সকল মেনু

কোটা ব্যবস্থা যেভাবে এলো

আফিফা জামান আইভি, হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার হিসেবে ১৯৭২ সালে কোটা চালু করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন সরকারি কর্মচারী নিয়োগে মেধা কোটা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। এছাড়া ৪০ শতাংশ জেলা কোটা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর ১০ শতাংশ ছিল যুদ্ধাহত নারী কোটা। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর পরিবর্তন আসে কোটায়। ১৯৭৬ সালে মেধা কোটায় বরাদ্দ হয় ৪০ শতাংশ, জেলা কোটায় ২০ শতাংশ ও আগের মতোই মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয় ৩০ শতাংশ।

১৯৮৫ সালে আবারও পরিবর্তন আনা হয় কোটা ব্যবস্থায়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ শতাংশ, জেলা কোটায় ১০ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয়। আর প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য রাখা হয় ৫ শতাংশ কোটা।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু করেন। আর সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য কোটা পদ্ধতি তো চালু আছেই। সবশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা ভিত্তিক কোটা নির্ধারণ করা হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে কোটার প্রচলন প্রথম শুরু হয় ১৯১৮ সালে। সিভিল সার্ভিসে ব্রিটিশদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় ভারতীয়দের জন্য আলাদা কোটার ব্যবস্থা করা হয় তখন থেকে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষায় অনগ্রসর মুসলমানদের জন্যও আলাদা কোটা রাখা হয়। পাকিস্তান আমলে পিছিয়ে পড়া পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) মানুষদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চালু করা হয় প্রদেশ ভিত্তিক কোটা। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সংস্থাপন সচিবের এক নির্বাহী আদেশে কোটা পদ্ধতি প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে বাংলাদেশে।

বর্তমানে দেশে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও মেয়ে, নাতি-নাতনি কোটা, জেলা কোটা, উপজাতি কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটাসহ বিভিন্ন কোটা বিদ্যমান। সরকারি চাকরির কোটার বিন্যাস হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ২০০১ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলা ভিত্তিক কোটা চূড়ান্ত করে সরকার।

জনসংখ্যাভিত্তিক জেলা কোটা (১০ শতাংশ) অনুযায়ী উপযুক্ত প্রার্থী দিয়ে তা পূরণ করতে হবে। জেলা কোটার সব পদ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ সম্ভব না হলে জাতীয় মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হয়।

২০১০ সালের ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্রে বলা হয়, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান/নাতি-নাতনি, নারী কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ। প্রথমে জনসংখ্যা ভিত্তিক জেলা কোটা (১০ শতাংশ) অনুযায়ী উপযুক্ত প্রার্থীদের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। জেলা কোটার সব পদ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ সম্ভব না হলে জেলা কোটার জাতীয় মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে।

বিভিন্ন জেলার বিতরণ করা কোটায় যোগ্য প্রার্থী বিবেচিত না হলে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিশেষ কোটার প্রার্থীদের দিয়ে বিশেষ কোটাভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও উপজাতীয়দের জন্য জাতীয়ভিত্তিক মেধা তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। এরপর বিশেষ কোটার অধীন জাতীয় ভিত্তিক স্ব স্ব কোটার প্রার্থীদের জাতীয় তালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

২০১৩ সালের পরিপত্রে বলা হয়— শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের জন্য সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে প্রেষণে ও নির্দিষ্ট মেয়াদে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে।

সংবিধান অনুযায়ী কোটা

কোটা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। সংবিধানের ২৮ নং অনুচ্ছেদে রয়েছে— কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করতে পারবে না রাষ্ট্র।

সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে— সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বা পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিক সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বা পদের জন্য অযোগ্য হবেন না কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য দেখানো যাবে না।

২৯ নং অনুচ্ছেদেই জানানো হয়েছে, নাগরিকদের যে কোনও অনগ্রসর অংশ যেন সরকারি চাকরিতে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশে তাদের কল্যাণে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top