প্রদীপ কুমার সরকার, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি: ভাঙ্গা উপজেলার “ভাঙ্গা ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট”। গবেষনার নতুন নতুন বৈশিষ্ঠের ধান উদ্ভাবনে প্রতিষ্ঠানটি বৈপ্লবিক সাফল্যতা অর্জন করেছে। এলাকার বেশিরভাগ জমিই অপেক্ষাকৃত নিচু জলা ভূমি এবং কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে কৃষকরা অনেক পিছিয়ে। কুমার নদী বিধৌত হওয়ায় মূলত এ উপজেলার কৃষকরা ধান ছাষের উপর নির্ভরশীল। সঠিক চাষাবাদ সম্পর্কে অজ্ঞতা, উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার না করায় কৃষিতে ফলন অনেক কম হয়। ধান চাষ গবেষনা এবং উচ্চ ফলনশীল, গুনগত মান সম্মত জাতের ধান উদ্ভাবনের জন্য ভাঙ্গা বিশ্বরোড সংলগ্ন তুজারপুর বিল উপজীব্য করে প্রতিষ্ঠিত করা হয় ভাঙ্গা ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট। ১৯৮৬ সালে ২৮ একর জায়গার উপর ধানের জমি গ্রহণ করে এ গবেষনা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
গাজিপুরের জয়দেবপুর প্রধান কার্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশে রয়েছে ৯টি আঞ্চলিক গবেষনা কার্যালয়। এর মধ্যে ভাঙ্গা আঞ্চলিক কার্যালয় অন্যতম। বৃহততক্ষ ফরিদপুরের মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুরসহ নড়াইল ও মাগুরা জেলার ধান চাষের জমি এ প্রতিষ্ঠানটির আওতা ভুক্ত ।
প্রথমে এলাকায় জলি আমন ধানকে লক্ষ্য রেখে গবেষণার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত অধিক ফলনশীল প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশে টেকশই জাত উদ্ভাবন করাই ছিল এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য । এ ইনষ্টিটিউটের অধিনে গবেষনার মাধ্যমে ধান উৎপাদনের যে বৈশিষ্ঠ্যগুলো লক্ষ্য রাক্ষা হয় তা হলো, উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন, জিঙ্ক সমৃদ্ধ, জাত উদ্ভাবন, ধানের গুনগতমান সমৃদ্ধ। সম্প্রতি সরেজমিন একদল সাংবাদিককে ইনষ্টিটিউটের উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহ আশাদুল ইসলাম এবং প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: আলমগীর হোসেন প্রদর্শনীটি ঘুরে ঘুরে দেখান এবং উদ্ভাবিত কয়েক হাজার বৈশিষ্ঠের ধান সম্পর্কে ধারনা দেন। সীমানা বেষ্টিত প্রদর্শনীটিতে যে দিকে চোখ যায় দেখা যায় নয়নাভিরাম দৃশ্য। দু সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ সজ্জিত চার পাশ ভবন বেষ্টিত মাঝখানে আঙ্গিনা । ভবনের সামনে বিস্তৃত ধানের প্রদর্শনী ।
আঙ্গিনায় প্রদর্শনী থেকে ধান কেটে এনে শুকিয়ে নম্বর সম্বলিত প্যাকেট করা হচ্ছে। প্রদর্শণী মাঠে সোনালী লালচে, সবুজ পাতা, জিঙ্ক সমৃদ্ধ সহ হাজারও বৈশিষ্ঠের ধান বাতাসে তুলছে। ধানের সু গন্ধে বাতাস মৌমৌ করছে। যতদুর চোখ যায়, চোখে পড়ছে হাজারও নাম অঙ্কিত নেমপ্লেট। কর্মকর্তা দ্বয় সাংবাদিকদের ধারণা দেন যে, প্রদর্শনীতে ১৫ হাজার বৈশিষ্ঠের ধান রয়েছে এবং ৬১টি উন্নতি প্রজাতির সাথে আরও রয়েছে শঙ্করায়ন পদ্ধতির ৪টি হাইব্রীড জাতের ধান। এর মধ্যে ব্রি-ধান-২৮, ব্রি-ধান-২৯, ব্রি-ধান-৫০ ও ব্রি-ধান-৫৫। গবেষনার এর অন্যতম লক্ষ হচ্ছে, জিঙ্ক সমৃদ্ধ, উচ্চফলনশীল, টেকশই জাতের ধান উদ্ভাবন করা। উৎপাদিত ধান বীজ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে খাদ্যে সংস্পূর্ণ করা। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে উন্নত বীজ সরবারাহ এবং চাষাবাদ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে এলাকায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে এলাকার সুবিধা বঞ্চিত কৃষক এবং সুধী সমাজ মনে করেন ভাঙ্গায় কৃষি উন্নয়নে একটি কৃষি ইনষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষনের আওতা ধান গভেষনার অন্তর্ভূক্ত করার দাবী জানান। এর ফলে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হবে বলে এলাকার কৃষক এবং সুধীজনের অভিমত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।