সকল মেনু

একযোগে চার দেশে বন্যা, খাদ্য ও আশ্রয়ের সংকটে লাখ লাখ মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের পাশাপাশি এশিয়ার আরও তিন দেশ নেপাল, ভারত ও চীনে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সোমবার (১৪ আগস্ট) সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘর ছেড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা পুরোপুরি নিরূপণ করা গেলে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় নিরাপদ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া চীনে চলমান বন্যায় নতুন করে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 


এপি জানায়, নেপালে তিন দিন ধরে ভারি বর্ষণের পর সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে এখন পর্যন্ত অন্তত ৮০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ভারতের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। আর বাংলাদেশে বন্যায় প্রাণহানির সংখ্যা ২২। চীনেও গত মে মাস থেকে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এখনও বিরাজ করছে। রবিবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল নতুন করে প্লাবিত এলাকায় অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ভারতের আসামে বন্যার কারণে প্রায় ২ লাখ মানুষ জরুরি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। নেপাল সীমান্তের কাছে বিহারের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে ১৫ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানকার সাতটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ভারতের রেলপথ বিভাগের মুখপাত্র অনীল সাক্সেনা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে ট্রেন চলাচল বুধবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যার কারণে রেললাইনের বেশ কিছু অংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে জানা যায়, হিমাচল প্রদেশে ভূমিধসে দুইটি বাস খাদে পড়ে গিয়ে অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এরপর থেকেই ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং অসংখ্য গাড়ি আটকা পড়ে আছে। ব্রহ্মপুত্রসহ ১০টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক, পবিত্র অভয়াশ্রম ও লখুয়া অভয়াশ্রমের বেশিরভাগ বন এলাকা পানির নিচে রয়েছে।

নেপালের পুলিশ জানিয়েছে, বন্যার কারণে দেশটির ৪৮ হাজারেরও বেশি সংখ্যক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন জরুরি উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মীরা। নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ৩৬ ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা মৃত। এরইমধ্যে এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। নেপাল রেডক্রস সতর্ক করেছে, পানি ও খাদ্যের ঘাটতির কারণে উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। বন্যায় রবিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় রিসোর্টে প্রায় ৫০০ মানুষ আটকা পড়েন। তাদের উদ্ধারে বেশ কয়েকটি হাতিকে নামানো হয়।

নেপালে হাতি দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছেসৌরাহা এলাকার একটি হোটেলের মালিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানান, ‘হাতি ব্যবহার করে আটকে পড়া পর্যটকদের কাছের যেসব সড়ক ও বিমানবন্দর চালু আছে সেখানে পাঠানো হচ্ছে।’এই শহরটি রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ১৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

দক্ষিণ এশিয়ার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দারিদ্র-বিমোচনমূলক দাতব্য সংস্থা হেইফার ইন্টারন্যাশনালের মুখপাত্র সুমনিমা শ্রেষ্ঠ। তিনি বলেন, ‘এমন এক সময়ে ভারী বর্ষণ শুরু হলো যখন কৃষকরা মাত্র তাদের ধান চাষ শুরু করেছিলেন। ওই ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ফসলের বিশাল অংশ ভেসে গেছে।’


এদিকে চীনেও গত মে মাস থেকে বিভিন্ন প্রদেশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। লংনান সিটির ওয়েনজিয়ান কাউন্টিতে নতুন করে সৃষ্ট বন্যায় রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও অন্তত দুইজন। ওই এলাকার প্রায় ১০০০ বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হুনান প্রদেশে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ৪৮ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top