সকল মেনু

সিইসি বিএনপির গুণগানের লিখিত ব্যাখ্যা দিলেন আ.লীগকে

হটনিউজ ডেস্ক : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করার ব্যাখ্যার লিখিত কপি আওয়ামী লীগকে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপকালে সিইসি এই ব্যাখ্যার কপি হস্তান্তর করেন বলে একাধিক সূত্র রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, সংলাপকালে সূচনা বক্তব্যের আগে সিইসি জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাতা আখ্যায়িত করার ব্যাখ্যাসম্বলিত একটি পৃষ্ঠা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের প্রধান ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে হস্তান্তর করেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইসির ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আজ সংলাপে অংশ নেয়।

প্রসঙ্গত, গত রোববার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসে সিইসি নূরুল হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ব্যক্তি হিসেবে এবং দলনেতা হিসেবে জিয়াউর রহমান চার বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

ওই বক্তব্যের কারণে সিইসিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রকাশ্যে সিইসি নুরুল হুদার সমালোচনা করা শুরু করেন। এ ব্যাপারে গত সোমবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জিয়াউর রহমানের প্রশংসার বিষয়টি বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার কৌশল হতে পারে। বিএনপি এখন খুশি। এই ভাবটা যেন নির্বাচন পর্যন্ত বজায় থাকে। তিনি এটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেননি। বলেছেন ভেতরে। আমরাও মিটিংয়ে যাব। তখন জানতে চাইব, তিনি আসলে কী বলেছেন।

এ ব্যাপারে ইসি সূত্রে জানা গেছে, আজ সংলাপে সিইসির কাছে বিএনপিকে নিয়ে গুণগানের বিষয়ে ব্যাখা চাইতে পারে আওয়ামী লীগ, এটা ভেবে সিইসি আগেই লিখিত ব্যাখ্যা প্রস্তুত করে রাখেন। তিনি আজ নির্ধারিত বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের প্রধান ওবায়দুল কাদেরের কাছে ব্যাখ্যার কপিটি হস্তান্তর করেন। এতে বিএনপির সাথে সেদিনকার সংলাপের সময় যে কথার পরিপ্রেক্ষিতে জিয়াউর রহমানের প্রশংসার প্রসঙ্গটি চলে এসেছিল তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে বলেন, ‘ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছি। এটা আমরা এখন বলতে চাই না। যদি কোনো ব্যাখ্যা দিতে হয় নির্বাচন কমিশন দেবে। তবে তাদের সঙ্গে যে আলোচনা, নির্বাচন কমিশনার থেকে সচিব, প্রত্যেকের যে বক্তব্য, তাতে পজিটিভ ডায়ালগ আমরা করেছি, কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা হয়েছে।

তার আগে বেলা ১১টা থেকে আওয়ামী লীগের ২১ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপে সূচনা বক্তব্যে সিইসি নুরুল হুদা দেশের সব অর্জন ‘আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে’ বলে দলটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।

ইসির সঙ্গে সংলাপকালে দেওয়া লিখিত প্রস্তাবে ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন’বিষয়ে বলতে গিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ। এতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের হোতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেন, শুরু হয় স্বৈরশাসন। ‘স্বৈরশাসক’ জিয়া তার অবৈধ ক্ষমতার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টায় ১৯৭৭ সালে ‘প্রহসনের’ গণভোটের আয়োজন করেন। তাতে সাধারণ মানুষ ‘ভোটাধিকার হারায়’এবং সব গণতান্ত্রিক পরিবেশ ‘নষ্ট হয়ে যায়’। এর ধারাবাহিকতা চলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আরেক ‘স্বৈরশাসক’হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন পর্যন্ত।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সিইসির সূচনা বক্তব্যের পর সংলাপে বিএনপির গুণগানের প্রসঙ্গটি নিয়ে আর কোনো আওয়ামী লীগ নেতা বলেননি। শুধু আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য সিইসিকে ইতিহাসের সেটেলড বিষয় নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি না করার আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে সংলাপে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিইসি খুব কৌশলীভাবে আজকের বিষয়টি নিয়ে সংলাপে কথা বলার সুযোগ রাখেনি। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে তার ব্যাখ্যা লিখিতভাবে আগেই প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। তিনি সূচনা বক্তব্য শুরুর আগেই ব্যাখার লিখিত কপিটি আমাদের টিম প্রধান ওবায়দুল কাদেরের কাছে পৌঁছে দেন। এ কারণে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা চলাকালে এ বিষয়ে আর কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। সিইসির ব্যাখ্যার লিখিত কপিটি আমাদের নেত্রীকে (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দেখানো হবে। তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। এ লক্ষ্যে আজ সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। বৈঠকে ইসির সাথে সংলাপের ফলোআপ নেত্রীকে অবহিত করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top