সকল মেনু

‘জঙ্গি আস্তানায়’ আত্মসমর্পণের প্রতিশ্রুতির পর বিস্ফোরণ

হটনিউজ ডেস্ক: জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঢাকার মিরপুরে ঘিরে রাখা বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে কয়েক দফা বিস্ফোরণে আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঢাকার মিরপুরে ঘিরে রাখা বাড়িতে মঙ্গলবার রাতে কয়েক দফা বিস্ফোরণে আলোকিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। ঢাকার মিরপুরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে প্রায় ২২ ঘণ্টা ঘিরে রাখা বাড়িতে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটেছে, তবে সেখানে অবস্থানরতদের কী ঘটেছে তা জানা যায়নি। সন্দেহভাজন জঙ্গি আবদুল্লাহ ও তার সহযোগীরা আত্মসমর্পণ করবেন বলে র‌্যাব সদস্যদের অপেক্ষার মধ্যে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় ‘জঙ্গিদের’ ফ্ল্যাটে আগুন ধরে যায়। আগুনের কুণ্ডলিতে আশপাশের এলাকা আলোকিত হয়ে ওঠে। এরপর সেখানে কয়েক দফা গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পঞ্চম তলার ওই ফ্ল্যাটের জানালার গ্রিল এবং বারান্দার দেওয়াল ধসে গেছে বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিস্ফোরণের পর র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, “ভিতরে যারা ছিল তারাই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তিনটি বড় বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আরও কিছু বিস্ফোরণ ঘটেছে। “বিস্ফোরণে পাঁচতলায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কেমিক্যাল ফায়ারের মতো হবে।” আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে বোমা নিস্ক্রিয়কারী দল ভবনে ঢোকার পর সেখানকার অবস্থা জানা যাবে।

র‌্যাব মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, “ভবনের ভিতরে যে সকল বাসিন্দা ছিল তাদের দুপুরের মধ্যে বের করে এনেছি। তারপর প্রয়োরিটি ছিল তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করানোর, বিভিন্নভাবে চেষ্টাও করেছিলাম। একটা পর্যায় আমাদের বলেছিল যে, রাত ৮টা সাড়ে ৮টার মধ্যে হবে। পরবর্তীতে আবার যখন যোগাযোগ করি আরও ৩০ মিনিট চেয়েছিল।”

বিস্ফোরণের ঘটনায় র‌্যাবের চারজন সদস্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছেন বলে জানান তিনি। তারা এখন শঙ্কামুক্ত বলেও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার রাতে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবির জঙ্গি’ দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটকের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে মিরপুরে এই অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

মাজার রোডের পাশে বর্ধনবাড়ি ভাঙ্গা ওয়ালের গলির ২/৩-বি হোল্ডিংয়ে ছয় তলা ওই ভবনের পঞ্চম তলায় আবদুল্লাহ, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট সাতজন অবস্থান নিয়েছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ দুপুরে জানান।

র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহ একজন ‘দুর্ধর্ষ জঙ্গি’, তিনি ২০০৫ সাল থেকে জঙ্গিবাদে জড়িত। মিরপুর মাজার রোডের দীর্ঘদিনের এই বাসিন্দা ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামতের কাজ করেন।

তার কক্ষে ৫০টির মতো আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ থাকার কথা আবদুল্লাহ র‌্যাবকে জানিয়েছিলেন বলে বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন।

“গত রাতে অভিযান শুরুর পর ওইদিক থেকে গুলি করা হয়েছিল। তার কাছে একটি পিস্তলও থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি,” বলেন তিনি।

মধ্যরাতে বাড়িটি ঘেরাওয়ের পর থেকে সারা দিন ওই ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ‘জঙ্গিদের’ সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানোর চেষ্টা করে র‌্যাব। আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় মুফতি মাহমুদ ঘটনাস্থলের কাছে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আবদুল্লাহ আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছেন। “সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে সে আত্মসমর্পণ করবে বলে আমাদের জানিয়েছে।” ওই সময় পেরোনোর পরেও কেউ আত্মসমর্পণ না করায় র‌্যাব কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আবদুল্লাহ এশার নামাজ পড়ে আত্মসমর্পণ করবেন বলে তাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। তার আগে বিকালে মুফতি মাহমুদ খান বলেছিলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন তারা। যতবারই ফোনে তার সঙ্গে র‌্যাব যোগাযোগ করেছে, ততবারই সে ভাবার জন্য সময় নিয়েছে। এদিকে চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে ওই ভবনের ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টির বাসিন্দাদের সরিয়ে নেন র‌্যাব সদস্যরা। ১৫ জন শিশু, ২৪ জন নারী ও ২৬ জন পুরুষকে সরিয়ে এনে রাখা হয় স্থানীয় একটি স্কুলে।

ওই ৬৫ জনের মধ্যে আবদুল্লাহর এক বোনও আছেন জানিয়ে মুফতি মাহমুদ খান সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় সে বলেছে, যেন অন্যদের সঙ্গে তার বোনকেও সরিয়ে নেওয়া হয়।” দিনভর পুরো এলাকা র‌্যাব ঘিরে রাখায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সময় দিন কাটে একপ্রকার বন্দি অবস্থায় উৎকণ্ঠার মধ্যে। ওই বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেও পরিবার নিয়ে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন। মুফতি মাহমুদ খান জানান, র‌্যাব ওই বাড়ি ঘিরে ফেলার পর রাত ১টার দিকে সেখান থেকে চারটি বোমা ছোড়া হয়। ওই বোমার মধ্যে পেট্রোল বোমাও ছিল। ফলে বাইরে পড়ার পর সেখানে আগুন ধরে যায়। ওই বাড়ি থেকে র‌্যাবের দিকে গুলিও ছোড়া হয়। এর আগে গত ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের সকালে ঢাকার পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যদের অভিযানের মধ্যে নব্য জেএমবির সন্দেহভাজন এক জঙ্গি সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়।

সাইফুল ইসলাম নামের ওই জঙ্গি জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে হামলার পরিকল্পনায় ছিলেন বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সে সময় জানিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top