সকল মেনু

মহান বিজয় দিবস উদযাপন অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার প্রত্যয়ে

হটনিউজ ডেস্ক : দেশব্যাপী আনন্দ উৎসবের নানা কর্মসূচিতে উদযাপিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস। দিনভর নানা কর্মসূচিতে প্রতিফলিত হচ্ছে মৌলবাদকে মোকাবেলার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলার শপথ। দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রত্যয়ও উচ্চারিত হচ্ছে কোটি কণ্ঠে।

বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তিতে শনিবার গোটা জাতি গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও বিনম্রচিত্তে স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় শহীদ বীর সন্তানদের স্মরণ করছে। নিবেদন করছে প্রাণের শ্রদ্ধার্ঘ্য।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আজ মহান বিজয় দিবসের ৪৬তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। কোটি বাঙালী হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সামিল হচ্ছে বর্ণিল ও আড়ম্বরপূর্ণ এসব অনুষ্ঠানে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রজনী কান্ত ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের প্রাচুর্যপূর্ণ ভান্ডার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের দেশগানের সঞ্জিবনী শক্তি থেকে বাঙালী আবারো এসব অনুষ্ঠান থেকে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করল।

আজ দিনের শুরুতেই সকাল সাড়ে ৮টায় দিবসটি উদযাপনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ যৌথভাবে রাজধানীর অদূরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

সেখানে গান, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে দেশের খ্যাতিমান শিল্পীবৃন্দসহ শিল্পকলা একাডেমি ও ক্ষুদে গানরাজের শিল্পীরা। তারা পরিবেশন করে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা..’, ‘সবুজের বুকে লাল..’, ‘হৃদয়ে আমার বাংলাদেশ..’, ‘ও আমার বাংলা মা তোর..’, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই..’ ‘সুন্দর সুবর্ণ তারণ্য লাবণ্য..’, ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না..’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে..’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে..’, ‘ও আমার দেশের মাটি..’, ‘একবার যেতে দেনা আমার ছোট্ট সোনার গাঁ..’ প্রভৃতি গান।

সকালের এ অনুষ্ঠানে ‘হায়রে আমার মন মাতানো দেশ..’, ‘দেশে দস্যু এলো মেলা..’ ‘মাগো তোমার বুকে পদ্মা মেঘনা..’, ‘শোন একটি মুজিবুরের থেকে..’ ও ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি নাম..’, গানের সাথে শিল্পীগণ পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের এ অনুষ্ঠানে দলীয় পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী তামান্না তিথি ও মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল।

বিজয় দিবস উপলক্ষে এদিন সকাল থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ঢল নামে জনতার। সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


এ সময় শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন তারা। বিউগলে করুণ সুর বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়।

রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর পরই জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অগণিত মানুষের ঢল নামে।

আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মহান বিজয়-দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি দীপ্ত টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন ও দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান।

পুরো অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় শিল্পী- শ্রোতার মিশেলে দেশের গান গাওয়া ও দেশের কথা বলার মধ্যদিয়ে। এতে নৃত্যসহ ৯টি সম্মেলক গান, একটি একক গান ও একক আবৃত্তি এবং একটি দ্বৈত গান পরিশেন করে ছায়ানটের শিল্পীবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র কবিতা ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, লাইসা আহমদ লিসা একক গান পরিবেশন করেন এবং ফারহানা আখতার শ্যার্লি ও বিজনচন্দ্র মিস্ত্রী গেয়ে শোনান দ্বৈত গান। এর সাথে দেশ-মানুষ-সমাজ নিয়ে আব্দুল লতিফ, গিরিন চক্রবর্তী, জয়দেব সেন, মোহিনী চৌধুরী ও শাহ আব্দুল করিমের সুরবাণী পরিবেশিত হয়।

অনুষ্ঠানে ‘ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি..’, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর..’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে..’, ‘সংকোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান..’, ‘লাখো লাখো শহীদের রক্ত মাখা..’, ‘নাও ছাড়িয়া দে..’, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে..’, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান..’ প্রভৃতি সম্মেলক গানের সঙ্গে ছায়ানটের শিল্পীবৃন্দ নৃত্য পরিবেশন করে।

অনুষ্ঠানে ছায়ানটের তিন হাজার গাইয়ের সঙ্গে এবার আরো কণ্ঠ মেলান বাংলাদেশ স্কাউটস ঢাকা মেট্রোপলিটন, আটি ভাওয়াল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, হলিক্রস স্কুল ও কলেজ, উদ্দীপন ও নালন্দা বিদ্যালয়, একাডেমিয়া, এক্সেল একাডেমি, ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল, সাউথ ব্রীজ, সানবীমস্ এবং স্কলাসটিকা স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

বাংলা একাডেমিও দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বিকেলে একাডেমির নজরুল মঞ্চে প্রবন্ধ পাঠ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ ‘মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক পটভূমি, বিজয় ও বিজয়ের মহানায়ক’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ নেন রামেন্দু মজুমদার, খুশী কবির এবং নাদীম কাদির। স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। পরে সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাশাপাশি সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনেও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি।

বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক কামাল লোহানী। আলোচক ছিলেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন ড. আবু মোঃ দেলোয়ার হোসেন। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

এখানেও শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তেজগাঁওস্থ চ্যানেল আই ভবন চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় ‘দেশবন্ধু গ্রুপ-চ্যানেল আই বিজয় মেলা ’১৭। মেলা মঞ্চ থেকে এ অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয় একাত্তরের প্রেরণাদায়ী গণসঙ্গীত, দেশাত্মকবোধক নৃত্য ও আবৃত্তি। ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ পর্ব। দেখানো হয় ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের ৫ম সংস্করণ।
তবে এর আগে সকাল ১১টায় মেলার উদ্বোধনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, মেলার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমানসহ

যুদ্ধাহত ও খেতাবধারী (বীরউত্তম, বীর প্রতীক ও বীরবিক্রম) মুক্তিযোদ্ধা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, গণমাধ্যম সম্পাদক ও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

মেলায় সেক্টর কমান্ডার ও উপাধিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ছিলো মেজর কামরুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় একটি বিশেষ পর্ব।

মেলা প্রাঙ্গণ ছিলো লাল সবুজে বর্ণিল মঞ্চ, তোরণ ও ফেস্টুনে সুসজ্জ্বিত । ছিলো ৭ বীরশ্রেষ্ঠ’র নামে ৭টি স্মারক স্তম্ভ এবং ১১ সেক্টরের স্মরণে ১১টি নির্দিষ্ট স্থান।
মেলার স্টলগুলোতে ছিলো মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ, মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থ, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র, ডায়েরি প্রদর্শনী ছাড়াও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সামগ্রীতে সজ্জিত বেশ কিছু স্টল।

দেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চিত্রাংকনের পাশাপাশি ছবি এঁকেছে ছোট্ট সোনামণিরা। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ, আবৃত্তি ছাড়াও মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধারা, খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী ফকীর আলমগীর, তপন মাহমুদ, তপন চৌধুরী, সাদী মহম্মদ, নীলু বিল্লাহসহ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ, ক্ষুদে গানরাজ ও বাংলার গানের শিল্পীরা। মেলা সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top