সকল মেনু

মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী: ১৯৪৭-২০১৮

হটনিউজ ডেস্ক: ২০১৮ সালের ৬ মার্চ অবসান ঘটলো ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর ৭১ বছরের লড়াকু জীবনের। একাত্তর সংখ্যাটি তার জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দিয়েছিল, মৃত্যুর সময়েই সঙ্গী হলো এ সংখ্যাটি। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১টায় তিনি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন সমাপ্ত হয় অসমাপ্ত এক ইতিহাসের। ১৯৪৭ সালের ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি খুলনা শহরে নানার বাড়িতে জন্ম নেন ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। মা রওশন হাসিনা এবং বাবা সৈয়দ মাহবুবুল হক। প্রিয়ভাষিণী নিজেই বারবার বলতেন, তার ব্যক্তি ও শিল্পী জীবনে নানাবাড়ির প্রভাবটাই বেশি। যেখানে তিনি শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কাটিয়েছেন। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর নানা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম কংগ্রেস করতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের শাসনকালে স্পিকার হয়েছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে তার নানা সুপ্রিম কোর্টে কাজ করার জন্য ঢাকা চলে আসেন। প্রিয়ভাষিণীও নানার পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন। ভর্তি হন টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে। পরবর্তীতে নানা মিন্টু রোডের বাসায় চলে এলে প্রিয়ভাষিণী ভর্তি হন সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে। তখন শহীদ জাহানারা ইমাম ছিলেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।

কাজ

প্রিয়ভাষিণী ছিলেন শিল্পী। সামান্য নারকেলের খোল, শুকিয়ে যাওয়া শেকড়, পড়ে থাকা তরুর শাখার মতো জিনিস তার হাতে হয়ে যেতো কবুতর, হাঁস কিংবা অন্যকিছুতে। প্রতিটি শিল্পে থাকতো তার মননশীলতার ছাপ। গত প্রায় চার দশক ধরে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী নিজে একান্তে কাজ করে চলেছেন। তার একক প্রদর্শনীর সংখ্যা ১৩টি।

সম্মাননা

১৯৬৩ সালে থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দেশি, বিদেশি ও বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন প্রিয়ভাষিণী। দীর্ঘদিন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভানেত্রী হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে থেকেছেন পথে পথে। ২০০১ সালে জাপানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নেন। ২০০৪ সালে রিডার্স ডাইজেস্ট পত্রিকা তাকে ‘হিরো অব দ্য মান্থ’ মনোনয়ন দেন। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে ২০১০ সালে এসে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পান। তারও পরে ২০১৬ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।

বীরাঙ্গনা না মুক্তিযোদ্ধা

মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের শিকার নারীদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন প্রিয়ভাষিণী। তিনি বলেছেন বারবার, তাদের অবদান কম নয়। বীরাঙ্গনা বললে তাদের যোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি এবং নির্যাতনের শিকার হন। তিনিই প্রথম নারী সমাজের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যুদ্ধকালীন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন সবার সামনে।

পারিবারিক জীবন

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী বিয়ে করেন নিজের পছন্দে। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। যুদ্ধের সেই ভয়াবহতার মাঝে একা একজন নারী কিভাবে লড়াইয়ের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন সেটি কেবল তিনি দেখিয়েছেন তার সন্তানদের নিয়ে নতুন জীবন শুরু করার কথা ভেবে। ১৯৭২ সালে প্রিয়ভাষিণী দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তার ছয় সন্তান কারু তিতাস, কাজী মহম্মদ নাসের, কাজী মহম্মদ শাকের (তূর্য্য), তিন মেয়ে-রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, রত্নেশ্বরী প্রিয়দর্শিনী, ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top