সকল মেনু

‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা অস্বচ্ছ’

বিচারক অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা স্বচ্ছ নয় বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বেশ কয়েকটি ঘটনা বর্ণনা করে জানান, অতীতে এই কাউন্সিল থাকলেও তিন বিচারককে অপসারণ করা হয়েছে এই প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে। আবার তিন বিচারকের বিরুদ্ধে এই কাউন্সিল গঠন করা হলেও রায় দেয়া হয়নি।

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১০ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বেশ কিছু উদাহরণ দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কীভাবে বিচার করবে কিভাবে না করবে সেটা কিন্তু আপনারা কেউ দেখতে পারবেন না। তাদের রায় জানতে পারবেন।’

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। পরে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। এরপর জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনামলে প্রবর্তন হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা।

বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে এনে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করে বর্তমান সরকার। কিন্তু এই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে সেনা শাসন আমলে করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে এনেছে আপিল বিভাগ। যদিও জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছিল আপিল বিভাগই।

তবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল থাকা সত্ত্বেও বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, এস এম হোসেন, কে এম সোবহানকে সুপ্রিম অপসারণ করা হয় এই প্রক্রিয়ায় না গিয়েই। বিচারপতি সাহেদুর রহমানের বিষয়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল করা হলেও উনার বিষয়ে কোনো রায় আসেনি। উনি পদত্যাগ করেছেন।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিচারপতি ফয়সাল আল ফয়েজির বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির প্রমাণ মিললেও সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল তার কাজ শেষ করেনি। আইনমন্ত্রী জানান, বর্তমানেও একজন বিচারক আছেন যিনি হেফাজতের লিফলেট বিতরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সেটার পরে কিন্তু সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বসেছিল। এতকিছু তথ্যাদির পরেও আমরা কিন্তু বলতে পারি না আমি অন্তত পক্ষে বলতে পারি না। কিভাবে কী প্রক্রিয়ায় উনি অ্যাকুয়েটেড হয়েছিলেন।’

সেই তুলনায় সংসদে বিচারপতি অপসারণের প্রক্রিয়া অনেক স্বচ্ছ ছিল বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শুধু দুটি কারণ তাকে অপসারণ করা যাবে। একটা হচ্ছে অসমর্থ বা ইনক্যাপাসিটি আরেকটি হচ্ছে প্রমাণিত অসদাচরণ।’

‘সেই ক্ষেত্রে আমরা একটা ড্রাফট আইন করেছিলাম কারণ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর ৯৬ অনুচ্ছেদ বলে দিয়েছিল এটার যে প্রসিডিউর এই প্রসিডিউরটা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এবং সেই আইনটাই আমরা করে দিয়েছিলাম। সেই ক্ষেত্রে এইটা অত্যন্ত স্পস্ট ছিল সেইখানের তদন্তভার থাকবে বিচারপতিদের হাতে এবং সেইখানেও কিন্তু ইনভেস্টিগেটিং কমিটি যেটা ছিল সেটা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মতোই ছিল।’

‘তাদের কর্তব্য যেটা ছিল তারা এই যে অ্যালিগেশনটা দেয়া হয়েছে অসদাচরণের, সেটা তারা তদন্ত করে পার্লামেন্টের কাছে রিপোর্ট পাঠাবে। তার মানে হচ্ছে সংসদের স্পিকারের কাছে তারা রিপোর্ট পাঠাবে এবং স্পিকার তখন সন্তুষ্ট হলে সেটা সংসদে প্লেস করবে। এই যে প্রসেসটা সেটা আমার ধারণা, আমাদের ধারণা এবং গণতান্ত্রিক দেশের ধারণা সেটা হচ্ছে অত্যন্ত স্বচ্ছ।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top