সকল মেনু

কেন লর্ড কারলাইল খালেদা জিয়ার মামলায় ?

আফিফা জামান আইভি,হটনিউজ২৪বিডি.কম,ঢাকা: খালেদা জিয়ার মামলায় সহযোগিতা করতে ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতা ও আইনজীবীদের মতে, ব্রিটিশ এই আইনজীবীর নিয়োগ যতটা আইনি প্রয়োজনে, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক কারণে। তারা মনে করেন, কারলাইলের নিয়োগে দলের চেয়ারপারসনের মামলা, দেশের বিদ্যমান গণতান্ত্রিক অবস্থা, মানবাধিকার ও বিচারব্যবস্থার চলমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আরও বিস্তৃত করা যাবে। তবে কারলাইলের শারীরিক উপস্থিতির বিষয়টি নির্ভর করছে আদালতের অনুমতি ও বার কাউন্সিলের অনুমোদনের ওপর। যার প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু করবেন বিএনপির আইনজীবীরা।

দলীয়সূত্র জানায়, আপিল বিভাগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার চূড়ান্ত শুনানি শুরু হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই বিদেশি অভিজ্ঞ আইনজীবীকে কোর্টে নিতে চাইছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার বিষয়ে শক্তিশালী বৈশ্বিক জনমত গঠনেও সহযোগিতা দেবেন লর্ড কারলাইল। বিশেষ করে, পশ্চিম ও ইউরোপের দেশগুলোয় বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ‘ঘাটতিগুলো’ তুলে ধরবেন তিনি। প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আগামী ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে রেখেছেন।

ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, ‘ব্রিটেনে যারা বিএনপির সমর্থক আছেন, তারা ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা ৩৬টি মামলায় দেশের আইনজীবীদের সহযোগিতা ও আইনি পরামর্শ দেবেন। প্রয়োজন হলে তিনি বাংলাদেশে আসবেন।’ তিনি এও জানান, ‘লর্ড কারলাইল দীর্ঘদিন আইন পেশা ও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসেরও সদস্য।’ জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘লর্ড কারলাইলকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি আমাদের আইনজীবীদের পরামর্শ দেবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলা ও তার জেলে থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ ফোকাসে আলোচনা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে। জাতিসংঘ তো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খালেদা জিয়াকে জেলে দেওয়ায়।’ বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হোক, এটা সবাই চায়। খালেদা জিয়াকে এ ধরনের সাজা দেওয়ার কারণে সেটা সম্ভব হবে কিনা, অলরেডি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রয়েছে।’

দুদক ও সরকারের যৌথ আগ্রহে খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল হওয়ার পর তার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। লর্ড কারলাইলের নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের বিষয়টি বিবেচনা করে লর্ড কারলাইলের মতো ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ পাওয়ায় বিষয়টি আরও সমৃদ্ধ হবে বলে বিশ্বাস করি। পাশাপাশি ব্রিটিশ আইনে কীভাবে মানবাধিকার অনুশীলন করতে হয়, সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দেবেন।’

আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘লর্ড কারলাইলের পরামর্শ পেলে আমরা সমৃদ্ধশালী সাবমিশন নিয়ে আদালতকে বোঝাতে পারবো। তিনি এই বিষয়গুলো অবলোকন করলে আন্তর্জাতিকভাবেও যোগাযোগ রক্ষা করা যাবে। পাশাপাশি বাইরের বিষয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারবেন। কীভাবে এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটিও আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে পারবেন।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবী নিযুক্ত হওয়ার পর মঙ্গলবার লর্ড কারলাইল বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক আইন ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে আইনগত পরামর্শ দেবো।’ বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের নীতি-নির্ধারকরা ঐকমত্যের ভিত্তিতেই বিদেশি আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশীয় আইনে এ নিয়ে কোনও বাধা না থাকায় ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইলকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আইনজীবী ও দলের নেতাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের পরেই লর্ড কারলাইলকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’ দলটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘লর্ড কারলাইল ইংল্যান্ডের একজন আইনজীবী, তিনি পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য। তার প্রোফাইল অনেক বড়। তিনি আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে ডিফেন্স পলিসি অ্যাডভাইসর হিসেবে কাজ করবেন।’

