সকল মেনু

ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা

1-5976420130805195249হটনিউজ২৪বিডি.কম,নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা, ৬ আগস্ট: পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই নাড়ির টানে ঢাকা ছাড়ছে উৎসবপ্রেমী মানুষ।
সোমবার থেকে সেই চিরচেনা দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে। এদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় স্টেশনে। গাবতলী বাস ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছু বেশি ছিল।
পরিবহন ব্যবসায়ীদের মতে, ঈদের পর হরতালের কারণে ঘরমুখো মানুষের গৃহযাত্রায় ছন্দপতন ঘটেছে। তাই এবার সড়কপথের যাত্রী কম। তারা জানান, আজ মঙ্গলবার মানুষের গৃহযাত্রা আরও বাড়বে এবং যাত্রীদের মূল ভিড় হবে বুধবার বিকাল থেকে।
অন্যদিকে ঈদের যাত্রা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পথে পথে যানজটও তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
রেলপথ : ট্রেনে ঝুলেই বাড়ির পথে পাড়ি জমাচ্ছেন লোকজন। কর্তৃপক্ষ বলছে, সোমবার থেকে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন ৫২ হাজার আসনের বিপরীতে প্রায় দেড় লাখ ট্রেনযাত্রী ঢাকা ছাড়ছেন। অতিরিক্ত যাত্রীদের বেশির ভাগ বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার খায়রুল বশির জানান, সোমবার ঈদ উপলক্ষে যাত্রার দ্বিতীয় দিন। দিনদিন যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। টিকিটধারী যাত্রীর চেয়েও অনেক বেশি যাত্রী ট্রেনে ভ্রমণ করছেন। বিনা টিকিট যাত্রীদের কোনো প্রকারেই বাধা দেয়া যাচ্ছে না।
টিকিট চেকার ও আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্কাউট সদস্যদেরও রাখা হয়েছে স্টেশনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন টিকিট চেকার জানান, বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে গেটে কারও টিকিট চেক করা মানেই বিপদে পড়া। অনেক যাত্রী তাদের উপর চড়াও হয়ে পড়েন। লামলমনিরহাট, রংপুর এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের বেশ কয়েকজন অ্যাটেনন্ডেন্ট জানান, যাত্রীরা বিশেষ করে কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রথমে ট্রেনে উঠে। ট্রেন ছাড়ার পর ধীরে ধীরে জানালা ও দরজায় পা রেখে ছাদে উঠতে থাকে। তারা কারও রাখঢাক মানে না।

রাজশাহীগামী যাত্রী শাহিন জানান, ছোট ভাই রাসেলকে নিয়ে স্টেশনে দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি তবু সিল্কসিটি ট্রেন আসছে না। ট্রেনটির বিলম্বের কারণও জানা যাচ্ছে না। সড়ক পথে দুর্ঘটনার ভয় যেমন আছে তেমনি ট্রেনেও ছিনতাইকারী, মলম ও অজ্ঞানপার্টির ভয় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রেনের জানালা খোলা রাখা মানেই এই বুঝি টানপার্টি গহনাসহ মালামাল নিয়ে টান দিল। এমন আতংক ট্রেনযাত্রীদের অনেকের মধ্যেই বিরাজ করছে।
লালমনিরহাট, একতা, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা জানান, ট্রেনের ভেতরে দুর্গন্ধে টেকা দায়। কিছু কিছু ফ্যানও নষ্ট হয়ে আছে। দুর্গন্ধ আর ময়লা থাকায় টয়লেট ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
সড়কপথ : সড়কপথে যাত্রীদের উপস্থিতি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি গাবতলী বাস টার্মিনালে। সকাল থেকেই অসংখ্য যাত্রী টার্মিনালে গিয়ে গন্তব্যে রওনা হন। অস্বাভাবিক ভিড় না থাকায় যাত্রীদের টিকিট পেতে তেমন ঝামেলা হয়নি।
বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. সালাউদ্দিন বলেন, হরতালের কারণে এবার ৩০ শতাংশ অগ্রিম টিকিট ফেরত এসেছে। যারা ফেরত দেয়নি তারাই এখন গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে।
সোমবার কাউন্টারকর্মীরা ডেকে ডেকে টিকিট বিক্রি করেছে। কাউন্টারকর্মীরা জানিয়েছেন, বুধবার বিকাল ও বৃহস্পতিবার সারাদিন টার্মিনালে প্রচণ্ড ভিড় হবে। হরতাল উপেক্ষা করে যারা গ্রামের বাড়ি যেতে চান মূলত তারাই এবার ঢাকা ছাড়বেন। অন্যদিকে সায়েদাবাদ ও মহাখালী টার্মিনালে সোমবার পর্যন্ত ঈদযাত্রীদের ভিড় তেমন দেখা যায়নি।
মহাসড়কগুলোতে যানজটের কারণে কোনো পরিবহনের বাসই নির্ধারিত সময়ে ঢাকা পৌঁছা কিংবা ছাড়তে পারছে না বলে জানিয়েছেন মালিকরা। তাদের মতে, প্রতি ট্রিপে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। এতে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে শত দুর্ভোগ উপেক্ষা করে যারা টার্মিনালে এসে টিকিট কিনেছেন তারা বাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় বসে আছেন।
কাউন্টারকর্মীরা জানান, সাভারের নবীনগর থেকে গাবতলী পৌঁছতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগছে। এ কারণে কোনো ট্রিপই সিডিউল অনুযায়ী ছাড়া যাচ্ছে না। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশও যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে অভিযোগ তাদের।
নৌপথ : সোমবার সারাদিন রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে প্রায় ৮০টি লঞ্চ দক্ষিণবঙ্গসহ বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে ৬০টি। ঈদের কারণে যাত্রী বেশি হওয়ায় লঞ্চের সংখ্যাও বেড়েছে। দেখা গেছে, সোমবার সকাল থেকে হাজার হাজার যাত্রী সদরঘাট এসে কাক্সিক্ষত লঞ্চের সন্ধানে ছোটেন। যাদের কেবিনের টিকিট নেই তারা ডেকে বসেই আসন দখল করেন। টিকিটধারীরা আসেন দুপুরের পর। বিকাল থেকে দূরপাল্লার লঞ্চগুলো বিপুলসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঘাট ত্যাগ করে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার অফিস কর্মকর্তা হান্নান খান জানান, সোমবার দিন-রাতে ৮০টি লঞ্চ ঘাট ত্যাগ করে। মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে বরিশাল, হুলারহাট ও বরগুনার ঈদস্পেশাল লঞ্চের যাত্রা। পটুয়াখালী ও গলাচিপা রুটের ঈদস্পেশাল লঞ্চ শুরু হয়েছে শনিবার।
তিনি বলেন, ঈদের পুরো চাপ এখনও শুরু হয়নি। তবে যাত্রী উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি। গার্মেন্ট ছুটি হলে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো যাত্রীরা টার্মিনালে যাবে বলে জানান তিনি।
নৌপথের যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত প্রধান সড়ককে যানজটমুক্ত করতে সরকারি ঘোষণা থাকলেও গতকাল পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি।
সোমবার দুপুরে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক পেরুতে লাগে দেড় ঘণ্টা। সড়কটির মোড়ে মোড়ে যানজট ও বিশৃংখলা আগের মতই আছে। ফুটওভার ব্রিজ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সামান্য পথের দু’ধারে রয়েছে হকারদের উৎপাত। দোকান মালিকরা হকারদের পাশাপাশি ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top