হটনিউজ ডেস্ক: অবশেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সোমবার (৬ আগস্ট) মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। অনুমোদিত এই আইনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের যোগ্যতা: এই আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে পেশাদার চালককে ৮ম শ্রেণি পাস ও বয়স ২১ বছর হতে হবে। এছাড়া অপেশাদার চালকের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সের বিধান রাখা হয়েছে।উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যা ও বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ে হতাহত: এই আইনে বলা হয়েছে, হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো হয়েছে বলে মনে হলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হবে। এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি। প্রতিবেদনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পেলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় শাস্তি সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আর তদন্ত প্রতিবেদনে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে হতাহতের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সড়ক পরিবহন আইনের ১০৩ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর জেল অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। অর্থদণ্ডের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন।
চালকের পয়েন্ট কর্তন: এই আইনের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্সে ১২টি বিশেষ পয়েন্ট রাখা হয়েছে। প্রতিটি অপরাধের বিপরীতে সেই পয়েন্টগুলো কাটা হবে। পয়েন্ট কাটতে কাটতে একসময় নীল হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। মোটরযান চলাচলে সাধারণ অপরাধ হিসেবে ২৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনায় নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চালকের সহকারী দিয়ে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মোবইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো যাবে না।
লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিলের শর্ত: এই আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে, লাইসেন্সধারী অসুস্থ, অপরাধী, অপ্রকৃতস্থ বা মদ্যপ বলে প্রমাণিত হলে বা অন্য কোনও কারণে মোটরযান চালনায় অযোগ্য প্রতীয়মান হলে তার লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিল করা হবে।
শহর ভিত্তিক গাড়ির সংখ্যা: নতুন আইনের ৩৩ ধারায় শহরভিত্তিক মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী সরকার পূর্বানুমতিক্রমে শহরভিত্তিক যানবাহনের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেবে। নির্ধারিত সংখ্যা বেশির যানবাহনের অনুমতি বা রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। দেশের যেকোনও এলাকার জন্য যেকোনও মোটরযানের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে।
পরিবহন মালিক-চালকের মধ্যে লিখিত চুক্তি ও পরিবহন মালিকের শাস্তি: এই আইনেপরিবহন মালিককে ২০০৬-এর শ্রম আইন অনুযায়ী অবশ্যই চালকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করতে হবে। লাইসেন্স ও চুক্তিপত্র ছাড়া কেউ কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না। চুক্তি না করলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। চালকের সঙ্গে চুক্তিপত্র ছাড়া কোনও মালিক তার মোটরযানে চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে মালিকেরও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বিশেষ ক্ষেত্রে রুট পারমিট থেকে অব্যাহতি: নতুন আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী সরকারি যানবাহন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, লাশ বহনকারী যানবাহনকে রুট পারমিট নেওয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।চালক-হেলপারের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ: এই আইনের ৩৯ ধারায় চালক ও তার সহকারীর কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। যা ২০০৬ সালের শ্রম আইনের আলোকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। মালিককে তা মানতে হবে।
সংরক্ষিত আসনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি: নারী, শিশু, প্রতবন্ধী ও বয়োজ্যেষ্ঠ যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বিধান রাখা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত এসব আসনে সাধারণ যাত্রী বসা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা অমান্যে ১ থেকে ৩ মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
উল্টোপথে গাড়ি চালানো: নতুন আইনে উল্টো পথে বা ফুটপাত দিয়ে গাড়ি চালালোর ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে জেল-জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।