বিএনপির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা জানান, লর্ড কারলাইলের নিয়োগের বিষয়ে প্রথমে সিদ্ধান্ত আসে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকেই। এরপরই দলের আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যদিও বিএনপির কোনও কোনও নেতা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মামলা মোকাবিলায় দলের আইনজীবীদের ব্যর্থতা রয়েছে। এ কারণেই বিদেশি আইনজীবীকে নিয়োগ দিতে হলো বিএনপিকে।

দলের ধনাঢ্য এক ভাইস চেয়ারম্যান কাছে অভিযোগ করেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়ার জটিলতার পেছনে আইনজীবীদের ব্যর্থতা অবশ্যই রয়েছে। শুরু থেকে আনইজীবী বলে আসছেন এ মামলার সঙ্গে খালেদা জিয়া কোনও সম্পৃক্ততা নেই। তাহলে কেন তার জামিন হচ্ছে না। এখানে সরকারের যেমন ষড়যন্ত্র রয়েছে, তেমনি আইনজীবীদেরও ব্যর্থতা রয়েছে। ’ যদিও খালেদা জিয়ার মামলায় অন্যতম আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘লর্ড কারলাইলের নিয়োগে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। তবে তা জানি না। তার পক্ষে বাংলাদেশে আসা সম্ভব কিনা, বার কাউন্সিল পারমিশনের অপেক্ষা করতে হবে।’

তবে মাহবুব হোসেন জোর দিয়ে বলছেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী হিসেবে বলতে পারি, তার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় বিদেশি কোনও আইনজীবীর দরকার নেই। নেত্রীর জামিনের বিষয়টি আটকে আছে সরকারের সদিচ্ছার কারণে। এক্ষেত্রে বিদেশি কোনও পরামর্শের দরকার নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিদেশি কোনও ল’ইয়ারের প্রয়োজন নেই। এটা সংবিধান নিয়ে কোনও মামলা নয়, এটা কেবল ফৌজদারি একটি মামলা, টাকা আত্মসাতের মামলা, যেখানে নেত্রীর কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’

লর্ড কারলাইলের নিয়োগের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার জেলমুক্তি কতটা তরান্বিত হতে পারে, এ নিয়ে এখনও পরিষ্কার কোনও অবস্থানে আসতে পারেনি বিএনপি। তবে নেতাদের বক্তব্য ও আচরণ বলছে, কারলাইলের নিয়োগের স্বার্থ আদায় হবে আন্তর্জাতিকভাবেও। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তিনি তো খুব নামকরা আইনজীবী। তবে তিনি সফল হবেন কিনা, এ বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে রাজি না।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ফলাফল কী আসবে, সেটা তো বড় কথা না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি নেত্রীর মুক্তির জন্য।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘লর্ড কারলাইলকে রেজাল্টের জন্য নিয়োগ করা হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি, নেত্রীর মুক্তির। আমরা ফাইনাল হেয়ারিংয়ে একজন ফরেইন এক্সপার্ট চাই, পৃথিবী দেখুক কোর্টে কী চলছে।’ তিনি বলেন, ‘কোর্টের অনুমতি ও বার কাউন্সিলের অনুমোদন মিললে লর্ড কারলাইলকে কোর্টে দেখা যেতে পারে। আর সে চেষ্টাও শুরু হবে দ্রুত।’

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কারলাইল সাধারণত গুরুতর অপরাধ, স্থানীয় সরকার ও লাইসেন্স, পরিকল্পনা ও পেশাগত নিয়মশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সরকারি আইনের মামলায় বেশি অংশ নিয়ে থাকেন। সংসদীয় অধিকার ও আচরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের বাণিজ্যিক প্রতারণা বিষয়ক মামলার বেসামরিক ও অপরাধ দিকগুলোয় তিনি বিশেষ পারদর্শী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top