুলো পুরোপুরি কাজ করা যায়নি। ফলে কোরবানির পশুর সব চামড়া সেখানে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার মতো জায়গা, ব্যবস্থা বা সক্ষমতা আমাদের নেই। এ কারণে আমরা এবার চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছি না।’খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দরে নেতিবাচক ধারা না থাকলেও বাংলাদেশে কমানো হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদের আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গরু ও খাসির চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও একটি মহল তা মানেনি। চামড়া ভালো দরে বেচতে ব্যর্থ হলে তা ভারতীয় মাড়োয়ারিদের কাছে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার বাজার ও বিক্রেতাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছেন।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের চামড়ার বাজার চার হাজার কোটি টাকার। এই কোরবানির ঈদে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে। স্থানীয় বাজারে চামড়ার ব্যবহার বাড়ছে। এ কারণে এখন দেশেই প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ স্থানীয় চামড়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প। দেশের চামড়া ব্যবসায় ঢাকার পোস্তার পরেই নাটোরের অবস্থান। দেশে সারাবছর যে চামড়া আসে তার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদ থেকে। সারাবছরের জন্য সোয়া কোটি পিস চামড়া কেনার লক্ষ্য নির্ধারিত হলেও কোরবানির ঈদেই পাওয়া যায় ৬০ লাখ পিস চামড়া। সারাদেশে মোট ট্যানারির সংখ্যা ২১০টি হলেও সরকারের খাতায় এ সংখ্যা ১৫৫। হাজারীবাগের ট্যানারিতে যে ১৫৫টি কারখানা ছিল সেগুলোর কারখানার অনুকূলে সাভার ট্যানারি পল্লিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার পরিস্থিতি আসলেই খারাপ। তাই দাম কম ধরা হয়েছে, যাতে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই টিকে থাকে। চামড় শিল্পকে টিকিয়ে থাকতে সরকার সব উদ্যোগ নেবে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top