সকল মেনু

আমদানির পরও মোটা চালের দাম বাড়ছে

প্রায় ছয় মাস ধরে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে দেশে উৎপাদিত মোটা চাল। ফলে শুল্ক কমিয়ে আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। প্রত্যাশা ছিল হয়তো এতে সংকট কাটবে। কিন্তু সেই মোটা চালের দাম আরো এক ধাপ বেড়েছে।

রাজধানীর কৃষি মার্কেট, কারওয়ান বাজার ও মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমদানি করা মোটা চালের প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কেজিপ্রতি ১-২ টাকা। পাইকারিতে কয়েক দিন আগে মোটা চাল ৪০-৪০.৫০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪১-৪১.৫০ টাকায়।

ব্যবসায়ীরা চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে পরিবহন সমস্যাকে দায়ী করেছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খাদ্যভাণ্ডার রাইস এজেন্সির মো. সামছুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, কয়েক দিন ধরে আমদানি করা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ১৫০ টাকায়। প্রতি বস্তায় ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
আগে বিক্রি হতো দুই হাজার ৫০ টাকায়। তবে এই দাম আবার যেকোনো সময় কমে যাবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, ভারত থেকে চাল আনতে অনেক সময় ট্রাকের লম্বা লাইনে পড়তে হয়। যত বেশি সময় লাগে তত বেশি ভাড়া গুনতে হয়। এই সমস্যার কারণেই এখন দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি।

মুক্তা রাইস এজেন্সি, রানা এন্টারপ্রাইজসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রেতারা জানায়, ভারত থেকে যে চাল আসে তার বেশির ভাগই মোটা, যা পাইজাম বা স্বর্ণা নামে পরিচিত। সরু চাল আসে খুব কম।

মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা একই দামে বিক্রি করলেও কারওয়ান বাজারে দাম একটু বেশি। এখানে প্রতি বস্তা পাইজাম বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২৫০ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারিতেই দাম পড়ছে ৪৫ টাকা।

আমদানির প্রভাবে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম খুব একটা কমেনি। এখনো বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকা কেজি দরে। যদিও সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, মোটা চাল ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাতিরপুল বাজারের মুদি দোকানি মনির মিয়া প্রতি কেজি স্বর্ণা ৪৬ টাকায় বিক্রি করছেন। আর পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। তিনি জানান, আমদানির ফলে দাম খুব একটা কমেনি। কারণ ভারতেও চালের দাম বেশি। এক মাসে চালের দাম কতটুকু কমেছে জানতে চাইলে হাতিরপুলের ক্রেতা কামরুল হাসান বলেন, ‘আমি তো ১-২ টাকার বেশি পার্থক্য দেখি না। তাও আবার সব চালে না। আমি স্বল্প আয়ের মানুষ তাই মোটা চালই কিনি। আগে স্বর্ণা ৪৮ টাকায় কিনতাম, এখন কোনো দোকানে ৪৬, কোনো দোকানে ৪৭ টাকা রাখছে। ’

টিসিবির হিসাবে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে স্বর্ণার দাম কমেছে ৭.৪৫ শতাংশ। যেখানে গত বছরের তুলনায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ৪৮ শতাংশ। একইভাবে এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম কমেছে ২.৬১ শতাংশ, সাধারণ মানের নাজির-মিনিকেটে দাম কমেছে দশমিক ৯০ শতাংশ, ভালো মানের নাজির-মিনিকেটে ৩.৩৯ শতাংশ, সাধারণ মানের পাইজামে ৩ শতাংশ, ভালো মানের পাইজাম বা লতায় ৩.৯২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় ফসল ডুবে যাওয়াকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় চালের দাম বাড়াতে থাকে। মজুদ অস্বাভাবিকহারে কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় সরকারকেও। সে সময় মিলাররা চুক্তি করলেও সরকারের গুদামে চাল সরবরাহ করেনি। এরপর সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ২৮ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। তারপর থেকে বেসরকারি পর্যায়ে প্রচুর চাল আসতে থাকে দেশের বাজারে। এতে মজুদ বাড়ছে, কিন্তু দাম খুব একটা কমেনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, কর্তৃপক্ষ এর দায়ভার নেবে না।

top