সকল মেনু

আমরা বিজয়ী জাতি এ কথা মনে রাখতে হবে – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

হটনিউজ ডেস্ক : অাওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বিজয়ী জাতি এ কথা মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে অার কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। এটাই হবে অাজকের দিনের শপথ। তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত একটি দেশ।’ আজ রবিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু অান্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে অায়োজিত অালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অাওয়ামী লীগ অায়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অাওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপপ্রচার সম্পাদক অামিনুল ইসলাম। আলোচনায় বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা, গণহত্যা, এ দেশীয় দালাল, রাজাকাদের ভূমিকা, আলবদরদের বুদ্ধিজীবী হত্যা নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজয় দিবসে দেশের তরুণদের উচ্ছ্বাস-উৎসাহের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন করেছি, এখন আমাদের নেতৃত্বেই দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি খুব খুশি হয়েছিল যে এ বছর বিজয় দিবস ব্যাপকভাবে পালন করা হচ্ছে। আপামর জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, শিশু, যুবক থেকে শুরু করে সব ধরনের মানুষ যে উৎসাহ নিয়ে এই দিনটিকে পালন করেছে, তারা যেভাবে স্বাধীনতার চেতনাকে তুলে ধরেছে, তারা যেভাবে নতুনভাবে জাগ্রত হয়েছে, আমি তাদের মধ্যে আশার আলো দেখি। তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা এ দেশের মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তারা অাবার ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। এ দেশের জনগণ অার তাদের ভোট দেবে না। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি করে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায়, তাদের ছেলেদের নিজেদের দলের সদস্য বানায়, কিছু মানুষ সেই দলকে কীভাবে সমর্থন করে, অনুগত হয় সেটাই আমার প্রশ্ন।’

জিয়া পরিবারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এক সময় তাদের নামে জাহাজ বের হয়েছে- কোকো-১, কোকো-১ নামে। এখন দেখি শপিং মল, ফ্ল্যাট আর হাজার হাজার কোটি টাকা বের হয়। তারা আবার স্বপ্ন দেখে ক্ষমতায় যাওয়ার, রাজনীতি করার।’

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি মানুষ পুড়িয়েছে, তারা কোন মুখে মানুষের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে, ভোট চাইবে? আর তাদের কারা ভোট দেবে? কেউই দেবে না। তারা ক্ষমতায়ও আসতে পারবে না। জনগণই দেবে না আসতে।তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন করতে যাদের অবদান নেই, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে তাদের হাতে ক্ষমতা গেলে তারা দেশের জন্য কিছই করবে না। বরং লুটপাট করে তারা দেশটাকে অারও ধ্বংস করবে। তাদের অার কোনোদিন ভোট দেবেন না। স্বাধীনতা অর্জনের প্রসঙ্গে টেনে শেখ হাসিনা বলেন, যারা সৃষ্টি করে, ত্যাগ করে তাদের যে আন্তরিকতা এবং যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে তাদের সে আন্তরিকতা থাকে না। তারা ধ্বংস করে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সাজাপ্রাপ্ত এবং বিচারের মুখোমুখি সব আসামিকে ছেড়ে দেন জিয়াউর রহমান। যে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতি করার বা ভোটাধিকার ছিল না, তাদেরকে সে অধিকারও দিয়েছেন জিয়া। ‘হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসে তারা মন্ত্রী বানায়, রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর নেতাদের। কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ উপদেষ্টা, কেউ মন্ত্রী।…যারা রক্ত দিল, যারা যুদ্ধ করল তারাই যেন অপরাধী হয়ে গেল আর যারা হানাদার বাহিনীর দালালি করল, যারা গণহত্যা চালাল, যারা মা বোনদের পাকিস্তানের হাতে তুলে দিল তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হলো।’

‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরও এক ধাপ ওপরে উঠল। এদেরকে নিয়েই তাদের দহরম মহরম। এদের হাতে তুলে দিল লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা, তাদেরকে বানাল মন্ত্রী।’

যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা কী করে এটা মেনে নিতে পারে-জনগণের কাছে সে প্রশ্নও রাখেন শেখ হাসিনা।

‘আমার প্রশ্ন এখানে, স্বাধীনতার কথাও বলবেন, আবার যুদ্ধাপরাধীদের যারা মদদদানকারী, যুদ্ধাপরাধীদের যারা প্রশ্রয় দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে এবং যাদের ফাঁসি হয়ে গেছে তাদের ছেলেপেলেদের নিয়ে দল গঠন করে, তাদের দলকে সমর্থন করেন কীভাবে? সেই দলের প্রতি অনুগত থাকেন কীভাবে?’।

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে খালেদা জিয়ার নির্দেশই আন্দোলনের নামে নাশকতা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, গাছ, কেটে ফেলা, রাস্তা কেটে ফেলা, কী না করেছে দেশকে ধ্বংস করার জন্য। আমরা গড়ে তুলি, ওরা ধ্বংস করে।’

এই দেশের আর্থ সামাজিক উন্নতি চাইলে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন চাইলে যুদ্ধাপরাধীদের লালন পালনকারী, তাদেরকে মন্ত্রী বানানোদেরকে ভোট না দিতে জনগণের প্রতি আহ্বানও জানান প্রথানমন্ত্রী।

‘এরা তো লুটেরা। এরা একদিকে যেমন যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসীদের লালন পালন করেছে, দেশের শান্তি বিনষ্ট করেছে, তেমনি দেশকে উন্নয়নের পথ থেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশ আজ উন্নতির দিকে যাচ্ছে দাবি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘যারা সৃষ্টি করে, ত্যাগ স্বীকার করে তাদের যে দরদ থাকে, তাদের যে আন্তরিকতা থাকে, সেটা কিন্তু উড়ে এসে যারা ক্ষমতায় জুড়ে বসে, আর ক্ষমতা অবৈধভাবে দখল করে তাদের তা থাকে না। তারা ভোগ বিলাসে জীবন কাটায়, তারা দেশের অর্থ বিদেশ পাচার করে।’

আগামী দিনের প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। অথচ এই ভাষণ একটা সময় নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জনগণ এখন মাথা উঁচু করে চলছে, চলবে। সেটাই এই বিজয় দিবসের প্রতিজ্ঞা। আমাদের স্বাধীনতার সুফলকে দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না, এটাই আজকের প্রতিজ্ঞা। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

অালোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- অাওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী অামির হোসেন অামু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল অাহমেদ, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে অালম মুরাদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top